New Update
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/04/15/NTlekcmvwMTWbzLjbuAG.jpg)
ছোটবেলায় আমি বাবার সঙ্গে আনন্দ, দেজ, এই পাবলিশার্সদের দোকানে যেতাম: অম্বরীশ
ছোটবেলায় আমি বাবার সঙ্গে আনন্দ, দেজ, এই পাবলিশার্সদের দোকানে যেতাম: অম্বরীশ
Ambarish Bhattacharya Chilkdhood Poila Baisakh: আমাদের ছোটবেলার সঙ্গে আজকের নববর্ষ পালনের ধরন অনেক বদলে গিয়েছে। তখন দোকানে দোকানে হালখাতা হত। ডিজিটালাইজেশনের যুগে সেটা এখন প্রায় বিলুপ্ত। উত্তর কলকাতায় আমার ছোটবেলাটা কেটেছে। নববর্ষের দিন দোকানে ঘুরে ঘুরে হালখাতা করার মজাটাই আলাদা ছিল। যে মিষ্টির প্যাকেটটা দেওয়া হত ওটা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। ওই প্যাকেটে কিন্তু মহার্ঘ কিছু থাকত না। বরং এইদিনটায় ভেজাল দিয়েই মিষ্টি তৈরি হত। তবুও ওগুলো খাওয়ার মধ্যে একটা অনাবিল আনন্দ ছিল। ছোটবেলায় মা-বাবার হাত ধরে বেরতাম। এরপর যখন আরেকটু বড় হলাম তখন তো আমাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হত কে কটা প্যাকেট কালেকশন করতে পারল। ওটার মধ্যে কয়েকটা মিষ্টি আর একটা ঠান্ডা নিমকি গোছের কিছু থাকত। আর দোকানের বাইরে একটা সরবত দেওয়া হত। ড্রামের মধ্যে সেই সরবৎটা গুলে রাখা হত। ওটাই আমরা আনন্দের সঙ্গে হইহই করে খেতাম।
আমার ছোটবেলায় নববর্ষের আরও একটা বিশেষ আকর্ষণ ছিল ভোর ছ'টার প্রভাতফেরি। গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ। অন্য পাড়ার সঙ্গে প্রতিযোগীতা হত যে কোন পাড়ায় বেশি লোক জমায়েত হয়েছে। নববর্ষে নতুন জামা পরার রেওয়াজটা ছিল, বাড়িতে ভালমন্দ বাঙালি রান্না হত। ছোটবেলায় আমি বাবার সঙ্গে আনন্দ, দেজ, এই পাবলিশার্সদের দোকানে যেতাম। ওখানে পয়লা বৈশাখ পালন হত। ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার আমার সেখানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক বিখ্যাত মানুষজন আসতেন। শক্তি, সুনীল, শীর্ষেন্দু-র মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিরা আসতেন। সাহিত্যিকরা গান করতেন। ওখানেও একটা সুন্দর মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হত। নববর্ষ উপলক্ষে অনেক বেশি ছাড়ে বইও বিক্রি করা হত। ভোরবেলা প্রভাতফেরি, বেলার দিকে পারলিশার্স তারপর সন্ধ্যায় হালখাতা-মিষ্টির প্যাকেট সংগ্রহের একটা হইচই লেগেই থাকত।
আরও পড়ুন: ১৮ বছর পর আমার ছেলে যদি বলে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শোনেনি, এই দায় আমার : বিশ্বনাথ বসু
এখন তো কোনও দোকানে আর সেভাবেও দেখিও না যে হালখাতা হচ্ছে। সকালে গান গাইতে গাইতে প্রভাতফেরিও নেই। কিন্তু, যেটা বাঁচিয়ে রেখেছি সেটা হল নতুন জামা পরা। ওটা আমার শখ। এখনও আমাদের বাড়িতে নববর্ষে বাঙালি খাবার রান্না হয়। ছোটবেলায় পুরনো দিনের নববর্ষের নস্ট্যালজিয়াতেই বেঁচে থাকতে ভালবাসি। প্রত্যেকবছর আমাদের বাড়িতে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটা রান্না হয়। সকালে লুচি-সাদা আলুর তরকারি, মিষ্টি দুপুরে বাসন্তী পোলাও, পাঠার মাংস, তরকারি, ডাল, বেগুনি আর উত্তর কলকাতার স্পেশাল লাল দই। যার মধ্যে একফোঁটাও টক নেই। দোসর সন্দেশ। সন্ধ্যাবেলা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, সেখানে মুড়ি-চপ। তবে চপটা আসে নির্দিষ্ট একটা দোকান থেকে। সেটা লক্ষ্মীনারায়ণ সাউয়ের দোকান। যেটাকে নেতাজির চপ বলা হয়।
রাতে বাড়ি ফিরে আবার কবজি ডুবিয়ে বাঙালি খাবারে ভুরিভোজ। তখন পাতে থাকে পরোটা। এভাবেই নববর্ষটা কাটে। লুচিতে শুরু-পরোটায় শেষ। পয়লা বৈশাখের দিনটায় যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাঙালিয়ানার ছোঁয়া থাকে তাহলে মন্দ কী? আজকের দিনেই যে শুধু উশৃঙ্খলতা দেখা যায় তা কিন্তু নয়, আমাদের সময়ও ছিল। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও অনেক ভাল ছেলেমেয়ে রয়েছে যাঁরা কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে, ভাল বই পরে, গান শোনে। একটা দিন বাঙালি সংস্কৃতি মানাটা বোধহয় খুব একটা কঠিন কোনও বিষয় নয়। সময় বদলেছে। তবুও একটা দিনের জন্য যদি বাঙালিয়ানাকে গুরুত্ব দেওয়া যায় তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভাল লাগবে।
আরও পড়ুন: মাকে ছাড়া প্রথম নববর্ষ, তবে পুরাতনে মায়ের গন্ধুটুকু পাচ্ছি: ঋতুপর্ণা