'Padwoman' In West Bengal: ওদলাবাড়ির প্রীতি মিনজ (২৭), আদিবাসী এই যুবতী হয়ে উঠেছেন সমাজের হাজার হাজার মহিলার অনুপ্রেরণা। চা বাগানের মহিলাদের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিতে এবং তাদর আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে তিনি বদ্ধপরিকর। ডুয়ার্সের প্রায় ২০টির বেশি চা-বাগানের মহিলাদের বিনামূল্যে তিনি বিলি করে চলেছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন। বাংলার এই 'প্যাড ও ম্যান'-কে নারী দিবসের কুর্নিশ।
নারী মানেই শক্তি! নারীদের সমাজে অধিকার এবং তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রতি স্বীকৃতি জানাতে প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীকে দেবীর রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং আজকের নারীরা গৃহস্থালির দায়িত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনকী দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখছেন। আজকের বিশেষ দিনে, সেই সকল নারীদের সালাম যারা তাদের সাহস, নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে সমাজে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রীতি মিনজ।
প্রীতি নিজে একজন মেকআপ আর্টিস্ট। পাশাপাশি তিনি একজন পেশাদার নৃত্যশিল্পী এবং নাচের শিক্ষিকা। তাঁর বাবা বাবলু মিনজ ড্রাইভারি করেন। মা গৃহবধূ। পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি তেমন ভালো না হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ মেলেনি। সামান্য আয়ের মধ্যেও প্রিতী স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে তা চা বাগানের মহিলাদের বিনামূল্যে বিতরণ করেন।
প্রীতি জানিয়েছেন, "চা বাগানের মহিলারা পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন নয়। এছাড়াও, আমাদের সমাজের মানুষের মধ্যে মহিলাদের পিরিয়ডস নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। মেয়েরা এই বিষয়ে কথা বলতেও লজ্জা পান। আমি মায়েদের এবং বোনদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন করার দায়িত্ব নিয়েছি। এই কারণেই আমি এক চা বাগান থেকে অন্য চা বাগানে প্রতিনিয়ত দৌড়ে চলেছি, তাদের পাশে দাঁড়াতে,"। পাশাপাশি প্রীতি চা বাগানের মেয়েদের আত্মরক্ষায় বিশেষ প্রশিক্ষণও দেন। এছাড়াও মেয়েদেরও নাচেও রিতিমত পারদর্শী করে তুলছেন প্রীতি।
মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ প্রসঙ্গে প্রীতি জানিয়েছেন, "আমি সাত থেকে আট বছর আগে নারী পাচার ও শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেছিলাম একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে। সেই সময়ে, টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস থেকে দুই গবেষক আমাদের সাথে যোগ দেন। আমরা ২১টি চা বাগানে কাজ শুরু করি। আমাদের মূল কাজ ছিল কতজন মহিলা বা শিশু চা বাগানে পাচারের শিকার হয় এবং তারা কী ধরণের সমস্যায় পড়েন। তাঁদের সাথে কথা বলতে গিয়ে, আমি বুঝতে পারলাম তাঁরা স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কিছু জানেন না। তখনই আমি ঠিক করলাম এই বিষয়ের উপর কাজ করা দরকার,"।
"যখন আমি কাজ শুরু করলাম, কেউ আমার কথা শুনতে চাননি। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আমি শুধু বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেব। তারপর আমি বুঝতে পারলাম যে শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া যথেষ্ট নয় এবং সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।" তিনি আরও যোগ করেন "মানুষ এখানে আমাকে 'প্যাডওম্যান' বলে ডাকেন। আগে মহিলারা আমাকে দেখে পালিয়ে যেত কিন্তু এখন আমি আসলে মানুষ আমার আসেন। আমার কথা শোনেন। এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন," নাগাড়ে বলে চললেন প্রীতি।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা অসীম হালদার প্রীতির এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, "প্রীতি চা বাগানের মেয়েদের এবং মহিলাদের পিরিয়ডসের বিষয়ে সচেতন করছেন। পাশাপাশি তাদের বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনও বিলি করছেন।খুব ভালো উদ্যোগ।"