/indian-express-bangla/media/media_files/2025/04/26/mb1Kugsnm8VO5fXjHJIS.jpg)
রাখি গুলজারের উপস্থিতিতে আমার বসের হাত ধরে ফিরেছে সাতের দশক!!
Rakhee Gulzar In Amar Boss: বঙ্গতনয়া রাখি গুলজার, বৈবাহিক সূত্রে নামের সঙ্গে জুড়েছে 'গুলজার' পদবী। তবে আজও মনেপ্রাণে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া এতটুকু ফিকে হয়নি। দীর্ঘ ২০ বছর বিরতির পর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের আগামী ছবির 'বস' রাখি গুলজার। হ্যাঁ, ৯ মে মুক্তি পাচ্ছে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার নতুন ছবি 'আমার বস'। মা-ছেলের সম্পর্কের এক অন্য কাহিনি নিয়ে গল্প বুনেছেন পরিচালকদ্বয়। সিনেমার ট্রেলারেই রয়েছে সেই নজির। শুক্রের সকালেই শহর কলকাতায় পা রেখেছেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী রাখি গুলজার। তাঁকে মুম্বই থেকে নিয়ে এসেছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বিমানবন্দরে চিত্রসাংবাদিকদের সঙ্গে স্নেহবৎসল আলাপচারিতাও সেরেছেন। সন্ধ্যায় ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে রাখির উপস্থিতিতে যেন সকলের হৃদয়ে বয়ে গিয়েছিল হিমেল হাওয়া। রাখি গুলজারের উপস্থিতিতে আমার বসের হাত ধরে ফিরেছে সাতের দশক!!
দীর্ঘ ২০ বছরের বিরতির পর এই ছবি দিয়ে কামব্যাকের নেপথ্য কাহিনি শেয়ার করলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, আজকাল মানুষ বড্ড বেশি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। নিজের কাজেকর্মে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে মা-বাবার অনেকসময় একাকীত্বে ভোগেন। যৌথ পরিবার যে প্রায় বিলুপ্ত সে কথাও উঠে এসেছে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমার বসের মতো ছবি খুবই প্রাসঙ্গিক। মা-বাবাদের প্রতি সন্তানের দায়িত্বকর্তব্য পরায়ণতা বোঝানোর জন্যই শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। উল্লেখ্য, মুম্বইয়ে থাকলেও চাকচিক্য যেন আজও ছুঁতে পারেনি রাখিকে। আর পাঁচজন সাধারণ বাঙালির মতো সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে আজও বড্ড ভালবাসেন রাখি। তাই হয়তো এদিনও রাখি বললেন, 'গ্ল্যামার আর ভাল লাগে না।'
আমার বস-এর ট্রেলার লঞ্চে তৈরি হয়েছিল একটি আবেগঘন মুহূর্ত। শিবপ্রসাদকে দেখলে বারবার মৃত ভাইয়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে! রাখি গুলজার জানান, আমার বস ছবির প্রস্তাব নিয়ে শিবপ্রসাদ তাঁর কাছে যাওয়ার কয়েকদিন আগেই ভাইকে হারিয়েছেন। তাাঁর নাম ছিল শিবু। সেইজন্য পরিচালক শিবপ্রসাদের কাছে আবদার করেছিলেন কলকাতায় তাঁকে যখনই আসতে হবে পরিচালক যেন তাঁকে মুম্বই থেকে নিয়ে আসেন। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মনের ইচ্ছেপূরণে ট্রেলার লঞ্চের আগে সোজা মুম্বই উড়ে গিয়েছিলেন শিবপ্রসাদ। পর্দার মা-কে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় ফিরেছেন।
