/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/27/sayak-2025-09-27-12-43-00.jpeg)
আমার মা সহ আরও অনেকের মাকে ভাল রাখার দায়িত্ব নিতে পারি: সায়ক (গ্রাফিক্স সন্দীপন দে)
Sayak Chakraborty Birthday:
সায়ক চক্রবর্তী
খুব ছোটবেলাতেই বুঝেছিলাম পড়াশোনা আমার দ্বারা হবে না। আমার দাদার মাথায় ভগবান বিদ্যা একেবারে ভরে ভরে পাঠিয়েছেন। তবে আমাকে ভগবান বিদ্যা না দিলেও বুদ্ধি আর ব্যালেন্স করার ক্ষমতা দিয়েছেন। যখন আমি সপ্তম-অষ্টম শ্রেনিতে পড়ি, তখনই বুঝেছিলাম আমাকে অভিনয়টাই করতে হবে। এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনও অপশন নেই। আজ তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেক কিছু সহজ হয়ে গিয়েছে কিন্তু, সেই সময় সেটা ছিল না। জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে যখন ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতাম তখন ভাবতাম ওটাই আমার ভবিতব্য। একবার একটি সিরিয়ালের সেটে জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে আমাকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছিল। একজন ওয়েটার যে হিরোর শার্টে রঙিন জল ফেলে দেবে। ভুল করে পুরো জলটাই পড়ে যায়। তারপর ওই পরিচালকের কাছে মারাত্মক বকা খেয়েছিলাম। কিন্তু, আমি তখন সামান্য একজন জুনিয়র আর্টিস্ট, তাই কিছু বলার মতো ক্ষমতাও আমার ছিল না।
ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে জুনিয়র আর্টিস্টদের জন্য একটাই বাথরুম ছিল। ওই ঘটনায় এত কষ্ট পেয়েছিলাম যে খুব কেঁদেছিলাম। আর সেইদিনই একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি একদিন ফিরে আসবই। ক্যামেরার সামনে বুক চিতিয়ে অভিনয় করব। আমি বিশ্বাস করি মন থেকে যদি কেউ কিছু চায় সেটা সে কোনও না কোনওদিন ঠিক পাবে। আমার প্রথম সিরিয়াল 'বয়েই গেল'। স্বর্ণদা (স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার) আমাকে প্রথম ব্রেক দিয়েছিলেন। এরপর ললিতা দি 'বামাক্ষ্যাপা'-তে সুযোগ দেন। সেই ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে গেলাম। একটা গল্পে লিড চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। অনেকদিন প্রজেক্টটা চলেছিল। আরও একবার ইন্দ্রপুরীতে কাজের হাতছানি। সৌজন্যে 'রানি রাসমণি'।
ওখান থেকেই আমার পরিচিতি তৈরি হয়, সকলের কাছে সায়ক হয়ে উঠি। মানুষ আমাকে এতটাই ভালবাসত যে যখন আমি মারা যাই (চরিত্র) তখন অনেকেই খুব কষ্ট পেয়েছিল। আমার জীবনের সব ক'টি লক্ষ্য, পদক্ষেপ খুবই বুদ্ধিদীপ্ততার সঙ্গে গ্রহণ করি। আমার কাজ চাই, কাজ করব তারপর আমার প্রয়োজন ছিল একটা ফ্ল্যাটের। কারণ আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। প্রত্যেক বছর চুক্তি শেষে বাড়ি বদলাতে হত। সেটা খুব কষ্টকর ছিল। একটা সময় 'মহাপ্রভু শ্রচৈতন্য', 'আমি সিরাজের বেগম'-এ রাণা সরকার আমাদের টাকা আটকে রেখেছিলেন। তবে সেটার জন্য আমি পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছিলাম। চ্যানেল আমাদের মোটা অঙ্কের টাকা ফেরৎ দেয়। তখন বাড়ির ডাউন পেমেন্টটা করতে পারি। সাপে বর হয়েছিল।
আরও পড়ুন এখন মুখ দেখেই প্যাণ্ডেলে ঢুকিয়ে দেয়, ভিআইপি ট্রিটমেন্টটা বেশ এনজয় করি: সায়ক চক্রবর্তী
