/indian-express-bangla/media/media_files/2025/05/01/W2E6lW5BlhT2Ya4Q8N1V.jpg)
কী বলছেন পরিচালকরা এই প্রসঙ্গে! Photograph: (ফেসবুক )
Federation vs director: ফেডারেশন বনাম গিল্ডের লড়াই চলছে ক্রমাগত। শেষ একটা বছরে পরিচালক বনাম গিল্ডের তরফে যে ধরনের আলোচনা এবং ঘটনা ঘটেছে, তারপর অবশেষে তাঁরা কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা বারবার প্রথম থেকে বলে এসেছেন, টেকনিশিয়ানরা আমাদের শত্রু নন। তাঁদের সঙ্গে আমাদের বহুদিনের সম্পর্ক। তাঁরা কাজ হারাক আমরা কেউ চাই না। সম্প্রতি সাড়ে ১৫ মিনিটের একটা মিটিংয়ে এসে তাঁরা নানা কথা বলেছেন। অনির্বাণ থেকে পরমব্রত এমনকি, সুদেষ্ণা রায়কেও দেখা গিয়েছিল এই ভিডিওতে মন্তব্য করতে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল রাহুল মুখোপাধ্যায়ের শুটিং নিয়ে। চরকির প্রযোজনায় একটি ছবি বানানো নিয়েই শুরু হয় অশান্তি। কারণ ফেডারেশন চরকির কাছ থেকে চারগুণ বেশি টাকা দাবি করে, যেহেতু তাঁরা বিদেশী কোম্পানি। তারপর সেই জল অনেকদূর গড়িয়েছে। বহু ছবির কাজ বন্ধ হয়েছে। গত বছর মাত্র ৩৬ টা ছবির শুটিং হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পরিচালক সুদেষ্ণা রায় বলেন, টেকনিশিয়ানদের বলা হয়েছে, পরিচালকরা নাকি তাদের বিরুদ্ধে। একদম ভুল! তারা যেমন দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন, ঠিক আমরা তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু প্রবল চাপ এবং হুমকির মুখে তারা তাদের মনের কথা সহজে বলতে পারেন না। তবুও যদি অপর প্রান্তের দিবারাত্রি অপপ্রচারের ফলে কোন সন্দেহ হয়ে থাকে তবে আমরা এর মাধ্যমেই জানানোর চেষ্টা করছি।
পরিচালক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর কথায়, চরকি একটি বিদেশী সংস্থা এবং তারা আমাদের দেশে এসে বহুবহু কনটেন্ট বানাত। এই কাজগুলো বন্ধ হয়ে গেল। চরকি যে ফেডারেশনের গা জোয়ারির জেড়ে বাংলাদেশের ফিরে গেল, এতে যেমন পরিচালকদের কাজ গেল, তেমনি কিন্তু প্রতি ইউনিট হিসেবে ৫০ থেকে ৬০ জন করে টেকনিশিয়ান কাজ হারালো।
পরিচালকরা কী বলছেন?
তাদের কথা এই যে এতগুলো মানুষ কাজ হারালো, তাতে ক্ষতিটা কার হল? কারা তাদের স্বার্থে আঘাত করলেন। সেই সময় কর্ম বিরতি তুলে নেওয়া হয়েছিল এই কারণেই, কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন একটি কমিটি গঠন করা হবে। এবং সে কমিটির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান করা হবে। আমরা পরিচালকরা তিনমাস অপেক্ষা করলাম, এবং প্রয়োজনে আরো একমাস অপেক্ষা করলাম। তারপরে আমরা দেখলাম, একটা কমিটি তৈরি করতে যে ধরনের নোটিশ লাগে, সেটাই করা হয়নি। আমরা অনেকবার ইমেল এর মাধ্যমে চিঠি দিলাম। কিন্তু সেই সব মেলের উত্তর আমরা আজও পাইনি। সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেল। চারমাস পর যা হলো সেই কথা তারা বললেন।
তাদের কথায়, চার মাস পর আমরা কিছু নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে, এবং ফেডারেশনের কিছু রীতিনীতি নিয়ে একটু প্রেস কনফারেন্স করি। যে কারণে তারা আমাদের উপর ক্ষেপে যায়। শুধু তাই নয়, এই সময় যে পরিচালকরা সেখানে বসেছিলেন, তাদের কাজে বাধা দিতে শুরু করেন তারা। টেকনিশিয়ানদের সোজাসুজি বলা হলো যে এই পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা যাবে না। কাজে যখন কোন টেকনিশিয়ান আসেন না তখন টালিগঞ্জের সবাই জানেন, উপর থেকে চাপ দিয়ে ভয় দেখিয়ে কাজে আটকানো হয়। সমস্যাটা পরিচালক এবং ফেডারেশনের মধ্যে। টেকনিশিয়ানকে মাঝখানে রেখে এই ধরনের কোন কাজ করা উচিত নয়। তাদের রুজি রোজগার আটকানোর পরিকল্পনা, এটা কি তাদের স্বার্থে কাজ করা?
