Women's Day Special: হেরে যাওয়ার পাত্রী তিনি নন। অল্প বয়সে ক্যানসারে বাবাকে হারিয়েছেন। পড়াশুনার ইচ্ছা থাকলেও সংসারের অভাবের কারণে সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। অবশেষে তাঁর ইস্পাতকঠিন লড়াইয়ের কাহিনী আজ সমাজের হাজার হাজার মহিলার অনুপ্রেরণা। তিনি সরস্বতী দও। বাড়ি পূর্ব বর্ধমানে। সংসারের হাল ধরতে সাইকেল করেই বেড়িয়ে পড়েন হাতে তৈরি ঘুগনী নিয়ে। কথাতেই আছে পরিশ্রম করলে ফল মিলতে বাধ্য। দীর্ঘ লড়াই করে আজ সরস্বতী নিজের একটি স্টল দিয়েছেন। সংসারের হাল ধরেছেন। নারী দিবসে সমাজের সকল মহিলার প্রতি তাঁর বার্তা, 'সৎপথে কোন কাজই ছোট না, শুধু সাহস করে ঘরের বাইরে বেরোতে হবে। কে কী ভাবছে, বলছে সেদিকে কান না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে তাতে সাফল্য আসতে বাধ্য'।
নারীতে'ই লুকিয়ে শক্তির মাহাত্ম্য....! ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীকে দেবীর রূপে বিবেচনা করা হয় এবং আজকের নারীরা গৃহস্থালির দায়িত্ব থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে এমনকী দেশের অগ্রগতিতে তাঁদের অবদান রাখছেন। এই বিশেষ দিনে, সেই সকল মহিলাদের বিশেষ সালাম যারা তাদের সাহস, নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সমাজে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন। নারী দিবসে এমনই এক অপ্রতিরোধ্য নারীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী তাক লাগাতে বাধ্য।
ছোট থেকেই পড়াশুনা ভালবাসতেন তিনি। কিন্তু বাবার অকাল মৃত্যু, সাংসারিক অনটনের কারণে বেশিদূর লেখা পড়া হয়নি। এরপর আর পাঁচটা মেয়ের মতই একদিন বিয়ে হয়। বিয়ের পর সবকিছু দিব্যি ঠিকঠাক চলছিল, হঠাৎ করেই ছন্দপতন। অসুস্থ হয়ে পড়েন স্বামী। বাধ্য হয়েই সংসারের হাল ধরেন তিনি। কঠিন বাস্তবকে ছোট বেলা থেকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাই জীবন যুদ্ধের এই পর্বে খুব বেশি ধাক্কা খেতে হয়নি তাকে।
রান্নাবান্না বরাবরই ভালবাসতেন তিনি। অবশেষে সেই পথেই সাহস করে এগিয়ে যান। সাইকেল নিয়ে শুরু হয় ঘুগনি বিক্রি। দিন কয়েকের মধ্যে তা সকলের মুখে মুখে প্রচার হয়ে যায়। এরপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বেড়েছে আইটেম। এখন ঘুগনি, আলুরদম, ডিম সিদ্ধ সহ নানান মুখরোচক খাবার তিনি তার স্টলে বিক্রি করেন। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে সব আইটেম বিক্রিও হয়ে যায়।
২০২২ সাল থেকে বর্ধমান শহরের স্মার্ট বাজারের কাছেই পাকাপাকি ভাবে ব্যবসা শুরু করেন। ছেলে বিশেষ ভাবে সক্ষম। গত বছর মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ-য়ের বেশি নম্বর পেয়েছেন। মেয়ে স্নাতক শেষ করে বিউটিশিয়ান কোর্স করে টুকটাক রোজকার করেন।
সরস্বতী দেবী জানান, “রান্নাবান্না আমার বরাবরই ভালোলাার একটা বিষয় ছিল।আমার এক বান্ধবী নাট্য জগতের সঙ্গে যুক্ত।এক দিন আমার বান্ধবী আমাকে বলেন যে আমাদের অনুষ্ঠানে হোক, টিফিনটা তুই পাঠাবি। সেই থেকে বিষয়টা আমার মাথায় আসে। একদিন আমি কিছুটা ঘুগনি ও আলুর দম তৈরি করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। এখন ব্যবসা কিছুটা বেড়েছে আগের থেকে। সাইকেলের বদলে একটা স্টলে এখন যাবতীয় রান্না করা আইটেম বিক্রি করি। মাঝে মধ্যে আমার ছেলেও আমার সঙ্গে স্টলে হাত লাগায়। সকলের আর্শীবাদ নিয়ে একটু একটু করে পথ এগিয়ে চলছি। মানুষের ভালবাস আমার অনুপ্রেরণা"।