কেন কংগ্রেসের প্রচারে নেই হাসিন জাহান?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মঙ্গলবার সকালে ফোনে হাসিনের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য, "কোনওদিন কংগ্রেসে জয়েন করি নি। ঠকিয়ে আমাকে মুম্বইতে নিয়ে গিয়ে এরকমটা করা হয়েছে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মঙ্গলবার সকালে ফোনে হাসিনের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য, "কোনওদিন কংগ্রেসে জয়েন করি নি। ঠকিয়ে আমাকে মুম্বইতে নিয়ে গিয়ে এরকমটা করা হয়েছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
কেন কংগ্রেসের প্রচারে নেই হাসিন জাহান?

সমস্ত প্রতিপক্ষ শিবিরে তারকার ছয়লাপ। তৃণমূল কংগ্রেসে মিমি চক্রবর্তী-নুসরত জাহান, বিজেপিতে লকেট চট্টোপাধ্যায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়! বঙ্গ কংগ্রেসেও 'গ্ল্যামারাস ক্যাম্পেনার' হতেই পারতেন তিনি। অধীর চৌধুরী, ডালুবাবুদের নির্বাচনী প্রচারে আলো ছড়াতেই পারতেন। সেই সম্ভাবনায় আপাতত ইতি। কংগ্রেসের প্রচারে থাকছেনই না ক্রিকেট তারকা মহম্মদ শামির স্ত্রী হাসিন জাহান। গত বছরেই যিনি নাকি রীতিমতো ঘটা করে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে। হলো কী হাসিন জাহানের? রাজনীতির বাইশ গজে কেন অন্তরালে তিনি?

Advertisment

ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বাংলাকে মঙ্গলবার ফোনে হাসিনের বিস্ফোরক জবাব, "কোনওদিন কংগ্রেসে জয়েন করি নি। ঠকিয়ে আমাকে মুম্বইতে নিয়ে গিয়ে এরকমটা করা হয়েছে।" প্রথমবার মিডিয়ায় মুখ খুলে এই মন্তব্য করলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "এক ভদ্রলোক আমাকে টেলিভিশন সিরিয়ালে লিড চরিত্রে নামার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরে কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পরে মুম্বইতে যোগাযোগ করি। এক পাঁচতারা হোটেলে সাক্ষাৎ হয়। ভুল বুঝিয়ে ভুয়ো লুক টেস্ট-ও করা হয়। সেখানেই হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, রাজনীতিতে যোগ দিতে আমি ইচ্ছুক কিনা। সরাসরি তা খারিজ করে দিই।"

hasin jahan mohd shami congress হাসিনের অভিযোগ, টিভি সিরিয়ালের নাম করে মুম্বই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে

প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হলেও সেই ভদ্রলোক (হাসিন কোনভাবেই নাম বলতে রাজি হলেন না) নাকি হাসিনকে সহজে অব্যাহতি দিতে রাজি ছিলেন না। এমনকি দ্বিতীয়বার সাক্ষাতের সময়ে স্ত্রী-র সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দেন হাসিনের। ক্রুদ্ধ হাসিন বলেন, "হঠাৎই উনি টিভি সিরিয়ালের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে পার্টি-পলিটিক্সের কথা শুরু করে দেন আমার সঙ্গে। আমাকে আইনি লড়াই সহ সমস্ত বিপদে-আপদে সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পাশে থাকার বার্তা পেয়ে কিছুটা বিভ্রান্তই হয়ে গিয়েছিলাম। বলে দিই, তোমরা যদি সাপোর্ট করো, তাহলে তো ভালই। পাশাপাশি আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়, পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নামতে হবে না।"

Advertisment

আরও পড়ুন: পণ নিয়ে হেনস্থা, যৌন নির্যাতন: মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে চার্জশিট

প্রসঙ্গত, রাতারাতি শামির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ তুলে গোটা দেশে আলোচনার শিরোনামে আসেন হাসিন। বর্তমানে স্বামী-বিচ্ছিন্না হাসিন বলছেন, কন্যা আইয়ারাকে নিয়েই তাঁর যত স্বপ্ন। কিন্তু এর মধ্যেই গত অক্টোবর মাসে ফের সর্বভারতীয় মিডিয়ায় আসেন কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার খবরে।

হাসিনের কথায়, কংগ্রেসের মুম্বইয়ের পার্টি অফিসে যাত্রার পরবর্তী ঘটনা আরও রোমহর্ষক। বলেই দেন, "আসলে আমার নাম ব্যবহার করে নিজের দলের মধ্যেই প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে চাইছিলেন কংগ্রেসের সেই ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী।" তাঁর সংযোজন, "আমাকে বলা হয়, মিডিয়াও হাজির থাকবে। প্রথম থেকেই মিডিয়ার উপস্থিতি পছন্দ ছিল না আমার। যাই হোক, সেই অফিসে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে ছবি-টবি তোলা হয়।"


এখানেই ইতি নয়। বরং আরও ট্যুইস্ট রয়েছে। কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে হাসিনের অভিযোগের ঘটনায় নাম জুড়ে যাচ্ছে মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের অন্যতম নেতা সঞ্জয় নিরুপমেরও। কীভাবে? হাসিনই বলছেন, "কংগ্রেসের পার্টি অফিস-এপিসোডের পরে আমাকে সঞ্জয় নিরুপমের অফিসে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমি মোটেও রাজি ছিলাম না। তবে অনেক অনুরোধের পরে ওঁর অফিসে যাই। সেখানে গিয়েই জানতে পারি, সঞ্জয় নিরুপম পুরো বিষয়টি জানতেনই না। ওঁর অফিসেই আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত কেউ টুইটারে পোস্ট করে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জানান, হাসিন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে।"

আরও পড়ুন: বোর্ডের শর্ত মেনেই বাংলার হয়ে খেলতে পারবেন শামি

রাজ্যসভা ও লোকসভার মুম্বইয়ের দু'বারের তারকা সাংসদকে অবশ্য মোটেই ক্লিনচিট দেননি হাসিন। সাফ জানিয়ে দেন, "সঞ্জয় নিরুপম তাঁর ব্যক্তিগত আপ্ত সহায়কের মাধ্যমে আমার সঙ্গে বৈঠক ঠিক করেন তাঁর বাড়িতে। সেখানে সাক্ষাতের সময়েই উনি আমাকে স্পষ্ট বলে দেন, 'আপনি পার্টি করতে চাইলে সমস্যা নেই। তবে আপনার ব্যক্তিগত ঝামেলায় আমরা সাহায্য করতে পারব না।' পুরো অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়ে নেন।"

এখানেই প্রশ্ন হাসিনের, "অন্যায়-অবিচার দেখলেও কোনও প্রতিবাদ করবেন না ওঁরা, তাহলে কেন রাজনীতিতে যোগ দেব?" ভুল বোঝাবুঝির বহরে "ক্লান্ত" হাসিন ভোট ময়দানে থাকার বদলে আপাতত তাই স্বেচ্ছা নির্বাসনই বেছে নিয়েছেন। লালমোহনবাবু থাকলে নির্ঘাত বলতেন, 'মুম্বই ম্যাসাকার'।

CONGRESS bengal