Uttam Kumar: নায়িকার ম্যানেজারের কাছ থেকে একটা ফোন, রাতারাতি মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তম?
ফেডারেশনের নিজস্ব নিয়ম:
পরিচালকরা যে নিয়মগুলি পাল্টানোর কথা বারবার বলছেন, এগুলি নাকি ফেডারেশনের বানানো, এবং এগুলি পাল্টে গেলে নাকি টেকনিশিয়ানের অসুবিধা হবে। পরিচালকরা জানিয়েছেন, এগুলো সব ফেডারেশনের নিজস্ব করার নিয়ম। এবং ফেডারেশন ট্রেড ইউনিয়ন। ভারতবর্ষের কোন রাজ্যে কোন আইনে কোন ট্রেড ইউনিয়ন, নিয়ম বানাতে পারেন না। এটা দেশের আইন এবং নিয়ম বহির্ভূত কাজ। ভারতবর্ষের কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কোন ফেডারেশনে এই ধরনের কোন নিয়ম পালন করেন না। যে নিয়ম গুলো নিয়ে আমরা বারবার কথা বলতে চেয়েছি সেই নিয়মগুলো নিয়ে ফেডারেশন তরফে আমাদের সাথে কোনোরকম আলোচনা করা হয়নি। এবং সেই নিয়মগুলো ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যতে নেই। ফলও তো কোন অন্য পরিচালক বা প্রযোজক, খুব দরকার না পড়লে এই রাজ্যে কাজ করতে আসতে চাইছেন না।
বাজেট প্রসঙ্গ:
ফেডারেশনে নিয়মের কারণে বহু ছবির সংখ্যা যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি বাজেট অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানরা এই প্রসঙ্গে জানেন বলে দাবি পরিচালকদের। ফেডারেশন টেকনিশিয়ানদের কাজে লাগিয়ে বাজেট বাড়িয়ে চলেছে, এবং সেই কারণেই শুটিংয়ের দিন ক্রমশ কমছে। সাধারণত একটা বাংলা ছবি এখন ১২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুট হয়।
সবাই ভয় পেলেও কেউ কেউ ভয় পান না। পরিচালকরা বারবার আলোচনায় বসতে চেয়েছেন তাদেরকে অসহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের কথায়, আলোচনায় বসলে হয়তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তবে তারা ভেবেছেন, শুধুমাত্র চোখ রাঙিয়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রি নিজের আয়ত্তে রাখবে। আমরা আর কোন উপায় না দেখে বাধ্য হয়েছি মহামান্য হাইকোর্টের কাছে যেতে। আমাদের কাছে সত্যি আর কোনো রাস্তা নেই।
আদালত প্রসঙ্গ:
আদালতের নির্দেশে এটা নিষ্পত্তি হবে। আদালত দুটি সুনানি করে এর মধ্যে রায় দিয়েছেন। যারা প্রচারের চেষ্টা করছেন যে আদালত কিছু রায় দেননি, তারা ভুল জানেন। কি কি রায় দেওয়া হয়েছে?
১. যে ১৫ জন পরিচালক, উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন, তাদের কাজে কোন রকম বাধা দেওয়া যাবে না। অথচ সেটি হয়েছে।
২. আদালত আরো নির্দেশ দিয়েছে, যেহেতু কোড অফ কন্ডাক্ট চালু নেই, সেই ভিত্তিতে তৈরি করা ইউনিক কার্ড বেআইনি, মেম্বার টু মেম্বার কাজ করার যে যুক্তি সেটাও বেআইনি।
সম্প্রতি সুদেষ্ণা রায়ের কেস নিয়ে জল ঘোলা বেশি হয়। পরিচালকরা জানিয়েছেন, সুদেষ্ণা রায় সিডিউল ঘোষণা করার পরেই যে টেকনিশিয়ানরা অলিখিত কাজে আসতে মানা করে দিলেন, এ প্রসঙ্গে তারা উচ্চ আদালতে জানাবেন। এবং তারা আশা করছেন যে গিল্ডের প্রত্যেকটি সম্পাদকের কাছেই এই প্রসঙ্গে উত্তর রয়েছে।