TMC-Mamata Banerjee: এর আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে 'কাটমানি' তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। গ্রামে গ্রামে 'কাটমানি'র ক্ষোভ-বিক্ষোভে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। সেই দৃশ্য দেখেছে বাংলা। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন সসম্মানে উতরে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার ফের একবার দলে যেন ঝাড়াই-পোছাই শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দুর্নীতি থেকে তোলাবাজি, সরকারি জমি দখল, জনসেবায় ফাঁকি-সহ নানা বেআইনি কান্ডের সংশোধনের ডাক দিয়েছেন তিনি। এবারের লক্ষ্য একটাই, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, এমনই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির আগের নির্বাচন থেকে ৬টি আসন কমে দাঁড়িয়েছে ১২-তে। কংগ্রেসের ১টি আসন কমে একটিতে গিয়ে ঠেকেছে। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বাংলায় বিজেপি ৯০টি বিধানসভায় এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস ও সিপিএম এগিয়ে রয়েছে ১২টি আসনে। তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ১৯২টি আসনে। এদিকে তৃণমূলের থেকে বেশি পুরসভা এলাকায় এগিয়ে বিজেপি, ৭৫টি। কংগ্রেস এগিয়ে ৩ পুর এলাকায়। অর্থাৎ শহরে তৃণমূলের 'টোটকা' অনেকটাই কম কাজ করেছে। এবার সামনের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসে। তাই আর কোনও সময় নষ্ট না করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথমে প্রশাসনিক বৈঠকে, তারপর পুরসভার কর্তা ও প্রশাসনের প্রকাশ্য বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী নিজেই একাধিক ইস্যু খাড়া করেছেন। তাঁর ঘণ্টা খানেকের বক্তব্যে যে কারও মনে হতে পারে বিরোধী দলের কোনও নেত্রী অভিযোগ করছেন। খুব সংক্ষেপে যে যে ইস্যু তিনি বলেছেন, সরকারি জমি দখল করা, পুরসভাগুলির কাজ না করা, অবাধে বেআইনি নির্মাণ, ভিন রাজ্যের লোককে অর্থের বিনিময়ে জায়গা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সব দুর্নীতিতে দল ও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ জড়িত বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন। এসবেই চলছে বেআইনিভাবে অর্থ রোজগারের কারবার। দাদাগিরি, তোলাবাজি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রায় 'যুদ্ধ' ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আনবেন বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুন- TMC Mla Oath Ceremony: তৃণমূলের সায়ন্তিকা, রায়াতদের শপথ নিতে হবে রাজভবনেই, কড়া চিঠি রাজ্যপালের
দলের একাংশের বক্তব্য, সংশোধন করতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে যে সাবোটেজ হবে না তারও কোনও গ্যারান্টি নেই বলে তাঁরা মনে করছেন। তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তব রূপ পাবে না? রাজনৈতিক মহলের ধারনা, কয়েকটি ক্ষেত্রে অ্যাকশন হবে। তোলাবাজি, দুর্নীতি যে তৃণমূল কংগ্রেস বরদাস্ত করবে না সেই বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। লোকসভায় ২৯ আসন পেলেও বিধানসভা নির্বাচনে নিয়ে এখনই অঙ্ক কষতে শুরু করেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন- Soumitra Khan: বড় বিপাকে সৌমিত্র খাঁ, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, "পুকুর ভরাট হচ্ছে। খাল বিক্রি হচ্ছে। জলাভূমি দখল করে বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ঠিকাদারি, প্রোমোটাররাজ চলছে।" লোকসভা নির্বাচনের পর আর এক দিনও সময় নষ্ট করতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাছাড়া এখন কিছুটা সময় পাবেন, কাটা-ছেঁড়া করে মেরামত করতে পারবেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, ছাত্র সাথী, সবুজ সাথী, দুয়ারে রেশন, দুয়ারে সরকার, ছাত্রদের মোবাইল একাধিক সামাজিক কর্মসূচির ফল মিলেছে ২০২১-এর বিধানসভা ও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে। তা সত্ত্বেও অধিকাংশ শহরে পিছিয়ে থাকা ও ১০০-র ওপর বিধানসভা কেন্দ্রে বিরেধীদের লিড নেওয়া দুশ্চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। কারণ, ফের নতুন সামাজিক প্রকল্প সামনে আনতে হবে। তার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন, পাশাপাশি সেই প্রকল্প কতটা নির্বাচনে ক্লিক করবে তারও নিশ্চয়তা নেই।
আরও পড়ুন- Cong-TMC: রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মোড়! কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দখলে গেল সমবায়
রাজনৈতিক মহলের মতে, স্বচ্ছ ইমেজের বাতাবরণ তৈরি করতে মরিয়া চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেত্রী।
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের টেক্কা দিতে এখনই ময়দানে নেমে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে জেলা সফরেও বেরিয়ে যেতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। তাছাড়া সামনে ২১ জুলাই শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান রয়েছে। সংগঠনের খোলনোলচে ব্যাপক বদল আনারও সম্ভাবনা রয়েছে। দলের যে মুখগুলো সাধারণ মানুষ পছন্দ করছে না, সেই মুখ পরিবর্তনের কৌশল নিতে পারে তৃণমূল। মোদ্দা কথা, সংশোধনের প্রধান উদ্দেশ্য যে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের কোনও সন্দেহ নেই।