Gopal Chandra Mukherjee:'গঙ্গার ওপার পর্যন্ত হিন্দুস্তান, এপার পাকিস্তানের', সুরাওয়ার্দির প্ল্যানটা আগেই জেনে ফেলেছিলেন গোপালচন্দ্র মুখার্জি

Gopal Patha: ১৯৪৬ সালের ১৬ অগাস্ট এই গোপালচন্দ্র মুখার্জিই নিজের সংগঠনের ছেলেদের নিয়ে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম হিংসা বন্ধে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন।

Gopal Patha: ১৯৪৬ সালের ১৬ অগাস্ট এই গোপালচন্দ্র মুখার্জিই নিজের সংগঠনের ছেলেদের নিয়ে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম হিংসা বন্ধে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Gopal Chandra Mukherjee,গোপাল চন্দ্র মুখার্জি, Gopal Patha,গোপাল ‘পাঁঠা’ Age 83 interview, 16 August 1946,১৬ আগস্ট ১৯৪৬, Direct Action Day,ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে,  Calcutta killings,কলকাতা হত্যাকাণ্ড,  Communal violence,সাম্প্রদায়িক হিংসা, Hindu-Muslim clash,হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ, College Street meat shop,কলেজ স্ট্রিট পাঁঠার মাংসের দোকান, Volunteers with sticks,দণ্ডধারী স্বেচ্ছাসেবক,Beliaghata killing of cattle,	বেলেঘাটা গরু হত্যাকাণ্ড, Stopping riots,	গণ্ডগোল থামানো, Shelter to Muslims	মুসলিমদের আশ্রয়, Armed resistance,সশস্ত্র প্রতিরোধ, Saving lives,প্রাণ বাঁচানো, Negotiations with League,লীগ নেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি, Gandhi’s plea,গান্ধীর অনুরোধ, Wellingon Square confrontation,ওয়েলিংটন স্কোয়্যারে সংঘর্ষ,Use of firearm, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার,Personal courage,ব্যক্তিগত সাহস,Bengal’s Partition plan,বঙ্গ বিভাজন পরিকল্পনা

Gopal Chandra Mukherjee: গোপালচন্দ্র মুখার্জি।

১৯৯৭ সালে গোপালচন্দ্র মুখার্জির বয়স তখন ৮৩ বছর। সেই বছরেই লন্ডনের SOAS (School of Oriental and African Studies)-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ১৯৪৬ সালের অগাস্টে কলকাতার সেই অভিশপ্ত দিনগুলির রোমহর্ষক বর্ণনা করেছেন গোপালচন্দ্র মুখার্জি।

Advertisment

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গোপালচন্দ্র মুখার্জি কলকাতার হিংসাত্মক পরিস্থিতি রুখতে তাঁর ও তাঁর অনুগামীদের লড়াইয়ের কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। সেই সময়ে সেই পরিস্থিতির আবহে গোপালচন্দ্র মুখার্জির কথায় উঠে এসেছে তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সুরাওয়ার্দি থেকে শুরু করে অনেকেরই নাম। 

গোপালচন্দ্র মুখার্জি ১৯৯৭ সালে দেওয়া তাঁর সেই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "১৯৪২-এর আন্দোলনের সময়েই কিছু তরতাজা ছেলেদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করেছিলাম। ১৯৪৬ সালের পরিস্থিতি তৈরি হতেই তাদেরকে আমি ডেকে পাঠাই। ওদের বলি, এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব? ওরাই তখন বলেছিল লড়াই করব। ১৬ অগাস্ট ডিরেক্ট অ্যাকশনে যেটা হতে চলেছে, তার আগে তিনবার কমিশন এসেছে ইংল্যান্ড থেকে। ওরা ফিরে গেছে। এখানকার নেতারা দেশভাগে রাজি হননি।"

Advertisment

তিনি আরও বলেন, "গান্ধীজিও দেশভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন। নেতাজি IMA-র হয়ে লড়তে লড়তে ইম্ফল পর্যন্ত এসে গিয়েছিলেন। উনিও দেশভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন। গান্ধীজির কথা গ্রাহ্য না করেই সেই সময়ে দেশের কংগ্রেস নেতারা ইংরেজদের শর্তে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। মাউন্টব্যাটন এসে নেহেরুকে দেশভাগে রাজি করিয়েছিলেন।"

