রেলগেটহীন বাগরাকোট রেলপথে দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান চেয়ে রেল অবরোধ করল সিপিআইএমের শিলিগুড়ি এরিয়ার ২ নম্বর কমিটি। এই রেল অবরোধের জেরে শনিবার সকালে আটকে পড়ে ট্রয়টেন–সহ আলিপুরদুয়ার–এনজেপি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। আটকে পড়তে হয় টয়ট্রেনে থাকা বিদেশি পর্যটকদেরও। ভোগান্তি বাড়ে অন্য ট্রেন যাত্রীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে যান রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ তোলার আর্জি জানান রেলের আধিকারিকরাও।
আরও পড়ুন- ‘প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলকে মূলস্রোতে ফেরাতে পারবেন না’
উল্লেখ্য, শিলিগুড়ির বাগরাকোটের রেলপথ নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা। রেলগেটহীন বাগরাকোটে দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেন। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় দু’পাড়ের বাসিন্দাদের। ছাত্রছাত্রীদেরও স্কুল–কলেজে যেতে হয় ঘুরপথে। এমনকী সময় বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের নীচ দিয়েই চলে যাওয়া–আসা। সিপিআইএমের অভিযোগ, এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে একাধিকবার রেলের কাছে দরবার করেও কোনও সুরাহা না হওয়ায় অবশেষে রেল অবরোধে সামিল হন তাঁরা। এদিন সিপিআইএমের শিলিগুড়ি এরিয়া ২ নম্বর কমিটি বাগরাকোটে রেলপথ এবং তীব্র যানজটের স্থায়ী সমাধান চেয়ে আন্ডারপাশ–উড়ালপুলের দাবিতে শনিবার সকালে আন্দোলনে নামে। আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনিও আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকার মানুষদের সুবিধার্থে উড়ালপুলের দাবি জানিয়েছেন।
এদিন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের পাশে এসে দাঁড়ায় এলাকার বাসিন্দারাও। আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়ে বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘শিলিগুড়ি–জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকার মানুষের দাবিতে আমি রাস্তাটি তৈরি করেছিলাম। তখন রেল বলেছিল, এখানে একটি রেলগেট করে দেবে। পরবর্তীতে তৃণমূল সরকার চলে আসে। এসজেডিএ–র সঙ্গে রেলের একটি চুক্তি হয় ২০১৩ সালে। সেখানে ঠিক হয় ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য ১২ কোটি টাকা খরচ বহন করবে এসজেডিএ। কিন্তু আজ পর্যন্ত রেল বা এসজেডিএ থেকে এখানকার সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না। সেই চুক্তিমতো কাজ শুরু করার দাবিতে আমরা সরব হয়েছি। অবিলম্বে এখানে ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাশ তৈরি করে এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
আরও পড়ুন- ‘ভিটেমাটি কেড়ে নিলে আত্মহত্যা করব’
এদিকে, আজকের রেল অবরোধের জেরে আটকে পড়ে দার্জিলিংগামী ঐতিহ্যবাহী টয়ট্রেন। দার্জিলিং যাওয়ার পথে আটকে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন টয়ট্রেনে থাকা ৩ জন বিদেশি–সহ মোট ২০ জন যাত্রী। ভোপাল থেকে আসা পর্যটক সিকন্দর আহমেদ বলেন, ‘এভাবে পর্যটক ভর্তি টয়ট্রেন মাঝ রাস্তায় আটকে রাখা হয়েছে! ট্রেনে ছোট ছোট শিশুরাও রয়েছে, খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এভাবে আন্দোলন চললে, এখানকার পর্যটনের বিকাশে বাধা সৃষ্টি হবে।’ আমেরিকা থেকে আসা বিদেশী পর্যটক সমিয়া–ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি রাস্তায় নেমে আসেন। বলেন, "এভাবে এখানে আন্দোলন চলে! গাড়ি আটকে আন্দোলন হয় নাকি"।
আরও পড়ুন- যানজটে নিত্য নাকাল শিলিগুড়ি, সমাধানের আশায় দিল্লির দ্বারস্থ বিজেপি সাংসদ
অন্যদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে রেলের গোয়েন্দা দফতরের কর্তা আশীষ মজুমদার ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়েন আশীষ মজুমদার। পরে অবশ্য এডিআরএম এ কে ঝা ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে রেল অবরোধ তুলে দেন। তবে, আন্দোলনকারীদের বক্তব্য রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন এডিআরএম এ কে ঝা। সিপিআইএমের শিলিগুড়ি এরিয়া ২ নম্বর কমিটির সম্পাদক জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘রেল আধিকারিকরা উড়ালপুল নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আগামী ৯ আগস্ট এসজেডিএ–তে যাব। সমস্যা না মিটলে আগামীদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব আমরা"।
শিলিগুড়ির আরো খবর পড়ুন এখানে