Satyam Majumder: সোনাদানা বন্ধক-কাঁধে ঋণের বোঝা! সস্তার চাল-ডাল খেয়ে দিন গুজরান জগদ্ধাত্রীর 'সাধু দা' সত্যমের

Satyam Majumder Financial Crisis: চরিত্র অভিনেতা হিসেবে বাংলা মেগার দর্শকের কাছে অত্যন্ত পরিচিত সত্যম মজুমদার। অমিতাভ বচ্চন থেকে আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গেও কাজ করেছেন। কিন্তু, আজ কর্মহীন জীবনে চরম অর্থাভাব! বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বললেন জগদ্ধাত্রী খ্যাত সত্যম মজুমদার।

Satyam Majumder Financial Crisis: চরিত্র অভিনেতা হিসেবে বাংলা মেগার দর্শকের কাছে অত্যন্ত পরিচিত সত্যম মজুমদার। অমিতাভ বচ্চন থেকে আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গেও কাজ করেছেন। কিন্তু, আজ কর্মহীন জীবনে চরম অর্থাভাব! বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বললেন জগদ্ধাত্রী খ্যাত সত্যম মজুমদার।

author-image
Kasturi Kundu
New Update
cats

সত্যমের সুদিন ফিরবে?

Satyam Majumder Crisis Situation: অভিনয় জগৎ বড়ই অনিশ্চিত। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত কম-বেশি সকলেরই একই বক্তব্য। কাজ না থাকলে চরম দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয়। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের চাকচিক্যের আড়ালে থাকে সেই কঠিন লড়াইয়ের গল্প। সম্প্রতি জগদ্ধাত্রীর দাপুটে পুলিশ অফিসার সাধু বাটোয়াল ফেসবুকে নিজের দৈনদশা নিয়ে লিখতে বাধ্য হলেন, যদি একটা কাজ পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন কাঁধে ঋণের বোঝা, কম দামী চাল-ডাল খেয়ে দিন গুজরান করছেন পর্দার দাপুটে পুলিশ অফিসার সত্যম মজুমদার। 

Advertisment

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রথমত আমি তো চরিত্র অভিনেতা হিসেবে কাজ করি। জগদ্ধাত্রীতে যে ধরনের চরিত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম সেরকম চরিত্র খুব কমই পেয়েছি। এর আগে 'কেয়া পাতার নৌকা'-তে এইরকম একটানা কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম। 'চোখের তারা তুই'-তেও অনেকদিন কাজ করেছিলাম। গুরুত্ব অনুযায়ী এই দুই চরিত্রের তুলনায় অনেকটাই কম তবে রোজগারটুকু হত। জগদ্ধাত্রীর গল্প ২০ বছর এগিয়ে যেতেই সমস্যায় পড়লাম। তবুও স্নেহাশিষ বাবু আমার জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, গল্পে তো একটা মেদ থাকে, সেটা তো ব্রেক করা সম্ভব নয়। তাই উনি চেষ্টা করেও আমার জন্য কোনও চরিত্রের ব্যবস্থা করতে পারছেন না।' 

আরও বলেন, '২০২৪-এর ৩১ ডিসেম্বর জগদ্ধাত্রীতে শেষ কাজ। তারপরও পাঁচদিন মতো স্নেহাশিষ দা আমাকে ডেকেছিলেন। এখন তো সম্পূর্ণ কর্মহীন জীবন। আমাদের তো সেভিংস নেই বা মোটা টাকা মাইনে পেতাম না যে ঘরে বসেই খাবারের জোগান হয়ে যাবে। অনেক প্রোগ্রামারকে কাজের জন্য বলেছিলাম। তখন  'কোন গোপনে মন ভেসেছে' -তে তিনদিনের একটা কাজ পেয়েছিলাম। সান বাংলার  'শোলক শাড়ি'-তে একটা চরিত্রে কয়েকদিন কাজ করেছিলাম। তারপর আবার সেই কাজের আশায় অপেক্ষার প্রহর গোনা।' 

Advertisment

আরও পড়ুন 'ছুটি ভাল লাগে কিন্তু...', মঙ্গলের সকালে আচমকা 'আনন্দী'-র শুটিং বাতিল নিয়ে কী বললেন অন্বেষা?

