প্রাথমিক, এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। ইতিমধ্যেই প্রাথমিকে ২৬৯ জন ছাড়াও চাকরি গিয়েছে এসএসসি-র মাধ্যমে বেনিয়মে নিয়োগ পাওয়া অনেক শিক্ষকের। মাইনের টাকাও ফেরত দিতে হচ্ছে তাঁদের। শেষমেশ অভিযোগ উঠল নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেও। আবার সিপিএম নেতার মেয়ের নাম বাতিলের তালিকায় থাকায় চমকে গিয়েছে রাজনৈতিক মহল। এ কেমন যোগ! মোদ্দা কথা, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির যেটুকু সামনে এসেছে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এখনও রাঘব-বোয়ালরা যে আড়ালেই আছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই অভিজ্ঞ মহলের।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, নন্দীগ্রামের দুই তৃণমূল নেতা আবু সুফিয়ান ও আবু তাহেরের পরিবারের সদস্যরা বেনিয়ম করে প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছেন। যদিও সুফিয়ানের দাবি, তাঁর মেয়েরা কেউ প্রাথমিকে চাকরি করেন না। তবে অন্য চাকরি করেন বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে আবু তাহের জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বোন নিয়ম মেনেই চাকরি পেয়েছেন।
যদিও এই অভিযোগ বা পাল্টা দাবি কোনটা ঠিক তা নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে। কিন্তু এটা ঠিক শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগের দুর্নীতি আদালতের রায়ে আপাতত প্রমাণিত। অভিজ্ঞ মহলের মতে, রাজনীতির দুষ্টু চক্র যে এর পিছনে সক্রিয় ছিল তা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠার জায়গা নেই।
সিপিএম নেতার মেয়ে এই আমলেও দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে বলে চর্চা চলছে, তবে বাকিরা যারা চাকরি পেয়েছে তাদের খবর কেউ রেখেছে? জানা গিয়েছে, বর্ধমানের কালনার একটি পিটিটিআই ইনস্টিউটের মালিকের একই পরিবারের তিন জনের চাকরি গিয়েছে। ওই ২৬৯ জনের তালিকায় নাম রয়েছে ওই সংস্থার কর্তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও শ্যালিকার স্বামীর।
আরও পড়ুন- কাজ খুইয়ে হাঁড়ির হাল সংসারের, কিডনি বিক্রির ‘বিজ্ঞাপন’ যুবকের
কোন জাদু বলে এভাবে একই পরিবারের তিন সদস্য চাকরি পেয়েছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের কোন বড় কর্তা ঘন ঘন কালনা যেতেন? কার কাছে উঠতেন? কার সেবা নিতেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কার মাধ্যমেই বা তাঁর কালনার এই যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল এসব জানতে উদগ্রীব তদন্তকারীরা।
ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির ১০টি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বাগদার 'রঞ্জন' তথা চন্দন মণ্ডল এসএসসি দুর্নীতিতে জড়িত বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ আনেন। এই কারণে আদালতে হাজিরাও দেন উপেন বিশ্বাস। তাঁর মতাতমত তিনি ব্যক্তও করেছেন।
আরও পড়ুন- হতাশাই কাল হল, বিক্ষোভে শামিল হয়েও আত্মঘাতী উচ্চমাধ্যমিকে অনুত্তীর্ণ ছাত্রী
কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে একেবারে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রামের চন্দনের যদি এমন 'কানেকশন' থাকে তাহলে কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় কত 'রঞ্জন' থাকতে পারে তা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই 'রঞ্জন'-দের খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই 'রঞ্জন'-দের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।