/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/18/c6d0980e-eb68-423b-896b-38542a3a40d1-2025-08-18-15-01-59.jpeg)
The Bengal Files controversy: ছবির বাঁদিকে গোপাল মুখার্জি ও ডানদিকে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
The Bengal Files controversy: কলকাতায় ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার প্রেক্ষাপট নিয়ে হিন্দি ছবি বানিয়েছেন বলিউড পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। দিন কয়েক আগেই কলকাতায় ছবির ট্রেলার লঞ্চ ঘিরে তুমুল হট্টগোল হয়। ছবিতে কলকাতার গোপাল মুখার্জিকে নিয়ে একটি বড় অংশ রয়েছে। '৪৬-এর দাঙ্গা থামাতে অন্যতম ভূমিকা ছিল এই গোপাল মুখার্জীর, জনশ্রুতি এমনটাই। বিবেক অগ্নিহোত্রীর 'The Bengal Files' ছবিতে গোপাল মুখার্জিকে অসম্মান করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর পরিবারের। এমনকী বিবেক অগ্নিহোত্রীর বিরুদ্ধে থানায় FIR পর্যন্ত দায়ের করেছেন তাঁর পরিবার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধি দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে 'The Bengal Files' নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসকে বিকৃত করার একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে সরব হলেন গোপাল মুখার্জির নাতি শান্তনু মুখোপাধ্যায়।
তাঁর কথায়, "বিবেক অগ্নিহোত্রী ওই সিনেমাটা নিয়ে যে রিলসটি বানিয়েছেন, তাতে উনি বলছেন, 'কলকাত্তামে এক থা কসাই, উনকো মাড়োয়াড়ি লোগ নে পয়সা দিয়া, হাতিয়ার খরিদা..অর উনোনে মারা মুসলিম লোগোকো।' পাঁঠা মানে কাকে সম্বোধন করছেন উনি (বিবেক অগ্নিহোত্রী)? গোপাল মুখার্জি কি পাঁঠা? আমাদের পরিবারের তরফেই ওনার বিরুদ্ধে FIR করা হয়েছে। আমরা সিনেমার ছবিতেও দেখলাম, অনেক অন্য কিছু দেখানো হয়েছে। ওনার ভাবমূর্তিই শুধু নয়, ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "১৯৪৬-এর ১৬ অগাস্টের পরে যেটা ঘটেছিল, সেটা নিয়ে সিনেমা হতেই পারে। তাতে কোনও আপত্তি নেই। হাজারটা সিনেমা হোক। অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখন যখন সম্মান দিচ্ছো, তখন সঠিকভাবে জানাও। সম্মান দিতে না পারলে অসম্মান করতেও পারবে না....উনি (গোপাল মুখার্জি) স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তুমি ওনাকে দেখাচ্ছো এক থা কসাই? এটা কী ধরনের কথা? একজন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান, যার কাকা বিপ্লবী অনুকূল চন্দ্র মুখার্জি, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ...তাঁর পরিবারে লোক....সেই গোপাল মুখার্জিকে বলা হচ্ছে এক থা কসাই?"
আরও পড়ুন- Suvendu Adhikari:সাংবাদিক বৈঠকের আগে পুলিশকর্মীদের স্ত্রীদের 'ট্রেনিং'? বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর
শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, "উনি যে দ্য বেঙ্গল ফাইলস করছেন। সেটা করতে গেলে '৪৬ সাল আসবে, গোপাল মুখার্জিও আসবেন। গোপাল মুখার্জি ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইহলোকে ছিলেন। তারপরে ওনার পরিবার তো আর কর্পূরের মতো উবে যায়নি। উনি একটা সিনেমা করছেন, মাসের পর মাস কলকাতায় রয়েছেন। উনি একবারও প্রয়োজন মনে করলেন না আমাদের সঙ্গে কথা বলার? কাদের কাছ থেকে উনি তথ্য নিলেন? উনি দেখাচ্ছেন একটা লোক তরোয়াল নিয়ে মুসলিমদের মারছেন। তাঁর গায়ে-হাতে রক্ত মাখা...উনি এটা কী দেখাচ্ছেন?"
আরও পড়ুন-West Bengal News live updates:বড় খবর! শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়
'৪৬-এর দাঙ্গা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, "তৎকালীন মুসমিল লিগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির লোকজনও ছিল। ওরাও সায় দিয়েছিল। ১৬ অগাস্ট শহিদ মিনারের মাঠে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জ্যোতিবাবু, খাজা নিজামুদ্দিন, হুসেন সোরাবর্দিরা ছিলেন। লিগ ভলিন্টিয়াররা প্রত্যেকেই সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন। এই সমস্ত দেখে মিটিং চলাকালীন জ্যোতিবাবু বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ওখান থেকে দাবি ওঠে আগে পাকিস্তান করে দিতে হবে, তারপর ভারত হবে। এই দাবিটা ওঠার পর মিটিং যখন শেষ...তখন লোকজন ধর্মতলা, লেনিন সরণি চত্বরের আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির দোকানগুলিতে ঢুকে পড়ে। বেপরোয়া লুঠ চালায়। আগুন ধরিয়ে দেয়। তখনই '৪৬-এর দাঙ্গা শুরু হয়। তারও ৪-৫ দিন আগে থেকে মুসলিম লিগ এটার পরিকল্পনা করেছিল।"
তাঁর কথায়, "মুসলিম লিগের পরিকল্পনা ছিল হাওড়ার ওপার থেকে ভারতের সীমানা থাকবে। এপারটা পুরোটাই যাবে পূর্ব পাকিস্তানে। এমনকী শহিদ মিনার, হাওড়া ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এটা জানার পর গোপাল মুখার্জি কলকতার বাঙালি, অবাঙালি যুবকদের নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় উনি ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা তাকেই মারবে যারা তোমাদের মারতে আসছে। নিরীহ মুসলিমদের ওপর তিনি অত্যাচার করতে নিষেধ করেছিলেন। বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে গোপাল মুখার্জির অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল।
উনি একেবারেই সাম্প্রদায়িক নয়। উনি (বিবেক অগ্নিহোত্রী) ইতিহাসকে বিকৃত করছেন।"