এক হুমায়ুনের বিদ্রোহ চলছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর্ব থেকে। এবার আরও এক হুমায়ুনের প্রস্তাব রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে। ইতিমধ্যেই দল এক হুমায়ুনকে শোকজ করেছে, সেই শোকজের কড়া জবাব দেবেন বলে ফের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রয়োজনে পৃথক দল গড়ার কথাও বলছেন। অন্য হুমায়ুন অবশ্য এখনও তাঁর প্রস্তাবে অনড়।
মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির। কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি তিন দলই করেছেন তিনি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর খুব একটা বিদ্রোহ চোখে পড়েনি। তবে শাওনী সিংহ রায়কে জেলা সভাপতি করার পর থেকে বেঁকে বসা শুরু করেন হুমায়ুন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে অন্তোষ থেকে নির্দল প্রার্থীদের হয়ে সওয়াল করা, শেষমেশ শোকজ পেয়ে নয়া দল গড়ার হুমকি বিদ্রোহী নেতার।
এদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বিধায়ক প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবির। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে তৎকালীন লালদুর্গ বর্ধমানে জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্ব সামলেছিলেন হুমায়ুন। তখন রায়না, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামে সিপিএমের বিরুদ্ধে নিয়মিত খুন ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করত তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১-এ তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েই মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন হুমায়ুন কবির। যদিও মমতা মন্ত্রিসভায় বেশি দিন স্থায়ী ছিলেন না হুমায়ুন। রাজ্য সরকার তাঁর প্রস্তাবে সিলমোহর দিক বা না দিক মুসলিম সমাজে হইচই পড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নীতির দিকেই আঙুল তুলেছেন প্রাক্তন আইপিএস।
আরও পড়ুন- এখনও সঙ্কটজনক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে বড় আপডেট হাসপাতালের!
২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিল রাজ্যে মুসলিম ভোটাররা ঘাসফুলকে সমর্থন করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মহিলাদের মাসে ৫০০ টাকা দেওয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। প্রকল্পের নাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এই প্রকল্পের আওতায় তপশিলি জাতি ও উপজাতি মহিলাদের ১০০০ টাকা করে মাসে দেয় রাজ্য। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিমদের একাংশ দাবি করতে শুরু করে মুসলিম মহিলাদেরও প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে দিতে হবে।
তাঁদের বক্তব্য ছিল, যাঁরা সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে এল তাঁরা পাবে ৫০০ টাকা, আর বিজেপিকে যাঁরা (তপসিলিদের বড় অংশ) ভোট দিল তাঁরা পাবে ১ হাজার টাকা! যদিও তাঁদের সেই কথা রাজ্য সরকারের কানে যায়নি। এবার বিধানসভাতেই হুমায়ুন কবির আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা তুলে মুসলিম মহিলাদের ১ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন- একদা মাওবাদী-গড়ে ‘উধাও’ দুই পুলিশকর্মী, আজও নিরন্তর অপেক্ষায় মায়েরা!
রাজনৈতিক মহলের মতে, একজনকে শোকজ করলেও দুই হুমায়ুনের ভূমিকায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। 'ইন্ডিয়া' জোট করে বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল 'একচেটিয়া' ক্ষমতা পেলেও মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে বেশ কিছু ক্ষেত্রে যে ভাঁটা পড়েছে তা প্রত্যক্ষ করেছে পর্যবেক্ষক মহল। দুই হুমায়ুন কাঁটা কীভাবে সামলায় তৃণমূল সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।