ভবিষ্যৎ প্রায় অন্ধকার হতে বসেছিল 'ভূতেদের'। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম রায়ে খানিক স্বস্তি। আদালতই ভবিষ্যত নির্ধারণ করেছে 'ভবিষ্যতের ভূত'-এর। সিনেমার প্রদর্শন শুরু করতে হবে অবিলম্বে, শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সবোর্চ্চ আদালত জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে এজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রেক্ষাগৃহের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। অনীক দত্তের ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমাটির প্রযোজকের তরফে আদালতে জানানো হয়, সিবিএফসির সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও পুলিশ জোর করে প্রদর্শন বন্ধ করেছে। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও আদালতকে জানিয়েছেন প্রযোজনা সংস্থার আইনজীবি।
এদিন রায়ের কথা শুনেই স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন প্রযোজক ও পরিচালক। কলাকুশলীদের মধ্যেও যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। কৌশিক সেন বলেছেন, ''এটাই তো হওয়ার কথা। যারা ছবিটার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা ছাড়াও প্রত্যেকে যারা চেয়েছিলেন ছবিটা মুক্তি পাক সকলেই খুশি। দের আয়ে পর দুরুস্থ আয়ে''।
আরও পড়ুন, অবিলম্বে ভবিষ্যতের ভূতের প্রদর্শন শুরু করতে হবে, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
তবে বাদশা মৈত্রের কণ্ঠস্বর বেশ আবেগপ্রবণ। তিনি বললেন, ''ভীষণ ইতিবাচক একটা সিন্ধান্ত। কোনও ছবিকে কারণ ছাড়া হল থেকে তুলে নেওয়া যায় না। অন্য রাজ্যে ছবি ব্যান হলে আমরা পশ্চিমবঙ্গে সেই ছবিকে আমন্ত্রণ করি। সেখানে কলকাতা শহরে এমন একটা ঘটনা অনভিপ্রেত। পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় বুদ্ধিজীবী 'আগেও হয়েছে পরেও হচ্ছে' বলে একটা কথা বলার চেষ্টা করেন। তাঁদের বলতে চাই, আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এ অবস্থা দেখিনি। অতীতেও এরকম কিছু হলেও, শো কিন্তু হলে চলেছে, কোন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে তৎকালীন সরকার এই ধরনের আচরণকে ধিক্কার জানিয়েছে। আমার সেইসব বুদ্ধিদীবীদের জন্য লজ্জা অনুভব হয়''।
অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত বললেন, ''আমি প্রথম দিন থেকে বলে এসেছি, কোনও লড়াইয়ের তখনই মানে আছে, যখন তা শেষ পর্যন্ত লড়ে নেওয়া যায়। ছবিটা হলে ফেরারই ছিল। তবে এই ছবির কলাকুশলীরা ছাড়া যাঁরা লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন, তাঁদের সাধুবাদ। ভৌতিক উপরওয়ালা ও ইন্ডাষ্ট্রির যেসব মানুষরা যারা 'বোবা, কালা ও কানা' হয়ে আছেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দিতে পেরেছি''।
আরও পড়ুন, সিনেমা হল থেকে উধাও ‘ভবিষ্যতের ভূত’, ক্ষোভ অভিনয় জগতে
সায়নীর বক্তব্য, ''আমি ভীষণ খুশি এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য গর্বিত। যাঁরা স্বতন্ত্রভাবে ছবি তৈরি করেন, তাদের সমর্থনের প্রয়োজন হয়। এই আচরণ আমরা রাজ্য সরকারের থেকে প্রত্যাশা করি। কিন্তু এ বিষয়টা নিয়ে সমর্থন তো দূরের কথা কেউ মুখ খুলতেই রাজি হয়নি। সেখানে এই রায় আস্থা ফেরায় দেশের আইনি ব্যবস্থার প্রতি''।
ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ''খুবই আনন্দের। একটা সেন্সরর্ড হয়ে যাওয়া ছবি অজ্ঞাত কারণে হল থেকে নামিয়ে নেওয়া ও সেটা নিয়ে প্রশাসনের নীরবতা, রীতিমতো অদ্ভুত! এর কারণ পর্যন্ত জানা যায়নি। এর কোনও সমাধান না হলে বিষয়টা আরও বাড়ত। এমন ঘটনা ঘটার প্রবণতাও বাড়ত। সেদিক থেকে রায়টা ঐতিহাসিক। এতে যাঁরা নিজেদের কথা বলতে চায়, তাঁরা সাহস পাবেন। এই ব্যাপারটা সিনেমা মাধ্যমটার জন্য বিশেষ প্রয়োজন''।
সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খুশি হয়েছি তো বটেই। কিন্তু ব্যাপারটায় আনন্দ করার মতো কিছু নেই। একটা সুস্থ শিল্পমাধ্যমকে এই লড়াইটা করতে হল, এটাই লজ্জার বিষয়''। সবমিলিয়ে এদিনের রায়ের পর 'ভবিষ্যতের ভূতে'র ভবিতব্য মেঘমুক্ত হলে বলে মনে করা হচ্ছে।