/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/02/modi-trump-2025-08-02-15-16-19.jpg)
Narendra Modi-Donald Trump: নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
Trump Tariff on India: ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ আমেরিকার, কোন কোন খাতে প্রভাব সবচেয়ে বেশি?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের করেছেন। এর আগে ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (২৭ আগস্ট)। এবার সেই শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি ব্রাজিলের উপরও সর্বোচ্চ শুল্ক বসানো হয়েছে। মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই শুল্ক ২৭ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন- বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের পথে ভয়াবহ ভূমিধ্বসে মৃত ৩০, নাগাড়ে বৃষ্টিতে বিরাট ক্ষতি জম্মু কাশ্মীর, হিমাচলেও
নতুন শুল্কের কারণে ভারতের একাধিক রপ্তানি খাত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। টেক্সটাইল খাত সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হতে পারে বলেই অনুমান বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে ভারত বছরে প্রায় ১০.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেক্সটাইল পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। এর বাইরে হীরা ও গহনার প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিও চাপের মুখে পড়বে। এছাড়াও যন্ত্রপাতি, কৃষি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ধাতু, কার্বন কেমিক্যাল ও হস্তশিল্প শিল্পেও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
রপ্তানিতে বড় ধাক্কা
তিরুপুর, নয়ডা, সুরাট এবং বিশাখাপত্তনমের মতো শহর থেকে প্রচুর পরিমাণে পণ্য রপ্তানি হয় আমেরিকায়। নতুন শুল্ক আরোপের ফলে এই রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা কিছু খাতে রপ্তানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
মোদীর প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প এর আগে ৭ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছিলেন। পরে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা করেন। তবে আলোচনার জন্য ২১ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার (২৫ আগস্ট) জানিয়েছেন, কৃষক, ক্ষুদ্র শিল্পের স্বার্থে কোন রকমের আপস করা হবে না। তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের উপর চাপ বাড়তে পারে, তবে ভারত দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখবে।” শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের মন্ত্রক অন্যান্য দেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনার নতুন উপায় খুঁজছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা বিকল্প বাজারের দিকেও নজর দিচ্ছি।”
আরও পড়ুন-ধনুকভাঙা পণেই দারুণ বিজয়! হতদরিদ্র পরিবারের রমেনের 'সোনার কীর্তি'কে কুর্ণিশ
কোন খাত শুল্কমুক্ত থাকছে
ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিক্স এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে এই শুল্ক কার্যকর হবে না। তবে কৃষি, দুগ্ধ এবং মৎস্য খাতকে শুল্কমুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের আমেরিকায় রপ্তানির প্রায় ৬৬ শতাংশ (৬০.২ বিলিয়ন ডলার) এই শুল্ক বৃদ্ধির আওতায় আসবে। এর মধ্যে পোশাক, টেক্সটাইল, রত্ন-গহনা, চিংড়ি, কার্পেট ও আসবাবপত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরদিকে, ভারতের ৩০ শতাংশ (২৭.৬ বিলিয়ন ডলার) রপ্তানি পণ্য শুল্কমুক্ত থাকবে এবং মাত্র ৪ শতাংশ (৩.৪ বিলিয়ন ডলার) রপ্তানি ২৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় আসবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলার ক্ষেত্রে চামড়া, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সামুদ্রিক পণ্যের উপর নতুন শুল্কের প্রভাব পড়বে। উৎসব মরসুমের আগে এই খাতগুলিতে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বাণিজ্য মহলের অনুমান, অন্তত ৪৫,০০০ কোটি টাকার ভারতীয় রপ্তানি প্রভাবিত হতে পারে, যেখানে বাংলাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি হবে ।
সবচেয়ে বড় আঘাত আসতে চলেছে —
- বস্ত্র শিল্পে
- রত্ন ও গহনা শিল্পে
- চিংড়ি রফতানিতে
- ফার্নিচার, চামড়াজাত পণ্য ও জুতো-চপ্পলে
- অর্গানিক কেমিক্যাল ও যন্ত্রপাতি রফতানিতে
এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার বার্তা দিলেও ভারত জানিয়েছে, শিল্প মহলের সঙ্গে বৈঠক চলছে। পাশাপাশি জিএসটি কাঠামোতেও পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ানো যায়। বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও টেক্সটাইল খাতে অতিরিক্ত সাহায্যের কথাও ভাবা হচ্ছে।