/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/cats-2025-10-06-12-52-10.jpg)
মানুষ মরছে আর এরা নাচছে শুধুমাত্র কাজ আর পয়সার জন্য: শ্রীলেখা
Sreelekha Mitra-North Bengal Flood: অভিনেত্রী হিসেবে যতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্টবাদী মনোভাবাসম্পন্ন হওয়ার জন্য মানুষের হৃদয়ে বাস করেন শ্রীলেখা মিত্র। স্পষ্ট কথায় তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই। কাউকে ছেড়ে কথা বলার পাত্রী নন। উত্তরবঙ্গে যখন মৃত্যুমিছিল তখন পুজো কার্নিভালে রূপোলি দুনিয়ার তারকাদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে নাচতে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী। কার্নিভাল শেষ করে সোমবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র।
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ক্ষোভ উগরে দিয়ে লিখেছেন, 'কার্নিভালের ছবি দেখতে দেখতে আনফ্রেন্ড করছি। আমার এদের শিল্পী হলতে ঘেন্না হয়। শিল্পীর মন তো সংবেদনশীল হয়। অন্যের কষ্টি মন কেঁদে ওঠে। শিল্পী তার শিল্পের মাধ্যমে অন্যায় দেখলে তার প্রতিবাদ করে। কিন্তু, এরা? ধান্দাবাজ। হ্যাঁ, এসব বলার জন্য আমার কাজ নেই। তবুও এই নির্লজ্জদের কাছে আত্মসমর্পণ করার চেয়ে এই পরিস্থিতিই শ্রেয়। তারপর আমাকে আর কতবার কী কী ভাবে বয়কট করবেন ভাবতে থাকুন। মানুষ মরছে আর এরা নাচছে শুধুমাত্র কাজ আর পয়সার জন্য। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।'
ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীদের নিয়ে এমন মন্তব্য করলে আবার যদি বয়কট করা হয়? কাজ হারানো বা না পাওয়ার আশঙ্কাকে একেবারেই তোয়াক্কা করেন না? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীলেখার স্পষ্ট জবাব, 'সত্যি কথা বলার জন্য আলাদা করে সাহসীকতার প্রয়োজন হয় না। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করব। আমার নতুন করে কিছু হারানোর নেই। আর হারানোর কিছু থাকলেও অন্যায় কোনও দিন প্রশ্রয় দিইনি আর দেবও না। আমার মন্তব্যের জন্য যদি একা থাকতে হয় তাহলে একাই থাকব। কোনও কিছুর বিনিময়ে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করি না।'
উত্তরবঙ্গের এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে যে সকল শিল্পীরা কার্নিভালে যোগ দিয়েছেন তাঁদের শিল্পী বলতে কেন ঘেন্না করছে শ্রীলেখার? অভিনেত্রীর সাফ জবাব, 'ভাল মানুষ না হলে শিল্প তৈরি করা অসম্ভব। অন্যায় দেখলে একজন শিল্পী কখনও চুপ থাকতে পারে না। দুঃখে বুক ফেটে কান্না আসবে। কারণ শিল্পীর মন তো বড় হয়, অনেকবেশি সংবেদনশীল হওয়া উচিত। ভাল মানুষ কখনও ধান্দাবাজ হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন আগে কার্নিভাল করে নিই কাল যাব। সেখানে যাঁরা মদত দেয়, হাত তুলে নাচতে প্রস্তুত তাঁরা শিল্পী? এগুলো দেখে আমার গা রি রি করে। এইরকম পরিস্থিতিতে তো কার্নিভাল স্থগিত করা যেত না?'
শ্রীলেখা মিত্রর সংযোজন, 'যাঁরা এই ধরনের কাজ করছেন তাঁরা তো পাবলিক ফিগার। বহু মানুষ তাঁদের অনুসরণ করেন। তাঁরাই তো জীবনে চলার সঠিক পথ দেখাবেন। তাছাড়া এমন একটা দিনে সেজেগুজে কার্নিভালে নাচ করাও তো অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ। যাঁরা নাচছেন তাঁদের ছবির দর্শকই তো এবার ছিছিক্কার করবে। তাঁদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। আমি সত্যিই আমার মনটাকে কলুসিত করতে চাই না।'
ফোনের ওপারে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন শ্রীলেখা। কথাগুলো যেন গলার সামনে দলা পাকিয়ে আসছিল। তিনি বলেন, 'আমি এগুলো মানতে পারি না। এত মানুষের হাহাকার, কত পশুর প্রাণ চলে গেল! যাঁরা কার্নিভালে নাচল তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটত তাঁরা নাচতে পারতেন? আসলে ওঁরা সরকারের স্নেহধন্য। অন্য কেউ পাওয়ারে এলে এরাই আবার তাঁর পাশে দাঁড়াবে। মানুষ প্রচণ্ড ধান্দাবাজ। যাঁরা এই সরকারকে ভোট দেয় তাদের প্রতি সত্যিই আমার করুণা হয়।'