/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/20/cats-2025-10-20-13-52-07.jpg)
Persis Khambatta-Oscars Presenter: প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো হলিউডে পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন। কিন্তু, জানেন মুম্বইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে পারসিস খামবাট্টা বিদেশের মাটিতে যে নজির গড়েছিলেন তা অনেকের কাছেই কেবল স্বপ্নের মতো ছিল। তিনি ছিলেন হলিউডে কাজ করা এবং সর্বাধিক পরিচিত ভারতীয় সফল ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। যিনি প্রচলিত ধারণা ভেঙে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অভিনেতাদের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিলেন। আজও আইকনিক চরিত্র ‘লেফটেন্যান্ট ইলিয়া’-র জন্য স্মৃতির সরণীতে রয়েছেন পারসিস খামবাট্টা। স্টার ট্রেক: দ্য মোশন পিকচার-এ তাঁর অনবদ্য অভিনয় অস্কারের মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছিল।
বাবার পরিবার ত্যাগ
পারসিস খামবাট্টার জন্ম মুম্বইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। খুব ছোটবেলাতেই জীবন সংগ্রামের মুখোমুখি হন। কারণ মাত্র দুই বছর বয়সে তাঁর বাবা পরিবার ছেড়ে চলে যান। পারসিস সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কিন্তু প্রথম বর্ষেই কলেজ ছেড়ে মডেলিংয়ে মনোনিবেশ করেন। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯৬৮ সালে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এক ফটোগ্রাফার তাঁকে পরিবারের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সময় দেখতে পান। তিনি পারসিসের টেস্ট শট তোলেন যা পরে রেক্সোনা সাবানের বিজ্ঞাপন প্রচারে ব্যবহৃত হয়। সেই প্রচারের সাফল্যই তাঁর মডেলিং কেরিয়ারের সূচনা।
মডেলিং কেরিয়ারের সূচনা
পারসিস খামবাট্টা ১৯৬৫ সালে মিস ইন্ডিয়া খেতাব জিতে সবার নজর কেড়েছিলেন। এমনকী তখন তিনি নিজের কেনা অতি সাধারণ কাপড় পরেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি ছিলেন ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া পেজেন্টের দ্বিতীয় বিজয়ী এবং মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তৃতীয় ভারতীয় নারী। এরপর তাঁর মডেলিং কেরিয়ারের সাফল্যের জার্নি শুরু। এয়ার ইন্ডিয়া, রেভলন, গার্ডেন ভারেলি-সহ বহু বড় ব্র্যান্ডের মুখ ছিলেন তিনি।
বলিউডে আত্মপ্রকাশ
প্রস্তাব আসে বলিউড থেকে। পারসিস অভিনয় করেন 'পিঞ্জর কে পঞ্ছি' -তে। যেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মীনা কুমারী ও মেহমুদ। এরপর তাঁকে দেখা যায় 'বম্বে রাত কি বাহোঁ মেঁ' এবং 'কামসূত্র ভোলেন্ডুং ডের লিবে'-এর মতো ছবিতেও অভিনয় করেন। তবে পারসিসের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বলিউডের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খ্যাতি এনে দেয়।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারসিস
পারসিস নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'আমি ভারতে অনেক কিছু করেছি কিন্তু নিজেকে বড় পুকুরের ছোট মাছ মনে হচ্ছিল। আমি আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি লাভ করেত চেয়েছিলাম। নিজের ভিতরে অনুভব করতে চেয়েছিলাম যে আমি সত্যিই যোগ্য। তাই তিনি লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলাম।' তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ছিল 'রালফ নেলসনের দ্য উইলবি কনস্পিরেসি' যেখানে মাইকেল কেইন, সিডনি পয়তিয়ে ও নিকল উইলিয়ামসন ছিলেন তাঁর সহ-অভিনেতা। এরপর 'কনডাক্ট আনবিকামিং' এও ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন।
আরও পড়ুন 'যদি কেউ বিষ মেশায় তাই ডিম ছাড়া...'! পরভিনের ভয়ংকর মানসিক পরিণতি নিয়ে মুখ খুললেন পূজা
স্টার ট্রেকের জন্য মাথা মুন্ডন
গোল্ডেন গ্লোবস ওয়েবসাইট অনুযায়ী, একবার ভারতে ফেরার পথে দুজন ভারতীয় অভিনেতা তাঁর পোর্টফোলিও চুরি করে নেয়। যা তাঁর কেরিয়ারের জন্য ছিল বিরাট ধাক্কা। তবে এই ঘটনাই পারসিসকে আরও দায়িত্ববান করে তোল। অভিনয়কে আরও গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন। এরপর তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭৯ সালে তিনি স্টার ট্রেক: দ্য মোশন পিকচার-এ লেফটেন্যান্ট ইলিয়া চরিত্রের প্রস্তাব পান যা সিনে ইতিহাসে তাঁকে অমরত্ব এনে দিয়েছে। এই চরিত্রের জন্য সাহসিকতার সঙ্গে মাথা মুন্ডন করেন যা সেই সময় সত্যিই অকল্পনীয় ছিল।
পারসিস বলেন, 'জিন রডেনবেরি ও মাইকেল আইজনার আমাকে হলিউডে নিয়ে আসেন। ৬০০ জনের মধ্য থেকে আমাকে বেছে নেওয়া হয়। ছবির সাফল্য ও মাথা মুন্ডনের গল্পের জন্যই আমি লাইমলাইটে এসেছিলাম।' স্টার ট্রেক-এর সাফল্য তাঁকে হলিউডে পরিচিতি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'সবাই বলল এখানেই থেকে যাও কেরিয়ার উন্নতি হবে। কিন্তু কেউ বলেনি, তারা আমাকে নিয়ে কী করবে তার কোনও পরিকল্পনা নেই।'
আরও পড়ুন যৌন নির্যাতনের শিকার-প্রাণনাশের হুমকি, সহ অভিনেত্রীর হাতে চড়! কে এই বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী?
অস্কারের উপস্থাপক
১৯৮০ সালে তিনিই প্রথম ভারতীয় নাগরিক যিনি অস্কারে উপস্থাপনা করেন। অভিনেতা কবীর বেদি একবার বলেন, 'স্টার ট্রেকের পর সে খ্যাতি পেয়েছিল কিন্তু আর বড় সুযোগ পেল না। এটাই অন্য দেশে অভিনেতা হিসেবে টিকে থাকার বাস্তবতা।' নাইটহকস, মেগাফোর্স, ওয়ারিয়র অফ দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ডসহ কিছু সিনেমায় এবং ম্যাকগাইভার-এর মতো টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেন। তাঁকে Octopussy-তে বন্ড গার্ল চরিত্রের জন্য বিবেচনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই চরিত্রে চূড়ান্ত হন মড অ্যাডামস।
জীবনের শেষ অধ্যায়
পরবর্তী জীবনে পারসিস খামবাট্টার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে। তিনি ছিলেন চেইন স্মোকার এবং মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তাঁর হৃদরোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা তখন বলেন তাঁর হাতে মাত্র তিন মাস সময় আছে। কিন্তু তিনি অবিশ্বাস্যভাবে আরও ১৫ বছর বেঁচে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত ১৯৯৮ সালে ভারতে আসার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন রাজ কাপুর-রাজেশ খান্না টু শাহরুখ-কাজলের সঙ্গে অভিনয়, কিংবদন্তী অভিনেত্রীর শেষযাত্রায় গড়হাজির বলিউড