Krishnanagar Municipality: কৃষ্ণনগর পুরসভার অচলাবস্থা অব্যাহত। বারে বারে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ছে। শেষ পার্যন্ত পুরসভার সমস্যা মেটাতেই কি তৃণমূল কাউন্সিলরদের কলকাতায় ডাক পড়ল? রাজ্যের একমাত্র এই পুরসভার পরিচালনা নিয়ে তৃণমূলের কাজিয়া প্রকাশ্যে শুধু আসেনি রীতিমতো অচল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
২৫ আসন বিশিষ্ট কৃষ্ণনগর পুরসভার একজন কাউন্সিলর মারা যাওয়ায় বর্তমানে ২৪ জন কাউন্সিলর। এর মধ্যে ২ জন কংগ্রেসের, ১ জন বিজেপি ও ১ জন নির্দল কাউন্সিলর আছে। অথাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের ২০ জন কাউন্সিলর আছে। এই পুরসভা এই মুহূর্তে চরম অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে।
২১ জুলাই হয়ে গেলেও এই সমস্যা না মেটায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কৃষ্ণনগর পুরসভা অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য ২৮ জুলাই পুরসভার কক্ষে বিশেষ সভা ডাকা হয়েছে। এই বিশেষ সভা ডেকেছে কৃষ্ণনগর পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিল। সেই চিঠি কৃষ্ণনগর পুরসভার ওয়েবসাইটে থাকায় গোটা বিষয়টি চলে এসেছে প্রকাশ্যে। কৃষ্ণনগর পুরসভার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানের পর দলের ৩ কাউন্সিলরকে অনাস্থার জন চিঠি দেয় দলের ১০ কাউন্সিলর সহ ১২ জন কাউন্সিলর। তৃণমূল কংগ্রেসের দলের সমস্যা থাকলে দেখা যায় ২১ জুলাইয়ের সভার মধ্যে নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তার পর বিষয়টি মিটে যায়। কিন্ত সার্ধ শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া কৃষ্ণনগর পুরসভার বর্তমান অচলাবস্থা কিছুতেই মিটছে না। অথচ ২৬ বিধানসভা ভোটের আর বেশি দিন বাকি নেই।
সেক্ষেত্রে বর্ধিষ্ণু কৃষ্ণনগর পুরসভার উন্নয়নের কর্মকান্ড, পরিষেবা খুবই জরুরি বিষয়। অথচ কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে পরিষেবা না পেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। এই ঘটনার জেরে পুরসভায় অচলাবস্থা চরমে পৌঁছেছে। শহরের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়েছে। সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তিও বেড়েছে। ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ জন কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেন অনাস্থায়। এর মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের ১৩ জন, কংগ্রেসের শান্তশ্রী সাহা (১৪ নম্বর ওয়ার্ড) ও নির্দল কাউন্সিলর অসিত সাহ। এই ১৫ জন একযোগে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন। তারপর ১১ জুলাই চেয়ারম্যান রীতা দাসের বিরুদ্ধে ফের অনাস্থা প্রস্তাব আনেন তৃণমূলের ১৩ জন কাউন্সিলর সহ মোট ১৫ জন। চেয়ারম্যান কোনও মিটিং না ডাকায় ভাইস চেয়ারম্যান নরেশ দাসের কাছে ৭ দিনের মধ্যে সভা ডাকার অনুরোধ জানিয়ে লিখিত আবেদন করেন তাঁরা।
সেই সময় পেরিয়ে যেতে ফের দলের ১০ কাউন্সিলর সহ ১২ জন কাউন্সিলর দলের ৩ কাউন্সিলর মলয় দত্ত, শিশির কর্মকার ও সৌগত কৃষ্ণ দেবের কাছে ফের অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য চিঠি দেন। সেই মতো মঙ্গলবার বিকেলে এই ৩ কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য ২৮ জুলাই পুরসভার কক্ষে বিশেষ সভা ডেকেছে। তবে এর মধ্যে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল কাউন্সিলরদের মেসেজ পাঠিয়ে ২৯ জুলাই কলকাতায় ডাকা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সেই ডাক পুরসভার সমস্যা মেটানোর জন্য। অথাৎ এক্ষেত্রে দল সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। এতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে দলের অনাস্থা আনা কাউন্সিলররা।
দলের উচ্চ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত না মানলে সরাসরি যে সেটা দলবিরোধী কাজ করা সে কথা অনুমান করছেন কাউন্সিলররা। তবে তাঁরা যে অনড়, তা তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। সেক্ষেত্রে ২৯ জুলাইয়ের আগে ২৮ জুলাই পুরসভার কক্ষে চেয়ারম্যানের অপসারণ নিয়ে বোর্ড অফ কাউন্সিলের ডাকা বিশেষ সভা কি হবে? এ প্রসঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করা কংগ্রেস কাউন্সিলর শান্তশ্রী সাহা বলেন,' ২৮ জুলাই তলবি সভায় চেয়ারম্যান অপসারণ নিশ্চিত। শুধু সময়ের অপেক্ষা। চেয়ারম্যান রীতা দাস বিমাতৃসুলভ আচরণ করায় কৃষ্ণনগরে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়েছে। তাই অপসারণ হবেই।'
তবে ২৯ জুলাই দল যে তৃণমূল ভবনে ডেকেছে সে কথা স্বীকার করেছেন কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান রীতা দাস। তিনি বলেন,' দল ডেকেছে তাই যাবো। আমাকে বলেছে আমি যাবো।' এ নিয়ে এই অবস্থায় জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।