পুলিশকে বোমা ছোড়া থেকে বিরোধীদের মারধর, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে ছিল জলভাত। যদিও গরুপাচার কাণ্ডে এখন জেলবন্দি দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতা। চেয়ার কখনও ফাঁকা থাকে না, তা প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক হোক। তাছাড়াও সর্বক্ষেত্রেই তা যেন প্রযোজ্য। তবে কি অনুব্রত মণ্ডলের জায়গা পাকাপাকি ভাবে দখল করে নিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ? অন্তত বাচনভঙ্গীতে তিনি তৃণমূলে অনুব্রত মণ্ডলের সমকক্ষ হয়ে উঠছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। তাঁরা মনে করছেন, দক্ষিণবঙ্গে অনুব্রত, উত্তরবঙ্গে উদয়ন।
গতকাল, শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ডেপুটি নিশীথ অধিকারীর ওপর তৃণমূল কংগ্রেস হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তারপর দু'দল সমর্থকের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। এরপরই প্রয়াত কমল গুহ পুত্র তৃণমূল নেতা ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, 'একজনও বিজেপি কর্মী যেন এলাকা ছাড়়তে না পারে। নিশীথের গুন্ডামির মাশুল দিতে হবে বিজেপিকে।' সরাসরি প্রকাশ্যে এই ধরনের হুমকি এর আগে নানা ভাবে দিয়েছেন উদয়ন গুহ। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, উদয়ন পুত্র সায়ন্তন গুহও বাবার লাইনেই হাঁটছেন। তিনি তৃণমূলের সাংগঠনিক সভাগুলিতে একই ভাষায় কথা বলছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের নানা স্তরের নেতারা বিচ্ছিন্ন ভাবে হুঁশিয়ারি বা হুমকি দিলেও উদয়ন গুহ বিষয়টাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। এ যেন অনুব্রতর সুর উদয়নের গলায়। একসময়ের ফরওয়ার্ড ব্লকের এই বিধায়ক তৃণমূলে এসেছেন মাত্র ৮ বছর আগে। বিজেপির দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়দের এমন ভাষায় কথা বলতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ডান-বাম সব দলসহ অনুব্রত মণ্ডলকেও যেন ছাপিয়ে যাচ্ছেন কমলপুত্র তৃণমূল নেতা। তবু মন্ত্রীত্বে থাকতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। যেমন এখনও বীরভূমের জেলা সভাপতি রয়েছেন অনুব্রত।
আরও পড়ুন- Adenovirus Death: আতঙ্ক চরমে, ফের অ্যাডিনোভাইরাস প্রাণ কাড়ল দুই শিশুর
এর আগেও উদয়ন গুহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে বিরোধীদের একাধিকবার নানা ভাবে হুমকি দিয়েছেন। ‘পৃথক রাজ্যের দাবিদাররা মিছিল করলে আস্ত হাঁটু নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন না।’ ‘নারায়ণ ভান্ডার নিয়ে যাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করেন, তাঁদের জন্য নতুন একটি প্রকল্প চালু করা হবে— দুয়ারে প্রহার।’ বাদ যাননি ডিএ আন্দোলনকারী সরকারি কর্মীরাও। তাঁদের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে লিখছেন, ‘২০ ও ২১ তারিখ না এলে ২২ তারিখ বাড়িতেই থাকুন।’
উদয়নকে বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতির হুঁশিয়ারির পর তিনি বলেন, ‘আগে সোজা হয়ে দাঁড়াক, তারপর দেখবে। পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তৃণমূলের যাঁরা তাঁদের সাহায্য করবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’ নানা সময়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট করেছেন। আবার মুছেও দিয়েছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের গোঁফ-দাড়ি উপড়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন উদয়ন। পরে সেই মন্তব্য প্রত্যাহারও করে নেন তিনি। দলবদলু কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর হুমকি, ‘গাড়ি রাস্তার সঙ্গে মিশে গেলে কাউকে দোষ দিতে পারবেন না।’ এমন তালিকার কোনও শেষ নেই।
আরও পড়ুন- পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে ছোট্ট গ্রাম, উত্তরবঙ্গের এপ্রান্তের অসাধারণ শোভা ভাষায় প্রকাশ কঠিন!
উত্তরবঙ্গে একসময় তৃণমূলের দাপুটে নেতা বললেই রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নাম ভাসতো। এখন উদয়ন। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে এখানকার জেলাগুলিতে তুলনামূলক ভাল ফল করেছিল বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, অবশ্যই হুমকির সুরে কথা বলে প্রচারের আলো পড়েছে বছর ৬৮-র উদয়নের ওপর। যে ভাষায় লাগাতার কথা বলতেন অনুব্রত। একই ভূমিকায় এখন উদয়ন গুহ।