/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/31/cats-2025-07-31-16-08-25.jpg)
ভাগ্যের পরিহাস
National Award winning actor shafiq syed: প্রতিদিন কয়েক হাজার তরুণ স্বপ্ন দেখে নামজাদা পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে মুম্বই শহরে এসে কাজ করার। কারও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে তো কেউ আবার হারিয়ে যায় গ্ল্যামার দুনিয়ার অন্তরালে। পথচলতি শাফিক সইদকে একটি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত সিনেমার মুখ্য চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হতভাগা যিনি স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রেখেই শহর ছাড়ে। ১৯৮০ সালে শাফিক বাড়ি থেকে পালিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে চেপে মুম্বই চলে আসেন। সিনেমার মতো বাস্তবটাও সুন্দর কিনা পরখ করে দেখতে চেয়েছিলেন। চার্চগেট স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাথে দিন কাটাতেন। একদিন এক মহিলা তাদের একটি অভিনয় কর্মশালায় নিয়ে যাওয়ার অছিলায় ২০ টাকা হাতে গুজে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু তাঁর সিনেমা যাত্রা। সুযোগ পান মীরা নায়ারের সালাম বোম্বে ছবির মুখ্য চরিত্রে।
সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে ছবিটি অস্কার মনোনয়ন পায়। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাফিক বলেছিলেন, 'আমার মনে হয়নি ওই সিনেমাটায় আমি অভিনয় করছি। ওই চরিত্রটা তো ছিল আমার জীবনেরই গল্প। রাস্তায় কাটানো এক জীবন-মৃত্যুর মাঝে থাকা সেই বাস্তবতাই আমি পর্দায় এনেছিলাম' সহ-অভিনেতা হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন রঘুবীর যাদব, নানা পাটেকর, অনিতা কনওয়ারদের।
আরও পড়ুন রাস্তায় রাত কাটানো-উচ্ছিষ্ট খেয়ে পেট ভরানো! 'শোলে' খ্যাত অভিনেতার করুণ কাহিনি শুনলে চোখে জল আসবে
শুটিং শেষে শাফিক পারিশ্রমিক বাবদ পান ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ছবি শেষে আর কাজের সন্ধান পাননি। দীর্ঘ আট মাস প্রযোজকদের দরজায় কড়া নেড়েছেন। পকেটে ছিল কাগজের কাটিং আর নিজের ছবি। অনেক সময় সহকারী পরিচালক শুধু জিজ্ঞেস করেছেন, 'আজ খেয়েছো?' ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'সালাম বোম্বে যেন একটা দুঃস্বপ্ন। ভারতের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। কয়েক মিনিটের খ্যাতি আর জীবনের শূন্যতা আমাকে পাগল করে দিয়েছিল। আমি বুঝেছিলাম মুম্বই আর আমাকে জায়গা দেবে না।'
গৌতম ঘোষের পাতঙ্গ-এ অভিনয়ের সুযোগ আসে তাঁর কাছে। ১৯৯৩ সালে তিনি চিরতরে মুম্বই ছেড়ে চলে যান বেঙ্গালুরুতে। শুরু করেন অটো রিকশা চালানো। এর মাঝে দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। একবার মুম্বইয়ের চৌপাট্টি সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আর এককবার বেঙ্গালুরুতে বিষ খেয়ে। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু হয় অটো চালানো। পরে তিনি কিছু কন্নড় ধারাবাহিকে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছিলেন।
আরও পড়ুন 'প্রেম-ভালবাসার প্রতি...', ডিভোর্সের পর মারাত্মক পরিণতি, কী হয়েছিল কাঁটা লাগা গার্ল শেফালির?
মীরা নায়ারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল সালাম বালক ট্রাস্ট। রাস্তায় জীবন অতিবাহিত করা ছেলেমেয়েদের জন্য সেটি তৈরি করেছিলেন। অথচ, শাফিক নিজেই সেখানে থাকার সুযোগ পাননি। শাফিক সইদের জীবন ছিল এক বাস্তবধর্মী চিত্রনাট্য! সালাম বোম্বের মতোই রুক্ষ, নির্মম! সিনেমার আলো থেকে ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া এই মানুষটি আজও আমাদের প্রশ্ন ছুড়ে দেন ক্যামেরা কাদের জন্য, আর কারা থেকে যায় তার ফ্রেমের বাইরে!