Uttar Dinajpur News: কথায় বলে বাস্তব আর রুপোলি পর্দার কাহিনী এক হয় না। কিন্তু চোপড়ায় শনিবার যে ঘটনা ঘটল, তা যেন সিনেমাকেও হার মানায়। ‘সনম তেরি কসম’ সিনেমাটার কথা মনে আছে? সেখানে বাড়ির অমতে এক তরুণের প্রেমে পড়েছিল শান্তশিষ্ট লাইব্রেরিয়ান সরস্বতী। তাঁকে বিয়েও করেছিল সে। মেয়ের এই কাজ মেনে নিতে না পেরে সরস্বতীর বাবা জয়রাম নিজের হাতে জীবন্ত মেয়ের শ্রাদ্ধের আয়োজন করেছিলেন। কারণ পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করার পর নিজের মেয়ে তাঁর কাছে এমনিতেই যেন মৃত।
ঠিক সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল চোপড়া থানার সোনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলেন এক তরুণী। সেই বিয়ে মেনে নিতে না পেরে রীতিমতো আয়োজন করে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করলেন বাড়ির লোকজন।
পছন্দের পুরুষের হাত ধরে সংসার পাততে চেয়েছিলেন সেই তরুণী। সেজন্য বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে সেখানেই শেষ নয়। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মেয়ে পরিবারের অমতে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করায় তাঁরা গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, মেয়ে পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে। সেই তরুণীর আত্মীয়-পরিজনও নাকি এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারছেন না। তাই মেয়ের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতেই এই শ্রাদ্ধের আয়োজন।
আরও পড়ুন উৎসবেও অশান্ত মালদা, জমি বিবাদের জেরে তুমুল সংঘর্ষ, পঞ্চায়েত সচিবের মৃত্যুতে ধুন্ধুমার
তরুণী কলেজের পড়ুয়া। তাঁর বাবা কৃষিজীবী। আর তাঁর প্রেমিক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। কলেজের পড়াশোনার পাঠ সাঙ্গ করেছেন তিনি। খুব বেশিদিন হয়নি। চলতি মাসের ৮ তারিখের কথা। প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়েন সেই তরুণী। তারপর ৯ মার্চ চোপড়া থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করে মেয়েটির পরিবার। পুলিশ দুজনকে আটক করে নিয়ে আসে রায়গঞ্জ থেকে। মামলা আদালতে ওঠে। কিন্তু ধোপে টেকেনি। কারণ আদালতে মেয়েটি পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে তিনি সাবালিকা। আর স্বেচ্ছায় সেই তরুণের সঙ্গে গিয়েছেন। এদিকে, ছেলেটির বাড়ি থেকে কিন্তু প্রাথমিক আপত্তির পর সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।
আরও পড়ুন টুপির বাহারে বাজার মাত, বর্ধমানে ফেজ টুপি ক্রেজ আরব দুনিয়াতেও
তরুণীর বাড়িতে ঠিক উলটো চিত্র। মেয়ের সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে এদিন রীতিমতো পুরোহিত ডেকে নিয়ম মেনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গ্রামবাসীর পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়। এদিন প্রায় ১০০ জন লোক দিব্যি পাত পেড়ে খেয়েছেন সেই জীবন্ত তরুণীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে।
প্রতিবেশীরা, যাঁরা নিমন্ত্রিত ছিলেন, তাঁরাও মেয়েটির সম্পর্ক মানছেন না। বলছেন, এটা নাকি একটা শিক্ষণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে গ্রামের উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের কাছে। চোপড়ার ঘটনায় সেই সিনেমার মতো হ্যাপি এন্ডিং হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর এখানেই বোধহয় বাস্তব জীবন আর রুপোলি পর্দা আলাদা হয়ে যায়।