Advertisment

লকডাউনে শুটিং বন্ধ অথচ মদের দোকানে ঠেলাঠেলি! ক্ষুব্ধ বিনোদন জগতের একাংশ

সারা দেশেই মদের দোকান খোলা হয়েছে ৪ মে থেকে। বহু জায়গায় মানুষ ভিড় করে, ঠেলাঠেলি করে মদ কিনছেন, এমনটা ধরা পড়েছে ভিডিও ফুটেজে। কী বলছেন এই প্রসঙ্গে শিল্পীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bengali actors criticize people breaking lockdown rules outisde wine shops

বাঁদিক থেকে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সোশাল মিডিয়া থেকে

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এরাজ্যেও বিনোদন জগৎ কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। লকডাউনে বসে কিছু মেড-অ্যাট-হোম শর্ট ফিল্ম হয়েছে। প্রথম সারির বিনোদন চ্যানেলগুলি কয়েকটি মেড-অ্যাট-হোম অনুষ্ঠানও নিয়ে এসেছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলা বিনোদন জগতের চাকা কিন্তু বন্ধ। ওদিকে ৪ মে থেকে খুলে গিয়েছে মদের দোকান। বহু লোক ঠেলাঠেলি করে মদ কিনেছেন, এমনটা ধরা পড়েছে ভিডিও ফুটেজে। সে সব নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিনোদন জগতের একাংশ। এই জগতের বহু মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ। যেখানে শুটিং শুরু করার অনুমতি মিলছে না, সেখানে মদের দোকান খোলা হচ্ছে কী করে, সোশাল মিডিয়ায় এই প্রশ্ন তুলেছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়-সহ ছোটপর্দা ও বড়পর্দার বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী।

Advertisment

এক জায়গায় প্রচুর লোক সমাগম এড়াতেই লকডাউন ঘোষণারও প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে বন্ধ করা হয়েছিল শুটিং। বিনোদন জগৎ পুরোপুরি এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায়। ২১ দিনের লকডাউন পর্বে তারকা-অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ধারাবাহিকভাবেই সোশাল মিডিয়ায় মানুষকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু ৪ মে মদের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকের মনেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: অভিনেতা, প্রযোজকদের থিয়েটার রিলিজের অপেক্ষা করার অনুরোধ মাল্টিপ্লেক্সের

অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় ৪ মে সকালেই সরব হয়েছেন এই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে। তাঁর ও বাংলা বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িত বহু মানুষের সোশাল মিডিয়া পোস্ট ও কমেন্ট থেকে দুটি প্রসঙ্গ উঠে এসেছে--

১. লকডাউন কি প্রহসন? কেন কিছু মানুষ কোনও নিয়ম না মেনে এভাবে ভিড় করলেন মদের দোকানে যেখানে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়নি?

২. দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল, যদি মদের দোকান সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশাবলী দিয়ে শুটিং চালু করার কথা কেন ভাবছে না সরকার, যেখানে বিনোদন জগতের সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের রুটি-রুজি জড়িত।

''আজ মদের দোকানে মানুষের এই ভিড় দেখে আমার একটাই কথা মনে হল, মানুষের কি কোনও মন্যুষত্ব নেই? যেখানে এতজন মানুষ খেতে পাচ্ছে না, তাদের দিকে তাকিয়ে এইভাবে মদ কিনতে পারলেন কিছু মানুষ'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, ''অথচ আমরা শুনছি যে শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া যাবে না, দিলেই নাকি মানুষ করোনায় মারা যাবেন। আর যাঁরা এভাবে মদ কিনলেন, তাঁদের কোনও আশঙ্কা নেই? আমার অদ্ভুত লাগছে বিনোদন জগৎ নিয়ে কেউ কোনও কথা বলছেন না, কোনও মন্তব্য করছেন না। এই লোকগুলোর কী হবে? এদের সাহায্যের বা ত্রাণের দরকার নেই? আমরা তো নিজেরাই টাকা তুলে দুঃস্থ শিল্পীদের দিয়েছি। এভাবে আমরাই বা আর কতদিন পারব? আর একদল লোক মদের দোকানের সামনে গিয়ে বলবে মদ কিনবই, মদ ছাড়া বাঁচব না?''