তাঁর কথায়, "আমি কোনও দল করিনি। আমি কোনও দলের সদস্যই নই। মানুষের পাশে থাকি। কলেজ স্ট্রিটে আমার পাঁঠার মাংসের দোকান ছিল। ওই দিন (১৯৪৬ সালের ১৬ অগাস্ট) সকাল থেকে ওই দোকানেই বসেছিলাম। লিগের ভলান্টিয়াররা বড় বড় লাঠি নিয়ে তখন মার্চ করছিল। ওরা স্লোগান দিয়েছিল 'লড়কে লেগা পাকিস্তান'। আমিও ওদের এই কথা শুনেছি। এরই মধ্যে খবর এল, বেলেঘাটায় দুটো গোয়ালাকে কেটে ফেলেছে। সেটা শুনে বউবাজারের মোড়ে ততক্ষণে হিন্দু-মুসলমানে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। দোকান বন্ধ করে দিয়ে আমিও বেরিয়ে পড়লাম। মধ্য কলকাতা চত্বর থেকে ছেলেদের একত্রিত করতে শুরু করলাম। কলকাতার ওই চত্বরটায় সেই সময়ে হিন্দুদের প্রভাব বেশ ছিল। এই গন্ডগোল থামানোর চেষ্টা শুরু করে দিলাম।"

আরও পড়ুন- Gopal mukherjee:'ইতিহাস বিকৃতি, অসম্মান মানব না', The Bengal Files-এর পরিচালককে তুলোধনা গোপাল মুখার্জির নাতির

তিনি বলেন, "আমরা বরাবর হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে এক জাগায় থাকতাম। কলকাতায় এই লড়াইটা হওয়া কখনওই কাম্য ছিল না। এটাকে থামাতেই ছিল আমাদের লড়াই। বেলা তিনটে অবধি সেদিন দাঁড়িয়ে থেকে গন্ডগোল থামানোর চেষ্টা করে গিয়েছি। কিন্তু তখনও লুঠতরাজ চলছে। যারা সেটা করছিল তাদের বারবার আমি বুঝিয়েছি, এসব বন্ধ করো।"

"সেই সময়ে খবর পেলাম চাঁদনি চক এলাকার মুসলমানরা হামলা চালিয়েছে। চাঁদনি চক এলাকাতেই আমার পাড়া। ওখানে একটা বাড়িতে মুসলিম মেস ছিল। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩০০-৪০০ মুসলমান বাস করত। তার পাশের বাড়িটাতেও মুসলমান ভর্তি ছিল। তখন ওদের বাঁচাতে আমি ফিরে আসি।"

আরও পড়ুন- Kolkata weather today:সাগরে ঘনাচ্ছে নিম্নচাপ, আজ তুমুল বৃষ্টির পূর্বাভাস কোন জেলাগুলিতে? দুর্যোগ চলবে কতদিন?

"চাঁদনি চকে ফিরে এসে দেখি আমার বাড়ির সামনে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আমার বাড়ির মেয়েরা সব বাড়ির ভিতরে ছিল তখন। সামনের একটি দোকানে তখন লুঠ চলছে। আমার হাতে একখানা শোড ছিল। সেই শোডটা দিয়ে লুঠেরাদের ওপর কোপ বসাই। ওদের তাড়া করলে ওরা পালিয়ে যায়।"

"এই মারামারি আমরা চাইনি। আমার কিছু মুসলিম বন্ধু ছিল। ওদের ডেকে কথা বলি, যে আমার এলাকায় গন্ডগোল করো না। এখানে যেমন হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই আছি থাকব। তখনই কড়েয়ার দিক থেকে একটা গ্রুপ এসে ময়দানের মধ্যে ঢুকেছে। আমি আমার মুসলিম বন্ধুদের ডেকে বোঝাই যে ওদের প্রতিহত করো। ওদের বোঝাই যে গন্ডগোল কোরো না।"

আরও পড়ুন- Independence day :৩ দিন ধরে এই জেলার সরকারি ভবনে উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা!শেষমেষ আজ যা হল...

