Subir Banerjee And Uma Dasgupta : সালটা ছিল ১৯৫৫। সেই বছর প্রবাদপ্রতীম পরিচালক সত্যজিৎ রায় সৃষ্টি করেন কালজয়ী ছবি পথের পাঁচালী। যা যুগে যুগে সমাদৃত। রঙিন ছবির ভিড়েও সাদা-কালো ক্যানভাসে তৈরি অপু-দুর্গার নস্ট্যালজিক মুহূর্তগুলো যেন ধ্রুবতারার মতোই উজ্জ্বল। একে একে পথের পাঁচালির অনেক পাতাই খসেছে। ১৮ নভেম্বর হল আরও এক নক্ষত্রপতন! সকাল ৮.১৫ নাগাদ শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন পথের পাঁচালির দুর্গা, উমা দাশগুপ্ত।
মাস্টারপিস পথের পাঁচালী-তে উমা দাশগুপ্তের কালজয়ী অভিনয় গোটা বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। পথের পাঁচালির হরিহর, সর্বজয়া সবাই অতীত। আজ একাকী সত্যজিতের অপু অর্থাৎ সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দিদির মৃত্যুতে শোকাহত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনে তাঁর সঙ্গে স্মৃতিমেদুর মুহূর্তগুলো শেয়ার করেন। রিলের মতোই রিয়েলেও তাঁর দিদি ছিলেন উমা দেবী। পথের পাঁচালীর পর পর্দার ভাই-বোন আর কখনও কেন সিনেমা করেননি? খোঁজ নিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইন।
সত্যজিতের অপু বলেন, 'তখন পাঁচের দশক। প্রমথেশ বড়ুয়া, কাননদেবীরা হিরো-হিরোইন। তাঁদের কাছে চলচ্চিত্র জগৎটাই ছিল একেবারে আলাদা। তাঁরা সাধারণ লোকের সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। সিনেমা জগতের লোকের সঙ্গেই শুধু মেলামেশা করতেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাঙালি চাইত না ওখানে প্রবেশ করতে। তখন রাজা-বাদশাদের রাজত্ব। কেউ সেই গণ্ডির মধ্যে ঢুকতেও চাইত না। আর ঢোকা সম্ভবও ছিল না। আমার বাবা-মা চাননি ছেলে সিনেমা করুক। উমার বাবা-মাও অনুমতি দেননি।'
আরও পড়ুন : খসে পড়ল পথের পাঁচালীর আরেকটি পাতা, প্রয়াত সত্যজিতের 'দুর্গা' উমা দাশগুপ্ত
পথের পাঁচালীর শ্যুটির সেটের প্রতিটি মুহূর্ত আজও অপুর স্মৃতিতে একদম তাজা। দুর্গার মৃত্যুদিনে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অপু বলেন, 'তখন তো বেশ ছোট। তাঁদের মধ্যে ৫ বছরের ব্যবধান ছিল। দিদিকে ভীষণ বিরক্ত করতাম। ওঁর গায়ে মাটি লাগিয়ে দিতাম। কাদা মাখিয়ে দিতাম। কিন্তু, যেসব সময় কাটিয়েছিলেন সেসব আর কখনও ফিরে আসেনি, আর ফিরে আসবেও না। শ্যুটিং সেটেও প্রকৃত অর্থে আমার দিদিই হয়ে উঠেছিল'।
আরও পড়ুন: 'আর কয়েকটা দিন থাকলে ভাল হত', উমা দাশগুপ্তর প্রয়াণে স্মৃতিচারণায় সন্দীপ রায়
সত্যজিতের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্রেন আসার এবং বৃষ্টির দৃশ্যটা করতেই সবথেকে বেশি কষ্ট হয়েছিল। কারণ, সবটাই ন্যাচারাল শট দেওয়ার দরকার ছিল। দিদির মৃত্যুর কথা বলতে গিয়েই তিনি বলেন, "ওই যে বর্ষার যে দৃশ্যটা ছিল, ঠান্ডা লাগার দৃশ্যটা, কিছুতেই বৃষ্টি আসছিল না। আমরা ত্রিপল খাটিয়ে, ছাতা খাটিয়ে বসে ছিলাম, যে কখন বৃষ্টি আসবে। এমনি শট দিলে তো হবে না। এমন দিতে হবে যেন একদম আসল হয়। শাওয়ার টাওয়ার নিয়ে সেটা হত না। সকাল থেকে বসে বসে সবাই মিলে গল্প করছিলাম। যখন বৃষ্টি এল তখন শট হল।"