মদের দোকানে মানুষের ভিড় নিয়ে প্রায় একই অনুযোগ রয়েছে সুদীপ্তা চক্রবর্তীর। সরকারের এই পদক্ষেপ তিনি একেবারেই সমর্থন করছেন না। ''আমি সকাল থেকে দেখছি, বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ ও ছবি। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি কেন এখন মদের দোকান খোলা হল। তবু সরকার যখন করেছে, তখন ধরে নিচ্ছি যে এর পিছনে সুচিন্তিত কারণ আছে'', বলেন সুদীপ্তা। কিন্তু মদের দোকান খোলার প্রয়োজনীয়তাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: আটার ব্যাগে টাকা রাখার মানুষ আমি নই, ভাইরাল বিতর্কে আমির

''মদের দোকানের বাইরের যে ছবিগুলি বা ভিডিওগুলি দেখলাম, অবশ্যই এই ঠেলাঠেলি বা ভিড় এই মুহূর্তে ভাল লাগল না। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাঁদের অনেকেরই দীর্ঘদিন মদ্যপান না করলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যে কোনও নেশা যদি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে একটা উইথড্রয়াল সিনড্রোম হয়। সেটা সহ্য করতে না পেরে, মদ না পেয়ে কিন্তু অনেকেই বাড়িতে মদ বানিয়ে খেতে গিয়ে মারা গিয়েছেন'', বলেন রাহুল, ''এটাও হয়েছে লকডাউনের মধ্যে। সেদিক থেকে দেখলে হয়তো দোকান খোলাটা জরুরি ছিল। আমার বক্তব্য হল চাল কিনতে হলে যেমন সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে, মদ কিনতে গেলেও তাই। তবে দেড়মাস বন্ধ করে রাখার পরে দোকান খুললে যে এরকম হুড়োহুড়ি হবে, সেটা কিন্তু জানা কথা। পুরোপুরি বন্ধ না করে যদি রেগুলারাইজ করে রাখা যেত, তাহলে সম্ভবত এই বিষয়টা আটকানো যেত।''

তবে মদের দোকান খোলা আর শুটিং শুরু হওয়া-- দুটোর প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা এমনটাই মনে করছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, দুটোর মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না। কিন্তু শুটিং কীভাবে শুরু হতে পারে, সেই নিয়ে প্রবল সংশয়ে রয়েছে বিনোদন জগৎ। লকডাউন উঠলে কীভাবে শুটিং শুরু করা যাবে, কী কী নিয়মাবলী মানতে হবে সেই নিয়ে আঞ্চলিক ও জাতীয়, দুই স্তরেই অনেক আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন থেকে। কোভিড-১৯ বিপর্যয়ের পরে কীভাবে শুটিং করা যায় বিপদ এড়িয়ে, এটি সেই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা যা চূড়ান্ত নয়। এই প্রস্তাবনাটি নিয়ে প্রযোজক, চ্যানেল কর্তূপক্ষ এবং সিনে ফেডারেশনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন: নুসরত বনাম বিজেপি আইটি সেল, অমিত মালব্যকে টুইটে কটাক্ষ সাংসদের

কিন্তু এখনই শুটিং শুরু করা বেশ কঠিন হবে, এমনটাই মনে করেন প্রযোজক সুশান্ত দাস। 'কৃষ্ণকলি' ও 'আলোছায়া'-র প্রযোজক বলেন, ''যদি শুটিং শুরু হওয়ার পরে কোনওভাবে একজনেরও সংক্রমণ হয় কোনও ইউনিটে, তাহলে কিন্তু পুরো স্টুডিওটাই সিল করে দেওয়া হবে। সেখানে আবারও অন্যান্য ইউনিটগুলি বিপদে পড়বে। তবে শুটিংয়ের অনুমতি পেলেও যে সব নিয়মাবলীর কথা উঠছে, তার সবকটি মেনে নিয়ে কীভাবে যে শুটিং হবে, তা নিয়েও আমরা চিন্তিত।''

''শুটিং শুরু করা নিয়ে যে প্রস্তাবনাটি এসেছে, সেটা পড়েও আমি চিন্তিত হচ্ছি যে এভাবে কি আদৌ শুটিং করা সম্ভব'', বলেন সুদীপ্তা, ''আবার এটাও ঠিক যে শুটিং শুরু করতে গেলে ওটাই একমাত্র পথ। ওই নিয়মগুলো মেনে না চললে সত্যিই শুটিং করা যাবে না। এত চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ওই পথটাই বেছে নেওয়া ছাড়া আর উপায়ও তো নেই। শুধু শুটিং নয়, স্কুল খোলা নিয়েও নিয়মাবলী আসতে চলেছে। একটা পিডিএফ পেলাম। সেখানে যা যা বলা হয়েছে, বাচ্চারা কি ওইভাবে দূরে দূরে থাকতে পারবে? আমরাই বা বাচ্চাদের কী শেখাব, কাউকে ছোঁবে না, বন্ধুদের জড়িয়ে ধরবে না? শিশুদের উপর যে কী প্রেশার পড়বে, সেটা ভেবেই শঙ্কিত হচ্ছি। গোটা বিষয়টা খুব খারাপের গিকে এগোচ্ছে।''

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Bengali Actress Bengali Actor Bengali Serial Bengali Film Lockdown
Advertisment