লাখ লাখ টাকা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই সাধের বাড়িই হারানোর আতঙ্কে দিন গুজরান করছেন শিলিগুড়ি সংলগ্ন পঞ্চনই নদীর চরের বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই নদীর চর দখলমুক্ত করতে বাসিন্দাদের হাতে নোটিস ধরিয়েছে প্রশাসন। নোটিস পাওয়ার পরই মুষড়ে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। আশা-আশঙ্কার দোলাচলে সকাল-সন্ধ্যা কাটাচ্ছেন তিন শতাধিক মানুষ। তবে প্রশাসন যতই নোটিস ধরাক না কেন, নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা। উচ্ছেদ করলে আত্মহত্যা করবেন, এমন হুমকিই দিয়েছেন জনা কয়েক চরের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: বাগডোগরা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের দাবি
কেন উচ্ছেদের নোটিস?
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, মাত্র ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারেই লক্ষাধিক টাকায় শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া ব্লকের পঞ্চনই নদীর চরে জমি কিনেছে ৭৫টি পরিবার। জমি মাফিয়াদের কাছ থেকে সস্তায় জমি কিনে বাড়ি করে বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। সম্প্রতি মাটিগাড়া ব্লকের বিডিও পঞ্চনই নদীর চর দখলমুক্ত করতে চরের বাসিন্দাদের নোটিস ধরিয়েছেন। দু’দিনের সময়সিমাও দেওয়া হয়েছিল এজন্য। কিন্তু পুলিশ নিয়ে গিয়েও চরের বাসিন্দাদের বাধায় পিছু হঠতে হয়েছে প্রশাসনকে। এরপর উচ্ছেদের জন্য আরও সাত দিনের সময়সীমা দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। সেই সময়সীমার মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। এই মুহুর্তে আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটছে তাঁদের।
আরও পড়ুন: কাঁচিতে কাটল সদ্যজাতর বুড়ো আঙুলের ডগা, অভিযুক্ত জুনিয়ার ডাক্তার
ভিটেমাটি বাঁচাতে দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন পঞ্চনই নদীর চরের বাসিন্দারা। আতঙ্কে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। এ প্রসঙ্গে চরের এক বাসিন্দা বলেন, কাঠা প্রতি ১৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকায় নদীর চরে জমি কিনেছেন দালালদের কাছ থেকে। এখন যদি উচ্ছেদ হয় তাহলে তাঁরা যাবেন কোথায় পরিবার নিয়ে। যাঁরা জমি বিক্রি করলেন, তাঁদের না ধরে উচ্ছেদ করার নোটিস দিয়ে যাচ্ছে বারংবার। সেই সঙ্গে দালালরাও এলাকায় এসে শাসিয়ে যাচ্ছে যাতে তাঁদের নাম না প্রকাশ করা হয় প্রশাসনের কাছে। এই টানাপোড়েনে কার্যত দিশেহারা ওই এলাকার বাসিন্দারা।নদীর চরে ভিটে মাটি বাঁচাতে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের দ্বারস্থ হয়েছেন বাসিন্দারা। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: যানজটে নিত্য নাকাল শিলিগুড়ি, সমাধানের আশায় দিল্লির দ্বারস্থ বিজেপি সাংসদ
এদিকে, পঞ্চনই নদীর চরের বাসিন্দারা হুমকি দিয়েছেন, যদি বলপূর্বক দখলমুক্ত করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তাঁরা আত্মহত্যা করবেন। তবে বাসিন্দাদের হুমকিতে যে প্রশাসন পিছু হঠছে না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে বিডিওর গলায়। এ প্রসঙ্গে মাটিগাড়ার বিডিও রুনু রায় বলেন, ‘‘কোনওভাবেই পঞ্চনই নদীর চরে থাকতে দেওয়া যাবে না। যাঁরা এখনও বসবাস করছেন, তাঁদের সময় দেওয়া হয়েছে দখলমুক্ত করার জন্য। যদি তাঁরা স্বেচ্ছায় উঠে না যান তাহলে পুলিশের সহযোগিতায় দখলমুক্ত করা হবে’’।