এরপর অনেকগুলো কাজের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু, কোভিডের পর সব বদলে গেল। কোনও কাজ পাচ্ছিলাম না। আবার ফিরিয়ে আনলেন লীনা দি। এরপর 'তুই আমার হিরো', 'রানী ভবানী'-তে কাজ করছি। কোভিডের পর কাজের বাজার মন্দা বলেই রিয়াজ, দেবলীনার সঙ্গে ভ্লগটা শুরু করি। আমি জীবনে অনেক পজেটিভ মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি, যাঁরা প্রতিনিয়ত আমার পাশে থেকে মনোবল বাড়িয়েছে। খুব ভালবেসেছে। যাঁদের থেকে যা পেয়েছি সবটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ আমি বাড়ি, গাড়ি সব করতে পেরেছি। আমি সবসময় ভাবতাম যাঁরা আমার জন্য এতকিছু করেছেন তাঁদেরকে ছোট হলেও কিছু একটা উপহার দেব। সবাইকে আনন্দ দেওয়ার মধ্যেই আমার সর্বসুখ। আমার মাকে ছাপিয়ে কোনও শখই ঊর্ধে উঠে যায় না।
আমার একটা উপলব্ধি প্রেম আর কাজ একসঙ্গে হয় না। ব্যালেন্স করা খুবই কষ্টকর। তাই আমি সবসময় ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, আমাকে কাজে ভরিয়ে দিও। যাতে আমি আমার মা সহ আরও অনেকের মাকে ভাল রাখার দায়িত্ব নিতে পারি। এটা আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। জীবন তখনই স্বার্থক যে মা তোমাকে জন্ম দিয়েছে তাঁকে যোগ্য সম্মান দিতে পারছো, কাছের মানুষদের ভাল রাখতে পারছো। আমরা যদি প্রত্যেকে এই পন্থায় বিশ্বাসী হই তাহলে হয়ত সমাজ অনেকটা বদলে যাবে। আমার ভ্লগে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করি। দাদা, মাসি আমার ব্যাকবোন। এই দুজন না থাকলে সামনে এগিয়ে যেতে পারতাম না। সুকান্ত, অনন্যাও আমার প্রিয় দুজন মানুষ। নতুন জমিতে বাড়ি করে সকলে একসঙ্গে থাকব সেটা বিরাট আনন্দের। আমি জাবনটাকে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই।
ডিপ্রেশান আমার জীবনেও এসেছে কিন্তু, কখনও নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবিনি। চূড়ান্ত সমস্যার মাঝেও ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছেশক্তি আমার চরিত্রের ইতিবাচক দিক। জিরো থেকে শুরু করেছি তাই প্রতিটি জিনিসের মর্ম বুঝি। নিজের বিষয়ে আরও একটা জিনিস বলতে চাই, আমি কাউকে হিংসা করি না। আমি চাই প্রত্যেকের পকেটে টাকা আসুক, সুন্দর জীবন গড়ে তুলুক। অনেককেই আমি ভ্লগ করার উৎসাহ দিই। কাউকে প্রতিযোগী ভাবি না। সবাইকে নিয়ে চলতে ভালবাসি। মানুষের ভাল করলে নিজের জীবনেও ভাল হবে বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন 'আমার সঙ্গে রাজার চরিত্রের কোনও মিল নেই', 'রাণী ভবানী'-র রাজপাটে কোন ভূমিকায় সায়ক?
৩১ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে অনেক সময় মনে হয় মনের মানুষ থাকলে ভাল হত। পরক্ষণেই ভাবি, কাজ আর প্রেম ব্যালেন্স করতে পারব না। কাজ না করলে আমি আমার পরিবারকে ভাল রাখতে পারব না। আমি যদি নিজে ভাল না থাকি তাহলে যে আমার জীবনে আসবে বা পরিবারকে ভাল রাখব কী করে? তাই কাজ আমার কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আমার মা জীবনে অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। আমি না হয় আমার 'লাভ'টাকে দূরে রাখলাম