অপরাজিতা আঢ্য
অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনা হয় না। ধনতেরসের সময়ই একমাত্র সোনা কিনতাম। কিন্তু, এখন যে হারে সোনার দাম বেড়েছে গত কয়েক বছরে তাও কেনা হয়নি। অক্ষয় তৃতীয়ায় যে নিয়মের অন্যথা হয় না সেটা হল কালো জিনিস বর্জন। এই দিনটায় কোনও কালো জিনিস পরিধান করি না। কাউকে দান করিনা এমনকী কালো প্লাস্টিকও ব্যবহার করি না। আমাদের ঘরে মা লক্ষ্মী আছেন। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন তাঁর পুজো হয়। কম-বেশি সব পুজোই আমাদের বাড়িতে হয়। অক্ষয় তৃতীয়া হল সমৃদ্ধ হওয়ার দিন। এই দিন সূর্য আর চন্দ্র উচ্চস্থানে বিরাজ করে। তাই এই দিনটার আলাদা করে কোনও শুভক্ষণ হয় না। সারাটা দিনই শুভক্ষণ। ধনতেরস ছাড়া অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই একমাত্র মা লক্ষ্মীর সঙ্গে কুবেরের পুজো হয়। কুবেরের পুজো তো সারা বছর হয় না। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যাঁদের ইচ্ছে হয় তাঁরা মা লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁরও পুজো করেন।
আজও রীতি মেনে পয়লা বৈশাখ আর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন নতুন বস্ত্র পরি। আমার তো মনে হয় সেটা পরা উচিত। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যে কোনও শুভকাজ সম্পন্ন হয়। যদি স্টুডিওপাড়ার কথা বলি তাহলে বলব এখন সিনেমাই তো সেভাবে হচ্ছে না। মহরৎ আর হবে কোথা থেকে!! তবে দু-একটা প্রযোজনা সংস্থা খুব ভাল করে মহরৎটা করে। আগে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন অনেক ছবির শুভ মহরৎ হত। এখন সে সব অতীত। সময়ের সঙ্গে সবটাই মানিয়ে নিতে হবে। ছোট বেলার অক্ষয় তৃতীয়াটা একদম অন্যরকম ছিল। পয়লা বৈশাখ ছাড়াও এই দিনটায় অনেক দোকানে হালখাতা হত। আর হালখাতা মানেই মিষ্টির প্যাকেট পাব। কোন কাকুর দোকানে অক্ষয় তৃতীয়া হচ্ছে সেই দিকে নজর থাকত।
আমাদের বাড়িতে রাধা গোবিন্দ ছিল। তাই এই দিনটায় পুজো হত। আলপনা দেওয়া হত। আমাদের বাড়িতে যে কোনও শুভ অনুষ্ঠান মানেই আলপনা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। ছোটবেলায় কোনও কিছুতেই আড়ম্বর ছিল না, শুধু আনন্দ ছিল। এখনও আমার বাড়ির কোনও কিছুতেই বিশেষ আড়ম্বর থাকে না। নিজেরা একসঙ্গে হইহই করি, খাওয়াদাওয়া করি। এটাতেই আমাদের পরম তৃপ্তি। আগামীকাল যে পুজো হবে সেখানেও আমার পরিবার, কাছের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব আসবে। বন্ধুই তো আছে হাতে গোনা চার-পাঁচ জন। লুচি-তরকারি খাওয়া হবে। ছোট ছোট জিনিসগুলোর মধ্যেই আমরা আমাদের আনন্দটা খুঁজে পাই।
আরও পড়ুন: প্রয়াত শাশুড়িমায়ের কোনও গুণ রপ্ত করার পরামর্শ দেন পরমব্রত? মৃত্যুবার্ষিকীতে খোলসা করলেন মম টু বি পিয়া
ছোটবেলার মতো এখন মিষ্টির প্যাকেট সংগ্রহ করতে ইচ্ছে করে না? ফোনের ওপারে সেই প্রাণখোলা হাসি। বাড়িতে মিষ্টির প্যাকেট আসে। আমার এক বন্ধুর শাড়ির ব্যবসা। ও খুব বড় করে অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো করে। খাওয়াদাওয়ার আয়োজনটা হয় পরদিন। এবারেও হবে। ওঁর বাড়িতে সবাই একত্রিত হয়ে খুব মজা করি।
আরও পড়ুন: বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছি, যে টোকেন মানি পেতাম সেটা আমি ওয়াকার্সদের মধ্যে বিলিয়ে দিতাম: রাখি গুলজার
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন