বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজোয় সাক্ষী থাকা আবার প্রাণভরে গভীর জঙ্গলের অনুভূতি অর্থাৎ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান? তাহলে আপনাকে যেতে হবে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার গড়জঙ্গলের শ্যামারূপার মন্দিরে। জঙ্গলের মাঝে সরু লাল মাটির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গা ছমছমে পরিবেশ। কোনও কোনও জায়গায় জঙ্গলের ঘনত্ব এতটাই বেশি যে সূর্যের আলোও প্রবেশে বাধা পায়। এমন ঘন জঙ্গলের মাঝেই দুর্গাপুজোর চারটে দিন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। হাজার হাজার ভক্তের সমাবেশ ঘটে এই শ্যামারূপার মন্দিরে।
ইতিহাস প্রসিদ্ধ দুর্গাপুরের কাঁকসার গড়জঙ্গলের শ্যামারূপার মন্দির নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে প্রায় হাজার বছর আগে সেন আমলে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির একটা সময় দেখভাল করতেন জমিদার ইছাই ঘোষ। এখনও নাকি এখানে সন্ধি পুজোয় তোপধ্বনি শোনা যায়। কোথা থেকে আসে সেই শব্দ? তা অবশ্য জানা যায় না। এই মন্দিরে সারা বছর নিত্য পুজো হয়। আর দুর্গাপুজোর চারদিন মহা ধুমধামে বেশ বড় ধরনের আয়োজন হয়। চারদিন ধরে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। দেবীর আদি মূর্তি গর্ভগৃহে থাকে।
দুর্গাপুর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে শ্যামারূপার মন্দির। এই মন্দির থেকে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরেই প্রত্যক্ষ করতে পারবেন ইছাই ঘোষের দেউল। দেউলে শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন ইছাই ঘোষ। পাশে বয়ে গিয়েছে অজয় নদ। এখানে রয়েছে ডিয়ারপার্ক।
মন্দিরের সেবায়েত দিলীপ রায় বলেন, 'রাজা লক্ষণ সেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লক্ষ্ণণ সেনের আমলে এখানে কাপালিক ছিল। কাপালিক নরবলি দিয়ে মায়ের সাধনা করছিল। কবি জয়দেব এসে নরবলি দান প্রথা বন্ধের জন্য কাপালিকের সঙ্গে লড়াই করেন। কাপালিক কোনও মূর্তি দেখাতে পারেনি। জয়দেব ছিলেন কৃষ্ণ কবি। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী, মায়ের মুখ কৃষ্ণ করে দিলেন। নরবলি প্রথা বন্ধ করে দিলেন। শ্যামারূপা নাম কবি জয়দেবেরই দেওয়া।"
তিনি আরও বলেন, "একটা সময় রাজা ইছাই ঘোষ এই মন্দির দেখভাল করতেন। পুজোর চার দিনই ভোগ প্রসাদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। নবমীর দিন খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয় মন্দিরে আসা সমস্ত ভক্তদের। বাসন্তী পুজোর চার দিনও ধুমধাম করে পুজো হয়। যদিও সারা বছরই এখানে ভোগ রান্না করা হয়। শ্যামরূপাকে প্রতিদিন ভোগে পায়েস নিবেদন করা হয়।" পুজোর সময় বাদ দিয়ে অন্য সময় এই মন্দিরে ভোগ প্রসাদ পেতে গেলে আগে থেকে পুরোহিতকে জানিয়ে রাখতে হবে। তবে পুজোর সময় আগে থেকে জানানোর দরকার নেই।
কীভাবে পৌঁছোবেন শ্যামারূপার মন্দিরে?
প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে দুর্গাপুর থেকে খুব সহজেই কাঁকসার গড়জঙ্গলে পৌঁছানো যায়। ইলামবাজারের জঙ্গলের রাস্তার দিক থেকেই যাওয়া যায় গড়জঙ্গল। তা নাহলে দুর্গাপুরের মুচিপাড়া হয়ে মলান দীঘি পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে টোটো অথবা অটো রিজার্ভ করে পৌঁছানো যায় শ্যামারূপার মন্দিরে। গভীর আকাবাঁকা জঙ্গল আপনাকে ভুলভুলাইয়ার কথা মনে পড়িয়ে দেবে। পুজোর সময় ভক্তদের ভিড় থাকে রাস্তায়। তা নাহলে অন্য সময় জঙ্গলের পথ হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। শাল-সেগুনের জঙ্গলে মন-প্রাণ ভরে যাবে। তবে এখানে রাতে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। সন্ধের মধ্যে ফিরে আসাই ভাল। দূর থেকে গেলে সেক্ষেত্রে দুর্গাপুরে হোটেল রাত্রি যাপন করা যেতে পারে।