মঞ্চ থেকে মজা করে রাখি বলেন, 'শিব আর প্রসাদ...। যখন শিব এল আমি বললাম প্রসাদটা কোথায়?' দীর্ঘ কয়েক দশক দাপিয়ে অভিনয় করার পরও একজন প্রকৃত স্টারের মতো তিনি বলছেন, 'ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলের থেকে কিছু না কিছু শিখেছি।' বয়স যেন তাঁর কাছে সংখ্যামাত্র। আজও স্মৃতিতে সব কিছু টাটকা। ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে মেয়েবেলার স্মৃতিচারণা করে বললেন, 'আমার সবকিছু স্পষ্ট মনে আছে। ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের কথা মনে আছে। ছোটবেলায় দেখেছি। রাস্তাঘাট, হোটেলের সব নামও মনে আছে। কিছুই ভুলিনি।' তবে তাল কাটল যখন তিনি বললেন, 'আপনারা ভাল থাকবেন। আবার কবে আসব সেটা জানি না।'
এই কথা শুনেই দৌঁড়ে এলেন শিবপ্রসাদ। রাখিকে জড়িয়ে বললেন, এখনও অনেক ছবি বাকি আছে। সঙ্গে সঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, 'ছবি করতে করতে হঠাৎ মরে গেলে কী করবি?' এই কথা শুনে উপস্থিত প্রত্যেকের মন ভার। রাখি গুলজারকে প্রত্যেকে অনুরোধ করেন তিনি যেন এই কথাটা ফিরিয়ে নেন। সেই মুহূর্তে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় থেক কাঞ্চন মল্লিক, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, শ্রুতি দাস, ঐশ্বর্য সেন-সহ ছবির অন্য কলাকুশলীরা। ঠিক সেই সময় ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে শিবপ্রসাদকে বললেন, 'গন্ধমাধব পর্বত থেকে সঞ্জীবনী বুটি নিয়ে আয়।'
আরও পড়ুন: আমার সঙ্গে প্রেম করতে হলে অনেক কথা বলতে হবে, মেয়ে তো বলে ডেটে যাও, এত কথা বলার কী আছে: স্বস্তিকা
অনুষ্ঠানের মাঝে অনেকবার 'নোলক'-কে খুঁজেছেন রাখি। আসলে তিনি ছবির আরও এক অভিনেত্রী উমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নতুন নামকরণ বর্ষিয়ান অভিনেত্রী রাখির কল্যাণেই। আমার বস-এর ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, অভিনয় জগৎ আজ চাঁর তাঁকে আকৃষ্ট করে না। সাতের দশকের সেই অমোঘ আকর্ষণ আজ আর নেই। নিজস্ব ফার্ম হাউজ আছে, সেখানেই পশু-পাখি-গাছপালার সঙ্গ সময় কাটাতে ভালবাসেন। রাখি গুলজার কিন্তু, হিন্দি ছবির পাশাপাশি অসমিয়া, উড়িয়া ছবিতেও কাজ করেছেন। শুনলে অবাক হবেন রাখি গুলজারের মতো এখজন অভিনেত্রী ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। যে টুকু টোকেন মানি পেতেন সেটা ওয়াকার্সদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। আমার বসের ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত জীবনের গল্পগুলো এভাবেই সকলের সামনে তুলে ধরেছেন রাখি গুলজার।
সোনালি দিনের স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, তিনি খুব ভাগ্যবতী যে বেশিরভাগ সিনেমার শুটিং হত আউটডোরে। এর ফলে শুটিংয়ের পর রান্না করে সকলে মিলে খাওয়াদাওয়া করার সেই আনন্দের মুহূর্তগুলো যেন আজও খুব মিস করেন। হালফ্যাশনের সুপারস্টার তকমা নিয়ে যে মাতামাতি সেটা মোটেই প্রশ্রয় দেন না বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রাখি গুলজার। তাঁর মতে, যে ভাষাগুলোর উপর দক্ষতা রয়েছে সেখানে অভিনয় করাই শ্রেয়।
আরও পড়ুন: 'নারীকেন্দ্রিক ছবি বিক্রি করতে সমস্যা হয়', নতুন ছবি মুক্তির দিন আর কোন 'প্রশ্ন' পায়েলের মনে?