জামাইষষ্ঠীর দিন শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন। একটা ফোন এল। যে ফোনই কেড়ে নিল প্রদীপ মণ্ডলের তরতাজা প্রাণ। সন্দেশখালি এলাকায় শনিবার যে হিংসার ছবি সামনে এসেছে, তাতে মৃত্যু হয়েছে বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত প্রদীপ মণ্ডলের। স্বামীর মৃত্যুতে স্বভাবতই শোকে বিহ্বল স্ত্রী পদ্মা মণ্ডল। পদ্মাই জানালেন সেই ফোনের কথা। কে ফোন করেছিলেন? কেনই বা ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে এসেছিলেন প্রদীপ? কাতর গলায় পদ্মা বললেন, ফোনে বলা হয় দোকানে অনেক খদ্দের এসেছে, জামাকাপড় কিনতে চান। আর তা শুনেই শ্বশুরবাড়ি থেকে তৎক্ষণাৎ বাড়ির দিকে রওনা দেন প্রদীপ। এলাকায় প্রদীপের পোশাকের দোকান রয়েছে। পদ্মার মতে, ওই ফোন আসলে ফাঁদ ছিল। তিনি বললেন, ‘‘স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আমার স্বামীর উপর হামলা চালাতেই এই ফাঁদ পেতেছিল। যেই না ও ফিরে এল, ওর উপর চড়াও হল ওরা। দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। মোটরবাইকে করে এসে হামলা চালানো হয়। বাড়ি থেকে আমার স্বামী বেরোতেই ওকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। মাঠে ধাওয়া করে ওকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই গুলি করে মারা হয়’’।
আরও পড়ুন: Kolkata News Live: রক্তাক্ত সন্দেশখালি, আজ বসিরহাট বনধ বিজেপির
কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন প্রদীপের ছোট ভাই সন্দীপ মণ্ডল। সন্দীপ জানিয়েছেন,শনিবার দুপুর ৩টে নাগাদ নলকোরা জুনিয়র বেসিক প্রাইমারি স্কুলে তৃণমূলের বুথ স্তরের বৈঠক হয়েছিল। এরপরই এলাকায় দলের পতাকা লাগাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। তা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। সন্দীপ বলেন, ‘‘আমরা বিজেপি করি বলে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই আমাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। ৫৬নং বুথে বিজেপি প্রায় ১৫০ ভোটে লিড পেয়েছে। এই রাগে ওরা হামলা চালিয়েছে। গোটা ঘটনা পুলিশের সামনেই হয়েছে’’। জামাইষষ্ঠীতে বনগাঁয় শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন সন্দীপ। তাই কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, জামাইষষ্ঠীর দিনই তাঁদের টার্গেট করা হয়েছিল, যেহেতু এলাকায় অধিকাংশ জনই ওইদিন শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন, তাই এলাকা অনেকটাই ফাঁকা ছিল।
প্রদীপের পাশাপাশি সন্দেশখালিতে হিংসার বলি হয়েছেন ২৩ বছর বয়সী সুকান্ত মণ্ডল। দাদাকে হারিয়ে শোকে কাতর বোন বিভা মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘বাড়িতে দাদাই একমাত্র রোজগার করত। যখন তৃণমূলের লোকেরা গুলি চালাতে শুরু করে, তখন দাদা অন্যদের বাঁচাতে গিয়েছিল। দুষ্কৃতীদের একটাই লক্ষ্য ছিল, এলাকাবাসীদের উপর হামলা চালানো। পরে মাঠে আমার দাদার দেহ দেখতে পাই। আমরা বিচার চাই, অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক’’।
আরও পড়ুন: আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
সেদিনের ঘটনায় ৩৪ বছর বয়সী দেবদাস মণ্ডল নিখোঁজ বলে দাবি। দেবদাসের স্ত্রী সুপ্রিয়া মণ্ডল বলেন, ‘‘ওকে অনেক করে বলেছিলাম, যে বাড়ির বাইরে যেও না, গুলি চলছে। কিন্তু ও পরে বেরিয়েছিল। পরে আমরা দেখলাম, মাঠে ওর উপরও আক্রমণ করা হচ্ছে। ওকে বস্তায় পোরা হয়েছিল’’। দেবদাসের বাবা বাসুদেব মণ্ডলের উপরও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
অন্যদিকে, সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছেন তৃণমূল কর্মী কায়েম মোল্লা। তাঁর বাবা বলেন, ‘‘বাঙ্গিপাড়া এলাকায় ও দলীয় পতাকা লাগিয়েছিল...পরে ওর উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়’’। ৫ মাস আগেই বিয়ে হয়েছিল কায়েমের। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন কায়েমের স্ত্রী জেবুন্নিসা।
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রবিবার নিহত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে যান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্র, তাপস রায়, সুজিত বসুরা। অন্যদিকে, নিহত দুই বিজেপি কর্মীর সৎকার নিয়ে রবিবার চরম টানাপোড়েন চলে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বসিরহাটে বনধ ডেকেছে বিজেপি। পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে কালা দিবসের ডাক দিয়েছে পদ্মবাহিনী। এদিকে, এ ঘটনায় রাজ্যকে অ্যাডবাইজরি নোট পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। পাল্টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য।
Read the full story in English