Chandannagar Jagadhatri Puja 2024: দেবীবরণ সাধারণত মহিলারাই করেন। কিন্তু এখানে ঠিক তার উল্টোটা হয়। ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলার প্রসিদ্ধ জগদ্ধাত্রী পুজোয় রয়েছে বড় চমক। প্রচলিত আদরের নাম বুড়িমা। কথিত আছে এই মায়ের কাছে মানত করলে ফল হাতেনাতে মেলে। অদ্ভুত এক নিয়ম আছে এই পুজোতে। দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে মাকে বরণ করেন পুরুষেরা। তবে তাঁরা বরণের আগে মহিলাদের মতো শাড়ি পরেন।
কেউ কেউ শাঁখা, আলতাও পড়েন। বরণডালা প্রস্তুত করে দেন মহিলারাই। কেউ বাজান শঙ্খ, কেউ দেন উলুধ্বনি। হাতে কারো গঙ্গাজলের পাত্র কারো কারো হাতে পান, কারও কারও সন্দেশ, নাড়ু সম্বলিত বরণডালা। প্রতিমা কে আসন থেকে নামানোর পর সাতপাক ঘুরিয়ে দেবীকে নিষ্ঠাভরে বরণ করা হয়।বরণ পর্ব দেখতে কয়েকহাজার দর্শনার্থী আসেন। অধিকাংশই মহিলা। এরপর প্রতিমা লরিতে তোলা হয় বিসর্জন এর উদ্দেশে।
'আলোর শহর' ফুটছে উৎসবের উষ্ণতায়! বাড়ি বসেই দেখুন প্রতিমা নিরঞ্জনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
কিন্তু এরকম প্রথা কেন? প্রচলিত মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুরের মেয়ের বাড়ি গৌরহাটিতে একসময় হতো জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই পুজো চলে আসে ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায়। বাড়ির পুজো সর্বজনীন রূপ পায়। সেসময় বাড়ির মেয়েরা বাড়ির অন্তঃপুরেই থাকতেন। বাইরে বেরোতেও ভয় পেতেন। বাইরে বেরিয়ে পুজোয় অংশ নিতেন না। কিন্তু প্রতিমা বরণ তো মেয়েরাই করেন, সেই কাজ হবে কী করে ? বিসর্জনের আগে তাই পুরুষরাই কাপড় পরে মহিলা সেজে বরণ করা শুরু করেন। সেই প্রথা আজও মেনে চলেছে তেঁতুলতলা বারোয়ারি।
জনশ্রুতি ইংরেজদের সেনাছাউনি ছিল ভদ্রেশ্বর গৌরহাটি এলাকায়। পরপুরুষ, বিশেষত গোরা সৈন্যদের সামনে বাড়ির মেয়েদের বাইরে বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হত না। তাদের অন্দরমহলেই রাখা হত। তাই সেই সময়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর আচার-অনুষ্ঠান পুরুষেরাই সামলাতেন। এমনকি বাড়ির মহিলারা যে ভাবে বাড়ির ঠাকুরকে বরণ করতেন, অনুরূপভাবে পুরুষরাও সেইভাবে করতে শুরু করলেন। সেই পুরোনো রেওয়াজ আজও চলে আসছে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় চরম অঘটন! তরুণীর মর্মান্তিক পরিণতির নেপথ্যের ঘটনায় তাজ্জব হবেন!
এবার যারা বরণ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শ্যামল মুখার্জি। তিনি তেঁতুলতলা বারোয়ারির সম্পাদক। তিনি জানান, 'আমাদের পূজা ২৩২ বছরে পড়ল। এতদিন ধরে এই প্রথাই চলে আসছে আগামী দিনেও হবে। আরেক বরণকারী প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি বলেন, মহিলারা যেমন বরণ করেন আমরাও ঠিক সেভাবেই করি। আমাদের একটা নিয়ম আছে যাঁরা বরণ করবেন সেই সংখ্যাটা বিজোড় হতে হবে। গতবার ১১ জন করেছিলেন এবার ১৭ জন মিলে বরণ করলাম'।