/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/30/naseem-2025-10-30-10-49-08.jpg)
কে এই অভিনেত্রী?
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সায়রা বানুর নাম সকলেই জানেন। যার অভিনয়, রূপ, সৌন্দর্যে একসময় বুদ হয়েছিলেন হাজার হাজার দর্শক। কিন্তু যা অনেকেই হয়তো জানেন না, তা হল সায়রার তারকাখ্যাতির বহু আগেই তাঁর মা নাসিম বানু ছিলেন ভারতীয় সিনেমার প্রথম মহিলা সুপারস্টার। তিনি ছিলেন সৌন্দর্য, মর্যাদা আর অভিনয় দক্ষতার এক অনন্য প্রতীক, যিনি নিজের ইচ্ছা আর পরিশ্রমে বদলে দিয়েছিলেন নিজের জীবনের ভাগ্যের চাকা।
পুরনো দিল্লিতে রোশন আরা বেগম নামে জন্ম সায়রা বানুর মা নাসিম বানুর। ছোটবেলা থেকেই সংগীত ও নাচের পরিবেশে বেড়ে ওঠা। তাঁর মা চামিয়ান বাই (শমসাদ বেগম নামেও পরিচিত ছিলেন, তবে বিখ্যাত গায়িকা শমসাদ বেগম নন) তিনি ছিলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় তবায়েফ ও গায়িকা। তবে মেয়ে যেন এই জগতে না আসে, সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ইচ্ছে। মা চেয়েছিলেন, মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হোক, সমাজে সম্মান অর্জন করুক।
Chanchal Chowdhury Top 5 Dramas: চঞ্চল চৌধুরীর এই ৫টি নাটক, দেখলে হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে...
/indian-express-bangla/media/post_attachments/2025/10/naseem-2-143881.jpg?resize=600,338)
কিন্তু ভাগ্য লিখছিল অন্য গল্প। দিল্লির কুইন মেরিস হাই স্কুলে পড়ার সময় এক গ্রীষ্মের ছুটিতে মা-সহ মুম্বই বেড়াতে এসে একদিন সিনেমার স্টুডিওতে ঢুকে পড়েন নাসিম। আলো, ক্যামেরা, সেটের জগৎ তাঁকে মুগ্ধ করে। সেদিনই ঠিক করেন, তিনি অভিনেত্রী হবেন। কিন্তু মা ছিলেন একদমই নারাজ। তখন নাসিম অনশন শুরু করেন। শর্ত ছিল মায়ের অনুমতি না মেলা পর্যন্ত তিনি মুখে তুলবেন না খাবারের একটি দানাও। অগত্যা মেয়ের ইচ্ছার কাছে হার স্বীকার করেন মা।
১৯৩৫ সালে সোহরাব মোদীর ‘খুন কা খুন’ ছবিতে অভিনয় দিয়ে নাসিম বানুর বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। ছবিটি ছিল শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট-এর হিন্দি রূপান্তর, আর নাসিম অভিনয় করেন ওফেলিয়ার চরিত্রে। তাঁর অভিনয়, সৌন্দর্য আর সরলতায় মুগ্ধ হন পরিচালক সোহরাব মোদী। পরে তিনি নাসিমকে নিজের ব্যানার ‘মিনার্ভা মুভিটোন’-এর সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেন।
খ্যাতির শিখর থেকে বিতর্কের অন্ধকারে, শ্লীলতাহানির অভিযোগ শেষ করে দিল জীবন, চেনেন এই অভিনেতাকে?
