Supreme Court granted bail to Malda resident Rasikchandra Mandal at the age of 104: মালদহে জেল থেকে জামিনে মুক্তি বৃদ্ধর পরিবারে আনন্দ। ১০৪ বছর বয়সে জামিন পেলেন মালদহের মানিকচকের এক বৃদ্ধ। জমি নিয়ে বিবাদে ভাইয়ে-ভাইয়ে বিবাদ হয়েছিল। তারই জেরে গুলি করে ছোট ভাইকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল দাদার বিরুদ্ধে। যদিও দাদার পরিবারের দাবি, পারিবারিক ঝামেলার সুযোগ নিয়ে অন্য এক ব্যক্তি ছোট ভাইকে গুলি করে খুন করেছিল। তবে সেই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করে নিহতের দাদাকে। জেল হয় তাঁর। এরপর কেটে গিয়েছে ৩৬ টা বছর। কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানালেও তাঁর জামিন হয়নি। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন ১০৪ বছরের ওই বৃদ্ধা। তাঁর বাড়ি ফেরার আনন্দে বিভোর মণ্ডল পরিবার।
জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম রসিকচন্দ্র মণ্ডল (১০৪)। তাঁর বাড়ি মালদহের মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুর গ্রামে। তার তিন ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। ইতিমধ্যে বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ১৯২০ সালে মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুর গ্রামে জন্ম রসিকবাবুর। বেশ কয়েক বিঘা জমির মালিক ছিলেন তিনি। গঙ্গার পলি মেশা উর্বর ওই জমি ছিল বহুফসলি। পৈতৃক সেই জমি নিয়েই তাঁর সঙ্গে বিবাদ বাধে ছোট ভাই সুরেশ মণ্ডলের। দুই ভাইয়ের পাশাপাশি বাড়ি। ১৯৮৮ সালে একদিন নিজের বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সুরেশ মণ্ডল।
সেই ঘটনায় সুরেশবাবুর স্ত্রী আরতি মণ্ডল ভাসুর রসিক-সহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে মানিকচক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। সবার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়। শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। ১৯৯৪ সালে রসিকচন্দ্র মণ্ডল ও জিতেন তাঁতি নামে দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়। তখন রসিকবাবুর বয়স ছিল ৬৮ বছর। তারপর থেকে জেলেই ছিলেন দু’জন। বছর তিনেক আগে প্যারোলে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে নদীতে ডুবে মারা যান জিতেন তাঁতি। প্যারোলে ছাড়া পেয়ে বেশ কয়েক বছর বাড়িতে ছিলেন রসিকবাবুও। প্যারোলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুলিশ তাঁকে ফের সংশোধনাগারে পাঠায়।
আরও পড়ুন- Sundarbans: সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে বিরাট বিপত্তি! গাইডদের আচমকা বিক্ষোভে নাজেহাল পর্যটকরা
এই দীর্ঘ সময়কালে তাঁকে মূলত মালদা জেলা সংশোধনাগারেই রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালে রসিকবাবু নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান। কিন্তু তাঁর জামিনের আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্টেও তিনি সেই আবেদন জানান। কিন্তু সেখানেও তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। ২০২০ সালে ৯৯ বছর বয়সী রসিকবাবু তাঁর বয়স এবং বয়সজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শীর্ষ আদালতে মুক্তির আবেদন জানান। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার স্ট্যাটাস রিপোর্ট চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি নোটিশ জারি করে। অবশেষে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে রসিকবাবুর আবেদনের শুনানি হয়। রসিকচন্দ্র মণ্ডল ও রাজ্য সরকারের কৌসুলিদের সওয়াল-জবাবের পর ডিভিশন বেঞ্চ ১০৪ বছর বয়সী রসিকবাবুকে অন্তবর্তী জামিন/প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে।
রসিকচন্দ্র মণ্ডলের ছেলে উত্তম মণ্ডল বলেন, "বাবার বয়স এখন ১০৩ বছর। আর কয়েকদিন বাদেই ১০৪ বছরে পা দেবেন বাবা। বাবার জামিনের জন্য আমরা অনেকদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলাম। আইন যাই বলুক, আমার বাবার বয়সী কাউকে কোনও অপরাধে জেলে রাখা আমি অন্যায় মনে করি। বাবা এখন অসুস্থ। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। তিনি ছাড়া পেলে আমরা খুব আনন্দ পাব।" এদিকে, রসিকবাবুর স্ত্রী মীনা মণ্ডলের বয়সও ৮৫ বছর পেরিয়েছে। কানে ঠিকমতো শুনতেও পান না তিনি। বৃদ্ধার কথায়, "স্বামী জেল থেকে ছাড়া পাবে। খুব ভালো লাগছে। ছেলের সংসারে আছি। ওর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।"