রাজধানী দিল্লিতে বাঙালি হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে নালিশ জানালেন কাঁথির BJP সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে মালদার এক শিশুকে নির্যাতন নিয়ে সম্প্রতি যে অভিযোগ করেছেন তা খারিজ করেছেন পূর্ব দিল্লির ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে নালিশ জানানোর বিষয়টি সামনে এসেছে।
দিল্লির সাইবার ক্রাইম বিভাগে জানানো অভিযোগ-পত্রে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির BJP সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী লিখেছেন, "দিল্লি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়ো ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।" এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে তাঁর বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় গতকাল একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছেন, মালদার দেড় বছরের শিশুকে দিল্লি পুলিশ শুধুমাত্র বাঙালি বলে নির্যাতন করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পোস্ট করা সেই ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও পড়ুন- 'বাঙালি বলে দুধের শিশুকেও নির্যাতন', মমতার অভিযোগ নিয়ে কী জানাল দিল্লি পুলিশ?
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছেন পূর্ব দিল্লির ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া। সংবাদ সংস্থা ANI-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে পূর্ব দিল্লির ডিসিপি বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছেন যে দিল্লি পুলিশ একজন বাংলাভাষী মহিলা ও তার শিশুকে হেনস্থা করেছে। আমরা এই খবর পেতেই খোঁজ শুরু করি। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যার কথা বলা হচ্ছে তাঁর নাম সাঞ্জিনু পরভান, তাঁর স্বামীর নাম মোক্তার খান। এরা মজবুর নগর পশ্চিম বিনোদ নগরে থাকেন।"
আরও পড়ুন- West Bengal News live Updates:SSC-এর চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়াতে মরিয়া রাজ্য, আবারও নতুন তৎপরতা সরকারের
তিনি আরও বলেন, "এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ২৬ তারিখ রাতে এদের বাড়িতে সাদা পোশাকে ৪ জন যায় ও এদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। মারধর কার হয় ও এদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়, যেটা ওরা পরে ওদের দিয়ে দেয়। "আমরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত করে জানতে পারি, এই গোটা কাহিনী ছিল সাজানো, যার কোনও ভিত্তিই নেই। ওই মহিলা ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওরা জানায়, গত ২৭ তারিখ ওই মহিলা নিজের বাড়ি থেকে বেরোয়। সঙ্গে দুটো বাচ্চাও ছিল। CCTV ফুটেজে দেখা গেছে, ওই মহিলা একটি বাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ান। সেই বাড়িমালিক মহিলার কাছে জানতে চান যে তাঁর বাড়ি কোথায়। উত্তরে মহিলা জানান, যে তিনি বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছেন।"
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee:ভোটার তালিকা নিয়ে গভীর চক্রান্তের অভিযোগ, অনুব্রত-কাজলকে একসঙ্গে মাঠে নামার নির্দেশ মমতার
দিল্লি পুলিশের ওই কর্তা বলেছেন, "ওই ব্যক্তি মোবাইলে ফোন করে মহিলার স্বামীকে ডেকে পাঠান। তারপর মহিলা সেখান থেকে চলে যান। পরে মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ওর এক আত্মীয় পশ্চিমবঙ্গের মালদায় জেলায় থাকে, তার রাজনৈতিক একটি পরিচয় রয়েছে। ওই ব্যক্তির কথাতেই এমন ভিত্তিহীন ভিডিও বানায় মহিলা। সেই ভিডিও কাকার মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়। পরে সেটি ভাইরাল হয়েছে। এই গোটা ঘটনাটি সাজানো ও ভিত্তিহীন। জেনে বুঝে দিল্লি পুলিশের ইমেজ খারাপ করতেই এই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে।"
মঙ্গলবার ফের বীরভূমের ইলামবাজারের প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকেও দিল্লিতে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও বিজেপি শাসিত রাজ্যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বা বাঙালি বলেই তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে আবারও অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।