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা ছবিতে অভিনয় করে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নাসিম। ১৯৩৯ সালে পুকার ছবিতে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের চরিত্রে অভিনয় তাঁকে প্রকৃত অর্থে সুপারস্টার বানিয়ে তোলে। চরিত্রটিকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সেসময় তিনি ঘোড়ায় চড়া ও গানের প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নিয়েছিলেন। ছবির গান ‘জিন্দগি কা স্যাচ ভি কেয়া স্যাচ হ্যায়’, ব্যাপক জনপ্রিয় হয়, আর দর্শকরা ভালোবেসে তাঁর নাম রাখেন, ‘পরি চেহরা’, অর্থাৎ পরির মতো মুখশ্রী।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/2025/10/naseem-4-946734.jpg?resize=600,338)
১৯৪০ ও ৫০-এর দশকে নাসিম বানু ছিলেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা। অশোক কুমারের সঙ্গে তাঁর চল চল রে নওজোয়ান (১৯৪৪) ছিল বড় সাফল্য। এরপর তিনি অভিনয় করেন অনোখি আদা (১৯৪৮, মহবুব খান), শীশ মহল (১৯৫০, সোহরাব মোদী), এবং শবিস্তান (১৯৫১, বিপরীতে ছিলেন শ্যাম), ছবির শুটিং চলাকালীনই দুর্ঘটনায় মারা যান।
সিনেমার পাশাপাশি, স্বামী মিয়ান এহসান-উল-হকের সঙ্গে মিলে নাসিম তৈরি করেন, ‘তাজমহল পিকচার্স’ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা। এই ব্যানারে তৈরি হয় উজালা (১৯৪২), বেগম (১৯৪৫), মুলাকাত (১৯৪৭), চাঁদনি রাত (১৯৪৯) ও অজীব লড়কি (১৯৫২)–এর মতো একাধিক ছবি। এর মধ্যেই তাঁদের সংসারে আলো করে আসে দুই সন্তান, সায়রা বানু ও সুলতান আহমদ।
সত্যিই 'দুর্লভ' সঞ্জয়ের 'দুসরী দুলহানিয়া' মহিমা?
দেশভাগের পর এহসান পাকিস্তানে চলে যান, নাসিম সন্তানদের নিয়ে থেকে যান ভারতে। তাঁদের দাম্পত্য বিচ্ছেদ হলেও, এহসান পাকিস্তানে তাঁদের প্রযোজিত ছবিগুলো রিলিজ করেন, যার মাধ্যমে সেখানকার দর্শকেরাও নাসিমের অভিনয় উপভোগ করেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/2025/10/naseem-3-707618.jpg?resize=600,338)
পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে অভিনয় থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন নাসিম বানু। তবে সিনেমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। তিনি মেয়ে সায়রা বানুর ছবিগুলির জন্য নিজের হাতে ড্রেস ডিজাইন করতে শুরু করেন। তাঁর ডিজাইন করা নকশায় ফুটে উঠত নান্দনিকতা আর সূক্ষ্ম রুচির ছাপ, যা সায়রার পর্দার উপস্থিতিকেও আরও আকর্ষণীয় মোহময় করে তুলেছিল।
সায়রা বানু মাকে স্মরণ করে একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, দিলিপ কুমার ও অমিতাভ বচ্চন দু’জনেই বলতেন, নাসিম বানু তাঁদের দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা। তবে শুধু বাহ্যিক রূপ নয়, তাঁর ভেতরের সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব এসবই তাঁকে সত্যিকারের মনের মানুষ করে তুলেছিল। সন্তানদের লন্ডনে পড়ালেও, নাসিম সবসময় তাঁদের ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত রেখেছিলেন। প্রতি বছরই তাঁরা গ্রীষ্মকাল কাটাতেন মুম্বই বা দিল্লিতে পরিবারের সঙ্গে।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া-এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সায়রা বানু ও দিলিপ কুমারের বিয়েতে নাসিম বানুর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০০২ সালের ১৮ জুন, মুম্বইয়ে ৮৫ বছর বয়সে নাসিম বানুর মৃত্যু হয়। রেখে যান এক অনন্য উত্তরাধিকার, একটা নাম ভারতের প্রথম মহিলা সুপারস্টার। যার নাম আজও সম্মানের সঙ্গে বলা হয়। তিনি শুধু একজন অভিনেত্রী ছিলেন না, ছিলেন অনুপ্রেরণা,যার সৌন্দর্য, সাহস, প্রতিভা আর মর্যাদার মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমা জগতের মুকুটে যোগ করেছিল এক নতুন পালক।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)

Follow Us