  "সেদিনের মতো রাত হয়ে যাওয়ার পর যে যার মতো চলে গেল। তবে আমার মাথায় চিন্তা ছিল যে এতগুলো মুসলমান আমার এলাকায় রয়েছেন, কখন কে গন্ডগোল করবে কী করবে। ওদের তখন আমি উদ্ধার করে বউবাজার থানায় পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছিলাম। জানবাজারের দিক থেকে ততক্ষণে অনেকে এসে আমাদের এলাকায় ঢুকেছে। এদেরও আমি উদ্ধার করে বউবাজার থানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।"

"পরের দিন সন্ধেয় তাসা বাজিয়ে মিছিল করে ফের ওরা আসে। সবে তখন লড়াই বন্ধ হয়েছে। তখন এখানে এআরপি ছিল, সিভিক গার্ড ছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন মুসলিম ছেলে ছিলেন, তাঁরা ছিলেন আমার বন্ধুও। তাদের ডেকে বলি এই যে ওয়েলিংটন স্কোয়্যারে যে জমায়েত হচ্ছে তোমরা ওদের আটকাও, ওদের বুঝিয়ে চলে যেতে বলো। তখন আমার কাছে আমেরিকান দুটো পিস্তল ছিল। ওই লোডেড পিস্তল সঙ্গে নিয়েই আমি ওয়েলিংটন স্কোয়্যারে গিয়েছিলাম। ওদের বোঝাতে গিয়েছিলাম, যে গন্ডগোল করো না। কিন্তু বুঝতে পারলাম যে ওরা আমায় ঘিরে ফেলছে। আমি গুলি চালাতে পারতাম। কিন্তু একটা জীবনের দাম আছে। আমি সোজা কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেলাম। লোকজন যাতে না মরে তার জন্য আমি ফিরে এলাম। ওরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গেল।"

"লড়কে লেগা পাকিস্তান বলার মধ্য দিয়ে এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে ওরা খেলবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। হরেন ঘোষ আমাদের পাড়াতেই থাকতেন। উনি সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ ছিলেন। সুরাওয়ার্দি সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। হরেন ঘোষের অফিস যে বাড়িতে ছিল সেখানেই এক বাইজির কাছে যেতেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সুরাওয়ার্দি। দেশভাগ হওয়ার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল ওখানেই। একদিন একটি কাগজ সুরওয়ার্দি ফেলে যান বাইজির বাড়িতে। পরে হরেন ঘোষের কাছে সেই কাগজটি নিয়ে যান বাইজি। হরেন ঘোষ কাগজটি দেখে বাইজির সামনেও ময়লার বাক্সে ফেলে দেন। বাইজি চলে যেতেই সেই কাগজটি তুলে নেন হরেন ঘোষ। সেটিতেই দেশভাগের পরিকল্পনার কথা ছিল।"

"হরেন ঘোষ সেই কাগজটি নিয়ে সোজা এখানে আসেন। সেই কাগজে থাকা প্ল্যানে লেখা ছিল, গঙ্গার ওপার পর্যন্ত থাকবে হিন্দুস্তান। গঙ্গার এপারে সবটা থাকবে পাকিস্তানে। হরেন ঘোষের কাছ থেকে এই খবরটা পাই। হরেন ঘোষই জওহরলাল নেহরুর কাছে ওই প্ল্যানটা পৌঁছে দেয়। হরেন ঘোষ তখনও নিজের অফিসে যেতেন। আমরা ওকে বারণ করেছিলাম অফিসে যেতে। কিন্তু উনি শোনেননি। শেষমেশ ওকে খুন করল। একে টুকরো টুকরো করে কেটে ব্যাগে ভরে এদিক ওদিক ফেলে দিয়েছিল।"

"তখন এদিকটা পাকিস্তানে চলে গেলে নির্যাতন আরও বেড়ে যেত। আমি এই বিপদটা বুঝেছিলাম। আমি বুঝেছিলাম ওই বর্বরতার মোকাবিলা বর্বরতা দিয়েই সম্ভব। ছেলেদের বলেছিলাম ওরা একজনকে মারলে ওদের ১০ জনকে মারতে হবে। আধমরা করলে চলবে না। পুরো খতম করতে হবে।"

kolkata Gopal Chandra Mukherjee