TMC party office sets on fire: গাছ কাটা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বেঁধেছিল দ্বন্দ্ব। সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে আগুন জ্বলল তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যায় তৃণমূলের পার্টি অফিস। এমন ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানে গলসি ১ ব্লকের পুতনা-পুরষা এলাকায়। খবর পেয়ে গলসি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছায়। খবর দেওয়া হয় দমকলে। দমকল বাহিনী বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তারই মধ্যে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় পার্টি অফিসে থাকা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ অন্যান্য সমস্ত সরঞ্জাম। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
একের পর এক নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত থাকলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিরাম পড়েনি তৃণমূলে। তার প্রতিচ্ছবি মাঝে মধ্যেই ফুটে ওঠে গলসি ১ ব্লকে। তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি জাকির হোসেনের অনুগামীদের সঙ্গে বর্তমান ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের বিরোধ এখন সর্বজনবিদিত হয়ে দাড়িয়েছে। এলাকায় থাকা গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধে মঙ্গলবার ঘৃতাহুতি পড়ে। গাছ কাটার জন্য এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীকে দায়ী করে গলসি ১ ব্লকের বিডিও, বন দফতর-সহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দায়ের করেন।
কেন অভিযোগ জানানো হয়েছে তা নিয়ে ব্লক তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি প্রাক্তন সভাপতির অনুগামীরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে রাত বাড়লে সেই দ্বন্দ্ব ভয়ংকর রূপ নেয়। বর্তমান ব্লক সভাপতির অনুগামী হিসাবে পরিচিত গলসির পোতনা- পুরষা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ গোলাম মোর্তাজা ওরফে লালনের পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকা পার্টি অফিসে আগুন জ্বলতে শুরু করা মাত্রই আগুন ভয়ংকর রূপ নিয়ে নেয়। তা দেখে আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে সক্ষম হলে স্বস্তি ফেরে বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন অভিষেকের হয়ে লাগাতার ব্যাট ধরার 'মাশুল'! হুমায়ুন কবীরকে শোকজ তৃণমূলের
তৃণমূলের পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা গলসি ১ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি জাকির হোসেনের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যদিও এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন জাকির হোসেন। তিনি দাবি করেন, 'যাঁরা আমাদের দিকে আঙুল তুলছে তাঁরা নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়ে আমার লোকজনকে ফাঁসাতে চাইছে।' শুধু তাই নয়, আগুন লাগা ঘরটিকে তৃণমূলের পার্টি অফিস বলেও মানতে চাননি জাকির হোসেন। যদিও গোলাম মোর্তাজা তাঁর অভিযোগে বলেন,“বিনা অনুমতিতে পঞ্চায়েতের গাছ কেটে নেয় জাকির হোসেনের এক অনূগামী। তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করি। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বন দফতরেও অভিযোগ করা হয়। বন দফতরে অভিযোগ করার জন্য জাকির হোসেনের অনুগামীরা আমাদের পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।“
ব্লক তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি জনার্দন চটোপাধ্যার অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন আগুন যেখানে লাগানো হয়েছে সেটি তৃণমূলেরই পার্টি অফিস। গলসিতে তৃণমূলকে জয়যুক্ত করার জন্য যাঁরা দলের দুর্দিন থেকে লড়াই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আসছে তাঁরই ওই পার্টি অফিস টিকে ব্যবহার করত। পার্টি অফিসটিতে কারা আগুন লাগাল তা নিয়ে সরাসরি কারওর নাম মুখে আনেননি জনার্দন বাবু। তবে ঘুরিয়ে তিনি বলেন, গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ হওয়াতেই এই ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত রিপোর্ট উচ্চ নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জনার্দন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। আর জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ’দলীয় স্তরে ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। যাঁরা তৃণমূলের পার্টি অফিসে আগুন লাগায়েছে তাঁদের চিহ্নিত করে দলগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন 'উঙ্গলি ক্যায়সা হ্যায়?', সংসদে কল্যাণকে দেখেই প্রশ্ন মোদীর
একই রাতে গলসি ২ ব্লকের মসজিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলান তেতুলমুড়ি গ্রামের আবার তৃণমূল সদস্যা আজমিরা বেগমের বাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই হামলার ঘটনা নিয়ে আজমিরা বেগম তৃণমূলেরই অপর গোষ্ঠীর কয়েকজনের বিরুদ্ধে বুধবার গলসি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ তারও তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তৃণমূলের পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে আসতেই তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা ঘটানো তৃণমূলের পক্ষেই সম্ভব। নীতি আদর্শহীন দলের নেতা ও কর্মীরা গাছ চুরি করবে, নিজেদের পার্টি অফিসে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দেবে এটাই স্বাভাবিক“।