Malda TMC Leader: ইংরেজবাজারের তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদকে (৩৬) খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মাইনুল শেখ সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠাল পুলিশ । ধৃত চারজনকেই পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর এই ঘটনায় দলের একাংশের বিরুদ্ধে মাইনুলকে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা করা এবং অন্যান্য বেআইনি কাজকর্মে মদত জোগানোর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ খুনের ঘটনার পর তীব্র অসন্তোষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলার মহিলা সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ। তিনি বলেন, 'আমি যখন তৃণমূলের ইংরেজবাজার ব্লকের সভাপতি ছিলাম তখন মাইনুল শেখকে কয়েকজন প্রভাব খাটিয়েই তৃণমূলে যোগদান করায়। ওতো কংগ্রেস দল করতো। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিল। অথচ জোর করে ওকে তৃণমূলে কয়েক মাস আগে যোগদান করানো হয়। একটা দাগি অপরাধীকে দল কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। মাইনুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছি'।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইংরেজবাজার থানার লক্ষীপুর এলাকায় একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে এসে নৃশংসভাবে খুন হন তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ । তার বাড়ি মানিকচক থানার গোপালপুর এলাকায়। পরবর্তীতে আবুল কালাম ইংরেজবাজারের মিল্কিতেও নতুন বাড়ি তৈরি করে। মাইনুলের সঙ্গে আবুল কালাম আজাদের জমি জায়গার ব্যবসা রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপরই শনিবার চারজনকে এই খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম মাইনুল শেখ, তার ভাই সাইদুল শেখ এবং তাদের দুই সহযোগী এমারত শেখ ও শহিদ শেখ। ধৃতদের এদিন মালদা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। ধৃত চারজনকেই পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্পূর্ণ মহিলা ঘটিত কারণেই খুন হতে হয়েছে আবুল কালাম আজাদকে। খুনের ঘটনার সময় তাঁর স্ত্রীও উপস্থিত ছিল। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রী শিউলি খাতুন'ও আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, আবুল কালাম আজাদের স্ত্রীর সঙ্গে ধৃত মাইনুলের ১৭ বছর বয়সী এক নাবালক ছেলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। আবুল কালাম আজাদের প্রথম পক্ষের স্ত্রী রয়েছে মানিকচক থানার গোপালপুরের বাড়িতে। দুই মাস আগে ইংরেজবাজার থানার লক্ষীপুর এলাকার ২২ বছর বয়সী এক কিশোরীকে বিয়ে করে আবুল কালাম আজাদ। অথচ ওই কিশোরীর সঙ্গে মাইনুলের ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওদের বিয়ে হওয়ার পরেও মাইনুলের ছেলের সঙ্গে সেই বিবাহিত সম্পর্ক অটুট থাকে। প্রেমিকাকে বিয়ে করে নেওয়ার প্রতিশোধ নিতেই মূলত আবুল কালাম আজাদকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়। ছেলের প্রতিশোধ নিতে দলবল নিয়ে সামিল হয় বাবা মাইনুল শেখ। পাশাপাশি আবুল কালামের একটি ৯ বিঘার জমির দখলদারি নিয়েও কিছুদিন ধরে মাইনুলের সঙ্গে গোলমাল চলছিল বলে দাবি মৃতের পরিবারের।
বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ লক্ষীপুরের অনুষ্ঠান বাড়িতেই যখন হইহুল্লোড় করতে সবাই ব্যস্ত। সেই সময় মদ্যপ অবস্থায় মাইনুল দলবল নিয়ে আবুল কালামকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাইনুল শেখ ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিল। পরবর্তীতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাইনুলকে টিকিট দেয় নি দল। সেই সময়ই মাইনুল কংগ্রেসের যোগদান করে। কাজীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , মৃত আবুল কালাম আজাদ মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিল। গোপালপুর এলাকার সম্পূর্ণ দলের দায়িত্বে ছিলেন এই আবুল কালাম । বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আবুল কালামের মৃত্যুতে যারা অপরাধী তাদের যাতে কঠোর শাস্তি হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, কোন এক সময় সে দলে যোগদান করেছিল ঠিকই । কিন্তু অন্যায়কে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না দল। এসব মানুষদের পাশে দল কখনই থাকবে না।