২০১৯, টলিউডের জন্য বেশ ঘটনাবহুল বটে। শহরের এক নামী প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধারের গ্রেফতারি দিয়ে শুরু হয়েছিল, তালিকাটা বছরের শেষে বেশ লম্বা। ট্রোলিং, আইন আদালত, বিয়ে, সিনেমা রিলিজ সব বিষয়েই ঝক্কি পোহাতে হয়েছে টলিউডকে। বছরের শেষে তাই ঘুরে দেখা বাংলা সিনেমা জগত সম্পর্কিত বেশ কিছু চর্চিত বিষয়।
ভবিষ্যতের ভূত:
অনীক দত্ত-র ছবি 'ভবিষ্যতের ভূত' হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় কলকাতার সিনেমা হল থেকে। ১৫ ফেব্রুয়ারী মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। কিন্তু ছবি মুক্তির একদিনের মধ্যেই রাজ্যের প্রায় সমস্ত সিনেমা হল থেকে তুলে নেওয়া হয় ছবিটি। তবে কী কারণে এই পদক্ষেপ তা স্পষ্ট হয়নি। ছবি বন্ধের পর প্রতিবাদ, জমায়েত হয়েছে, কিন্তু জট কাটছিল না। অবশেষ, সমস্যার সমাধানে হস্তক্ষেপ করেছিল শীর্ষ আদালত। 'ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমার অবাধ প্রদর্শনীতে বাধা দানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে সুপ্রিম কোর্ট।
মিমি-নুসরত ট্রোলড:
তারকাদের জন্য ট্রোলিং আলাদা করে চর্চার বিষয় নয়। কিন্তু মিমি-নুসরতের পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি হইচই ফেলে দিয়েছিল সোশাল মিডিয়ায়। সাংসদ হওয়ার পর লোকসভায় সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে যান দুই অভিনেত্রী ও তৃণমূল সাংসদ। প্রথম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ওয়েস্টার্ন পোশাকে ছবি তুলে পোস্টও করেন। এরপরেই শুরু হয় ট্রোলিং। যদিও ট্রোলারদের পাল্টা দেন জবাব দেন অনেকে।
আরও পড়ুন, বিরক্ত! বিগ বসের বাড়িতে নিজেই বাসন মাজলেন, বাথরুম পরিষ্কার করলেন সলমন
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে ইডির তলব:
অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে তলব করেছিল ইডি। রোজভ্যালি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই ডেকে পাঠানো হয়েছিল টলিউডের এই দুই পরিচিত মুখকে। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছিল, রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে সংশোধনাগারে গিয়ে জেরা করেন তদন্তকারীরা। জেরায় উঠে আসা নয়া তথ্য নিয়েই প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণাকে তলব করা হয়েছিল। সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। অন্যদিকে টলি গ্ল্যামার ক্যুইন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে এসে নায়িকা বলেছিলেন, ''সুন্দর সমাধান হয়েছে।''
নুসরতের নামে ফতোয়া:
বিয়ের পর থেকেই বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন এই নব্য নির্বাচিত সাংসদ। প্রথমদিন সংসদে শপথ নেওয়ার সময় বেগুনি পাড়ের সাদা রঙের শাড়ি, দু’হাতে চূড়া, হাত ভর্তি মেহেন্দি, গলায় মঙ্গলসূত্র, সিঁথিতে সিঁদুর- পরেছিলেন নুসরত। এরপরই শুরু হয়েছিল সমালোচনা। ধর্মসূত্রে তিনি মুসলিম, তাই কী করে সিঁদুর-মঙ্গলসূত্র পরেন? নুসরতের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন ধর্মের কট্টর মৌলবাদীরা। নুসরত-নিখিলের পরিণয়ের বিরুদ্ধে নাকি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফতোয়া জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি নুসরত। ইস্কনের আমন্ত্রন গ্রহণ করা নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন কট্টরপন্থীরা।
আরও পড়ুন: অসমসাহসী মালালা-র বায়োপিক, মুক্তি জানুয়ারিতেই
জ্যেষ্ঠপুত্র কপিরাইট:
পরোক্ষভাবেই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র চিত্রনাট্য চুরির অভিযোগ এনেছিলেন পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্ত। জ্যেষ্ঠপুত্র’র ঘোষণা হবার পরেই চিত্রনাট্য চুরি নিয়ে সরব হয়েছিলেন প্রতিম। তাঁর বক্তব্য ছিল, ঋতুপর্ণ ঘোষ ও তিনি একসঙ্গে স্ক্রিপ্টটা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ইন্দ্রনীল ঘোষ (ঋতুপর্ণর ভাই) সেটা কৌশিককে দিয়ে দেন। তাঁর নামটা পর্যন্ত নেওয়া হয় না সাংবাদিক সম্মেলনে। পরে অবশ্য সমস্তটা মিটে গিয়ে মুক্তি পেয়েছিল কৌশক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’।
আরও পড়ুন: বাংলা ওয়েবে সেরা ৭টি কাজ ২০১৯
গুমনামী বিতর্ক:
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘গুমনামী’ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। বছরের সবথেকে চর্চিত বিষয় ছিল এই ছবি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র অন্তর্ধান রহস্য নিয়েই মূলত এই ছবি। নেতাজির পরিবারের তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, অন্যদিকে ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকেও আপত্তি ছিল। শেষপর্যন্ত জনস্বার্থ মামলাও হয়েছিল এই ছবিকে ঘিরে। আইনি নোটিস পেয়েছিলেন সৃজিত। কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা, তারপরেই কেটেছিল গুমনামী মুক্তি নিয়ে জটিলতা।
আরও পড়ুন, গরুমারায় ড্রোন উড়িয়ে শুটিং, জরিমানা হল সৃজিতের
আরও পড়ুন, সৃজিতের ‘ফেলুদা ফেরত’, প্রকাশ্যে সিরিজের লুক
চলচ্চিত্র উৎসবে রাজ-প্রসেনজিৎ দ্বৈরথ:
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে চেয়ারম্যান পদ নিয়ে টানাপোড়েন চলেছিল অনেকদিন ধরে। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কমিটিতে বড় রদবদল হয়েছিল। চেয়ারম্যানের পদ থেকে বাদ পড়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সেই পদে আসীন হয়েছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। রাজ চক্রবর্তীকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান ঘোষণা করার দু’দিনের মধ্যেই অ্যাডভাইসরি কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কিফের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি ইন্ডাস্ট্রিকে। পরবর্তীতে অবশ্য নন্দনে হাজির হয়ে সমস্ত জল্পনা মিটিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা। উল্টোদিকে, অ্যাপেক্স অ্যাডভাইসরি কমিটিতে তাঁর নাম রাখা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অপর্ণা সেন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন পরিচালক-অভিনেত্রী।