বিগত কয়েক দিনে সন্ত্রাসের শিকার আফগানিস্তানের নানান প্রান্ত। কোথাও গুলিবর্ষণ তো কোথাও বোমাবাজি, আর সঙ্গে মানুষ হত্যার বিরতি নেই। ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে তালিবানদের আক্রমণ এবং তার সঙ্গে আতঙ্ক। আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আগ্রাসন দেশজুড়ে ঊর্ধ্বমুখী। এরকম চলতে থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানের বেশ কিছু এলাকা তালিবানদের দখলে আসবে বলেই আশঙ্কা।
রবিবার তালিবানদের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানীতে একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য জানিয়েছেন, তালিবানদের আগ্রাসী মনোভাব এবং অস্ত্রের জোর উত্তরের কুন্দুজ প্রদেশে বেশ কিছু স্থান তাদের দখলে এনে দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে জানা যায়, লস্করগাহ শহরের কিছু অংশে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। আফগান বাহিনী তালিবানদের অবস্থান লক্ষ্য করে এয়ার স্ট্রাইক করে। ৫৪ জন নিহত হয় এবং আহত হয় ২৩ জন। যদিও বা এই বিবৃতিতে কোনও ক্লিনিক বা স্কুলে বিমান হামলার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
হেলমন্দ প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান মজিদ আখুন্দ জানান, শনিবার রাতে শহরের সপ্তম পুলিশ জেলার একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালানো হয়। তবে সেই জায়গাটি প্রথম থেকেই তালিবানদের দখলে তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি। আফগান বাহিনীর সঙ্গে তালিবানদের সংঘর্ষের সময়কালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বহাল থাকায় দেশে কিছুদিন শান্তি বজায় ছিল। মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্যরা দেশ থেকে তাদের প্রত্যাহার সমাপ্ত করায় তালিবানদের উত্থান তীব্র হয়েছে। তালিবানদের হামলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং সেনা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বিমান হামলা চালায়। এই যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। হেলমন্দ জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা ডা. আহমদ খান ওয়েয়ার জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিমান হামলায় একজন নার্স নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন একজন গার্ড।
আরও পড়ুন তালিবানদের গুলিতে নিহত আফগান সরকারের মিডিয়া প্রধান
সূত্র অনুযায়ী, লস্করগাহর এই হাসপাতালটি নানান স্থান থেকে আসা শরণার্থীদের সেবা করছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এলাকাটি তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং সেখানে তাদের চিকিৎসা পরিষেবা সম্ভব নয়। কিছু সময় ধরেই লস্করগাহ এবং এর আশেপাশে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। মার্কিন ও আফগান সরকারের উভয় বিমান বাহিনী শহরে বিমান হামলা চালিয়েছে। তালিবানরা শহরটির ১০টি পুলিশ জেলার মধ্যে নয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে করে ফেলার পর থেকেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। জানা গেছে, কুন্দুজ শহরের বেশিরভাগ অংশই তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে। গভর্নরের কার্যালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের চারপাশে যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশ জোরাল। কুন্দুজের প্রধান কারাগার ভবনটি তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে বলেই জানা যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা সত্ত্বেও আফগান বাহিনীর পরাজয়, দেশের কাছে যেমন এক দূর্বিসহ পরিস্থিতি তেমনই আফগান বাহিনীর পুরোদস্তুর ক্লান্তির ছাপ ক্রমশই বৃদ্ধি করছে উদ্বেগ। নানা বিদ্রোহী কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তালিবানরা এবং দখলে আনছে দেশের নানান অংশ। আফগানিস্তানের প্রায় ৪০০-র মধ্যে ২০০টি জেলায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে তারা। বিদ্রোহীদের আক্রমণ নৃশংস শহুরে যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে কারণ তালিবানরা উত্তরে শেবার্গান এবং কুন্দুজ, দক্ষিণে কান্দাহার এবং লস্করগাহ এবং পশ্চিমে হেরাত প্রভৃতি শহরে ক্রমশই নিজেদের অগ্রসর করছে। যার ফলে হাজার হাজার সাধারণ নিরীহ মানুষ আটকে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সকলেই যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শত শত নিহত বা আহত হয়েছেন এবং আরও অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আরও পড়ুন নিশানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী! তালিবানদের বোমা বর্ষণে নিহত ৮, তীব্র আতঙ্ক কাবুলে
কিছু কিছু জায়গায় পরিস্থিতি আফগান বাহিনীর পক্ষেও,। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। শেবারগানের এক বাসিন্দা বলেন, শহরের পরিস্থিতি খুবই ভীতিকর। আসলে যে কী হতে চলেছে সেই বিষয়ে আতঙ্কে সকলেই। তালিবান যোদ্ধারা দেশের বেশিরভাগ স্থানেই ছড়িয়ে পড়েছে। সেই কারণে রাজধানী-সহ আশেপাশের অনেক জায়গা এখন সন্ত্রাসে ত্রস্ত।
ফাওয়াদ আমান (প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র) টুইটের মাধ্যমে জানান, আফগান এয়ার ফোর্সের তরফ থেকে তালিবানদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ধ্বংস করা হয় এবং তাতে ২০০ জন নিহত হয়েছেন। তালিবান হুমকিতে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল আতঙ্কের ঘেরাটোপে। আদৌ এর শেষ কোথায় সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় সকলেই। দেশের উত্তর ভাগে তালিবানদের চিরাচরিত উদ্বেগ বজায় থাকবে বলেই জানা যাচ্ছে। যদিও, মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার প্রক্রিয়া ৯৫% সম্পূর্ণ ! তার পরেও তাদের হস্তক্ষেপ আফগান সেনাদের কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে পারে এই সন্ত্রাসের কবল থেকে বলেই আশা করছেন তারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন