তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগ নবজোয়ার যাত্রায় বৃহস্পতিবার মালদায় শামিল হবেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন মালদায় এক যোগে তৃণমূলের দুই প্রধান শীর্ষ নেতৃত্ব? কংগ্রেস নেতৃত্ব এর পিছনে অন্তর-রহস্য দেখতে পাচ্ছেন। মালদায় লাগাতার তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগদানের ফলে ঘাসফুল শিবিরের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব একযোগে ছুটে এসেছেন, মনে করছে হাতশিবির। যদিও মালদা তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেসের এই মতবাদকে পাত্তা দিতে নারাজ।
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস বিপুল ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করে। উপনির্বাচনেও যে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব, এই ধারনা বদ্ধমূল হতে থাকে বিরোধীদের। মালদা জেলা কংগ্রেসের সহসভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক অর্জুন হালদার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, সাগরদিঘি উপনির্বাচনের প্রভাবতো রয়েছেই। তবে মালদায় তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে ফিরে আসার হিড়িক চলছে। যোগদানের লম্বা তালিকা তৈরি। ইতিমধ্যে নেতৃত্ব সহ হাজার হাজার তৃণমূল নেতা-কর্মী আমাদের দলে যোগ দিয়েছে।
মালদায় কাতারে কাতারে তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন অর্জুন হালদার। এই জেলা কংগ্রেস নেতা বলেন, ইতিমধ্যে দলে যোগদান করেছেন রতুয়া এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হেসামুদ্দিন আহমেদসহ তাঁর অনুগামীরা, রতুয়া এক নম্বরের তৃণমূল নেতা প্রদীপ সাহাসহ একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলা সভাপরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি ও তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য সরলা মুর্মু, চাঁচোলের জেলা পরিষদ সদস্য। এছাড়া কালিয়াচক, ইংরেজবাজার, মোথাবাড়িসহ নানা জায়গা থেকে তৃণমূলের নেতৃত্ব ও কর্মীরা কংগ্রেসে আসছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মালদা জেলায় পড়ে আছেন তার অন্তর-রহস্য আছে। তাঁরা ভাবছেন বোধহয় মালদা ধরে রাখতে পারলাম না।
আরও পড়ুন- CBI-এর হাতে মারাত্মক তথ্য! সময় নষ্ট না করেই হানা কলকাতার কাউন্সিলর-ব্যবসায়ীর বাড়িতে
কেন তৃণমূল থেকে কংগ্রেস এই যোগদান চলছে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই প্রাক্তন বিধায়ক। অর্জুন হালদারের যুক্তি, 'মালদার মাটি কংগ্রেসের মাটি। এর আগে বার বার বিভিন্ন নির্বাচন সেই প্রমান মিলেছে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে দুটো দলের মধ্যে মেরুকরণ ঘটেছে। সংখ্যালঘু ভোট চলে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের বাক্সে, অধিকাংশ হিন্দু ভোট চলে গেল বিজেপির বাক্সে। যার ফলে আমাদের ফলাফল খারাপ হয়েছিল। কিন্তু মানুষ এই কৌশল বুঝতে পেরেছে। এই ধরনের ধর্মীয় মেরুকরণের ফলে সাময়িক লাভ হতে পারে দীর্ঘ মেয়াদি লাভ হয় না। মানুষ এই কৌশল ধরে ফেলেছে। মানুষ বুঝতে পারছে চাকরি চুরি সহ পঞ্চায়েত স্তরে লাগামছাড়া দুর্নীতি, তৃণমূলের মধ্যে খুনোখুনি, মানুষ তো এই বাংলা চায়নি।'
আরও পড়ুন- ‘কালীঘাটের কাকু’র বাড়ি ঘিরে ফেলেছে CBI, দরজা বন্ধ রেখে তল্লাশি
তৃণমূল থেকে কংগ্রেসের যোগদানের হিড়িকের জন্যই মালদায় একসঙ্গে ছুটে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। হাতশিবিরের এই দাবি মানতে নারাজ মালদা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। আব্দুল রহিম বক্সি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'কংগ্রেসে যোগদানের হিড়িক কি সেটা খুঁজে পাচ্ছি না। কিছু লোক দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রথম থেকেই দলের বাইরে আছেন। তাঁদের ধরে পাকড়ে নিজস্ব লোকজন নিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস। বলছে যোগদানসভা। রহিম বক্সির বক্তব্য, আমরা মনে করি মালদার সর্বস্তরের মানুষ তৃণমূলের পাশে রয়েছে। আগামী নির্বাচনে ভোট প্রমান করে দেবে মালদার মানুষ তৃণমূলের পাশে আছে। ভোটের ফল প্রমান করে দেব।'
মালদায় দু'টো লোকসভা আসনের একটি কংগ্রেসের দখলে, অন্যটিতে রয়েছে বিজেপির সাংসদ। ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি তৃণমূল কংগ্রেসের, ৪টি বিজেপির। তবে কি ফের মালদায় কংগ্রেসের হাত শক্ত হচ্ছে, সেই কারণেই কি একযোগে গৌড়বঙ্গে ছুটে গিয়েছেন মমতা-অভিষেক? আগামী নির্বাচনগুলিতেই এই প্রশ্নের জবাব মিলতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।