সত্যমের আপশোস, 'উত্তর কলকাতা থেকে ঠিকানা বদলে এখন টালিগঞ্জে থাকি। ভেবেছিলাম এখানে থাকলে আরও বেশি কাজ করতে পারব। প্রতিদিন ভাড়া গাড়িতে বাড়ি ফিরলে পকেটে টান পড়ত। বালির ফ্ল্যাট ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করে এখানে বাড়ি কিনেছি। সেটা সাজাতে আবার ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই বাড়িটাও কিনতে খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সাজানো গোছানোর জন্য আরও ১২ লাখ! ঘরের সোনাদানা সবই বন্দক রাখতে হয়েছে। বাকিটা লোন নিয়েছি। আর ঋণ তো পরিশোধ করতেই হবে। বাড়ির সামনে পাওনাদার এলে সম্মানহানি হবে।' 

সত্যমের সংযোজন, 'সব মিলিয়ে খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছি। দু-পাঁচদিনের কাজে তো আর সংসার চলে না। আমার ছেলে সদ্য একটি চাকরিতে ঢুকেছে। ওঁর টাকায় সংসারের খরচ চলে। এছাড়াও তো ইলেকট্রিক বিল, লোনের টাকা আছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। কোনওদিন ভাবিনি আমাকে এভাবে লিখতে হবে। এই সমস্যার জন্য বাড়ির সদস্যদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে ফেলছিলাম। তাই ভাবলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট দিই। যাঁরা আমাকে চেনেন না তাঁদের নজরে যদি আসতে পারি। যদি একটা কাজ পাই।' 

আরও যোগ করেন,  'শুটিংয়ের পর কোনওদিনই কোথাও যাইনি। তাই বাইরের জগৎ সম্বন্ধে আমার ধারণাটাও একদম নেই। আমি দু'জন মানুষকেই চিনি। একজন স্নেহাশি, চক্রবর্তী অপরজন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। অস্থির অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে। ন্যূনতম খাবারটুকু তো প্রয়োজন। সস্তার চাল-ডাল কিনে কোনওক্রমে দিন গুজরান করছি। কেন কাজ পাচ্ছি না সেই উত্তর আমার কাছে নেই। রাজ  'রাজেশ্বরী রানী ভবানী -তে সাতদিন কাজের পর আবার আমার ট্র্যাকটা বন্ধ আছে। সেই  সময় আবার  'ভিডিও বউমা '-তে তিনদিনের ক্যামিও করলাম। একই সময়  'জগদ্ধাত্রী ' থেকেও দুদিনের কাজ পেলাম। 

সত্যম বলেন, 'শিল্পীদের জীবনে এমনটাই হয়। যখন কাজ আসে তখন একসঙ্গে অনেকগুলো আর যখন থাকে না তখন কিছুই থাকে না। এই সমস্যা আমার একার নয়, বহু শিল্পীর। লকডাউনের পর থেকে থিয়েটার জগৎ-এর বহু শিল্পী ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। আমরা যাঁরা দীর্ঘদিন টলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের থেকে অনেকটা কম খরচে থিয়েটার শিল্পীদের দিয়ে কাজ হয়ে যাচ্ছে। এটাও কাজ না পাওয়ার অন্যতম বড় কারণ। থিয়েটার যাঁরা করেন তাঁদের তো অভিনয়ের ভিতটা মজবুত। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি নিজেও অনেক ছোট বয়স থেকে থিয়েটার করেছি। তাই বিষয়টা সম্পর্কে আমি অবগত।'

আরও পড়ুন টেলিভিশনের কাজ সরকারি চাকরির মতো, প্রতি মাসে পারিশ্রমিক পাই: শ্রুতি

 একরাশ হতাশা নিয়ে বলেন,  'আমি খুব সাধারণ ঘরের ছেলে। অভিনয়ের উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাই কাজের সুযোগ না পেলে ভবিষ্যৎ-এ কী হবে জানি না। বয়স বাড়ছে, রোগব্যধি হবে। কী করে সামলাব জানি না। তুলসী চক্রবর্তী, গীতা দে-র মতো শিল্পীদের শেষ জীবন ছিল মারাত্মক কষ্টের। একটা আপশোস হয়, এক-একটা হাউজে একসঙ্গে চার-পাঁচটা সিরিয়াল হচ্ছে। একই শিল্পী সেই সিরিয়ালগুলোতে কাজ করছে। তাঁদের পারিশ্রমিকও অনেকটাই বেশি। আর আমাদের মতো আর্টিস্ট যাঁদের পারিশ্রমিক অনেকটাই কম, প্রয়োজনে অ্যাডজাস্ট করি তাঁরা কাজ পাচ্ছে না। এটাই খুব হতাশার। আমরা অভিনয় পারি না?'

সত্যমের যুক্তি,  'কম বয়সী মেয়েদের চুলে রং করে মা-শাশুড়ির চরিত্রে অভিনয় করাচ্ছে অথচ আমাদের মতো যাঁদের সত্যিই কাজের প্রয়োজন সেই শিল্পীদের ডাকছে না। আজকাল তো রিলস, ভ্লগের ফলোয়ার্স উপর শিল্পীর মান নির্ভর করছে। কোয়ালিটি প্রয়োজন, সেটা না থাকলে বেশি দূর এগনো সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।' 

Bengali Serial Satyam Majumder