Bollywood Actress Tragic Life: বলি অভিনেত্রী হানি ইরানির অভিনয় প্রতিভা বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। তবে অভিনেত্রীর বড় বোন ডেইজি ইরানির প্রতিভা অন্তরালে থেকে যায়। বলিউডের স্বর্ণযুগে ডেইজি নিজেও হানির মতো একজন জনপ্রিয় শিশুশিল্পী হিসেবে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে অভিনয় শুরু করে ডেইজি ও হানি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁদের উপস্থিতি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে প্রযোজক-পরিচালকরা প্রায়ই তাঁদের চরিত্রের উপযুক্ত গল্পের সংলাপ ও দৃশ্য পুনর্লিখন করতেন।
ডেইজি ইরানি, ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। কিন্তু, পড়াশোনায় তিনি তেমন আগ্রহী ছিলেন না। এমনকি চতুর্থ শ্রেনিও পাস করতে পারেননি। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় যখন প্রখ্যাত পরিচালক সত্যেন বোস তাকে 'বন্দিশ' ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন। কিংবদন্তি অশোক কুমার এবং মীনা কুমারীর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। মীনা কুমারীর সঙ্গে একটি দৃশ্যের স্মৃতি আজও ডেইজির মনে স্পষ্ট, যেখানে মীনা কুমারীর হাতে সপাটে চড় খাওয়ার দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন। সেই দৃশ্যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ডেইজি, বেশ কয়েকবার শট দিতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন 'মনের গভীর ক্ষত লুকিয়ে রাখলে..', নির্ভায়া গণধর্ষণ প্রসঙ্গ টেনে যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অকপট অনুষ্কা
ডেইজির অভিনয় কেরিয়ারের গ্রাউ দ্রুত গতিতে ঊর্ধমুখী হয়। তিনি রাজ কাপুরের সঙ্গে 'রাহো', দিলীপ কুমারের 'নয়া দৌড়', দেব আনন্দের 'শরাবি' এবং রাজেশ খান্নার 'কটি পতঙ্গ' সহ অসংখ্য ব্লকবাস্টার ছবিতে অভিনয় করেন। চরিত্রগুলো দর্শকের মনে দাগ কেটেছিল। শ্যামা ও ললিতা পাওয়ারের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গেও তার হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে ছিল ঘন অন্ধকার। ডেইজি মুম্বই মিররকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, মাত্র ছ' বছর বয়সে তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/71bd3b02-c6a.jpg)
গায়িকা জোহরাবাই আম্বালেওয়ালির আত্মীয় যিনি তাঁকে মাদ্রাজে একটি ছবির শুটিংয়ে নিয়ে গিয়ে হোটেলের ঘরে যৌন নিপীড়ন করেন। এখানেই শেষ নয়, প্রাণনাশের হুমকিও দেন। ডেইজি সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা কখনও ভুলতে পারেননি। তিনি বলেন, 'পরদিন আমি আবার স্টুডিওতে ফিরে যাই। আমর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার আঁচ কেউ পায়নি। কাউকে বলার মতো সাহস পাইনি।' সেই মানসিক চাপ কৈশোর এবং পরবর্তী জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। অভিনেত্রী বলেন, 'আমি বুঝতাম না কেন আমি পুরুষদের সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ করতাম, বদমেজাজি হয়ে গিয়েছিলাম।'
আরও পড়ুন 'প্রেম-ভালবাসার প্রতি...', ডিভোর্সের পর মারাত্মক পরিণতি, কী হয়েছিল কাঁটা লাগা গার্ল শেফালির?
ডেইজির কিশোর জীবনেও আরও অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে শাড়ি পরিয়ে, স্পঞ্জ ব্যবহার করে পরিণত নারী হিসেবে প্রদর্শন করতে বাধ্য করা হতো। এক প্রযোজকের সঙ্গে একা একটি অফিসে পাঠানো হয়েছিল। যেখানেও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাস্তবের এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো ছোট বোন হানিকে রক্ষা করতে ডেইজিকে সাহায্য করেছিল।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/dc95ac63-974.jpg)
তিনি বলেন, “আমরা দুজনেই একটি বিষয়ে একমত ছিলাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে এই জগত থেকে দূরে চলে যাব।' মা ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং মেয়েকে তারকা বানাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ১৯৭১ সালে কে কে শুক্লাকে বিয়ে করে ডেইজি অভিনয় থেকে সরে আসেন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ায় স্বামীর মৃত্যু ছিল তাঁর জীবনের আরও একটি বড় ধাক্কা। পরবর্তীতে তিনি আবার পর্দায় ফেরেন আস্থা: ইন দ্য প্রিজন অফ স্প্রিং ছবির মাধ্যমে।
আরও পড়ুন 'ততদিনে অনেক দূরে চলে গিয়েছে', জনপ্রিয় অভিনেতার জীবনের করুণ কাহিনি শোনালেন মহেশ ভাট
এখানে তিনি একজন ভ্যাম্প চরিত্রে অভিনয় করেন। যেটিকে তিনি তার সবচেয়ে স্মরণীয় পারফরম্যান্স হিসেবে মনে করেন। এছাড়া টেলিভিশনের সঞ্জীবনী ও শরারত সিরিয়ালেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। জনপ্রিয় টক শোয়ের উপস্থাপক তাবাসসুম যখন তাঁকে প্রশ্ন করেন কেন তিনি কেন শিশু শিল্পীর সাফল্য পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি? ডেইজি বলেন, 'দর্শকের নজরে আমি সবসময়ই শিশুশিল্পী।'
/indian-express-bangla/media/post_attachments/53a3e2d5-7db.jpg)
ডেইজিকে শেষ দেখা যায় ফারাহ খানের পরিচালিত ও শাহরুখ খান অভিনীত হ্যাপি নিউ ইয়ার ছবির পার্শ্ব চরিত্রে। তাঁর অভিনয়জীবন যেমন রঙিন ছিল তেমনিই ব্যক্তিজীবন ছিল বেদনায় ভরপুর। তবু, ডেইজি ইরানি আজও বলিউডের ইতিহাসে একজন শক্তিশালী, সাহসী এবং স্মরণীয় চরিত্র হয়ে আছেন।