পাটনার পরে ব্যাঙ্গালোরে বিজেপি বিরোধী ২৬ দলের মহাজোটের বৈঠক নিয়ে শোরগোল পড়েছে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে। একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলায় বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়াই এই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। তা যে কোনও ভাবে সম্ভব নয় তা সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্যে স্পষ্ট। অন্ততপক্ষে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও সিপিএম লড়াই করবে তা স্পষ্ট দুই দলের নেতৃত্বর বক্তব্যে। মোদ্দা কথা তাহলে এই ব্যাঙ্গালুরুর ইউনাটেডে ইন্ডিয়া মিশনে লাভের গুর কে খাবে? রাজনৈতিক মহলের মতে, ফায়দা পেতে চলেছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস। বরং সমস্যা বাম ও কংগ্রেসের।
এর আগে পাটনায় বিজেপি বিরোধীরা বৈঠকে অংশ নিয়েছিল। মূলত ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরকে বেগ দিতেই বিরোধীদের এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, আপ সহ এবারের বৈঠকে যোগদানকারী দলের সংখ্যা বেড়েছে। কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারে বিল প্রসঙ্গে আপকে সমর্থন দেবে কথা দেওয়ায় আম আদমি পার্টি এই বৈঠকে হাজির হয়েছে। মমতার সঙ্গে এক ফ্রেমে ধরা পড়ছে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। রয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। আদপে এই বৈঠক কতটা বাস্তবায়িত হবে? তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব, যে যেখানে শক্তিশালী সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে সেই দল প্রার্থী দিয়ে লড়াই করুক। একের বিরুদ্ধে এক এই ফর্মূলা চাইছে ঘাসফুলি শিবির। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কি হবে?
সীতারাম ইয়েচুরি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় যাবে না সিপিএম। একেই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, তাছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের লাগাতার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সিপিএম। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস বা অন্য ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে জোট বেধে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। সিপিএমের সঙ্গে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বও একমত মহাজোট নিয়ে। রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আমরা কোনওরকম কোনও জোট করব না। এটা স্পষ্ট। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এই কথা বলেছেন। এখানে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোট বরদাস্ত করব না।'
আরও পড়ুন- ‘বাংলায় কুস্তি বেঙ্গালুরুতে দোস্তি!’, বাম-কংগ্রেসকে তুলোধনা শুভেন্দুর
বিজেপির বিরুদ্ধে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে জোট করতে গিয়ে রাজ্য ভিত্তিক বাধ্যবাধকতার কথাও বলছেন বিরোধীরা। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই কি আদৌ সম্ভব? জোটের বৈঠকের আগেই জোট না করার ঘোষণা করে দিয়েছে সিপিএম ও রাজ্য কংগ্রেস। তাহলে অন্য রাজ্যগুলিতেও যে একই হাল চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে। কংগ্রেস থাকলে আপ থাকবে না, অথচ শর্ত মঞ্জুর হতেই ব্যাঙ্গালুরু ছুটলেন আপ নেতৃত্ব। এর আগে গুজরাট, গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়, কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারাতে আপ ও তৃণমূল ময়দানে নেমেছে বলে সরাসরি কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ করেছিল। এবার ব্যাঙ্গালোরে মূল বৈঠক শুরুর আগেই পশ্চিমবঙ্গে জোটের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। অন্ততপক্ষে বাংলা যে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের আলো দেখবে না তা স্পষ্ট করেছে বাম-কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- ‘কট্টর দুর্নীতির সম্মেলন’, বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের বৈঠককে চাঁচাছোলা তোপ মোদীর
ব্যাঙ্গালোরের মহাজোটের বৈঠককে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির বলছে দিল্লিতে দোস্তি এখানে কুস্তি। এখানে কর্মী খুন হচ্ছে আর বিজেপি বিরোধীতা করতে গিয়ে একমঞ্চে বসছে। অন্য দিকে তৃণমূল কংগ্রেসসের মূল শক্তি এই বাংলা। লোকসভায় ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গেলে এই রাজ্য থেকে সর্বাধিক আসনে লড়তেই হবে মমতার দলকে। সেখানে কংগ্রেস-সিপিএমকে আসন ছেড়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব। একমাত্র মুর্শিদাবাদ ও মালদায় যে দুটি আসনে কংগ্রেসের সাংসদ রয়েছে ওই দু'টি আসন ছাড়ার সম্ভাবনা আছে। তখন আবার গোয়া বা অন্যত্র আসন দাবি করবে তৃণমূল।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই জোট বৈঠকে বাম-কংগ্রেসের আদপে কোনও ফায়দা নেই। বরং তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে তাঁদের নেতা-নেত্রীদের এক মঞ্চের ছবি এরাজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে দলীয় ভোট ফের সুইং হতে পারে। রাজ্যে লড়াই দেখছে মানুষ অথচ ব্যাঙ্গালোরে একই বৈঠকে হাজির কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল। মহাজোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা, খুন হয়েছে তবু কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব মুখ বন্ধ রেখেছে। নিজেদের স্বার্থে দলের নেতা-কর্মীদের খুনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই দুই দল। বিরোধী বৈঠককে নিয়ে কার্যত বড় ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি। সঙ্গে কিছুটা হলেও তৃণমূল কংগ্রেসও ফায়দা পেতে পারে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এখানে যতই লড়াই করো, একমঞ্চে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএমকে বসতে তো হল।