"প্রায় সাত বছর লেগেছিল রাখীজি পর্যন্ত পৌঁছতে।" কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বললেন পরিচালক গৌতম হালদার। যাঁর ছবি 'নির্বাণ' এবার দেখানো হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। মতি নন্দীর 'বিজলীবালার মুক্তি' গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই ছবির মুখ্য চরিত্রে আছেন রাখী গুলজার। ঋতুপর্ণ ঘোষের 'শুভ মহরত'-এর পর গৌতম হালদারের হাত ধরেই বড়পর্দায় ফিরলেন বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী। এদিন নন্দন প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অযোধ্যা মামলার রায় প্রসঙ্গে বললেন, "মনে হলো, দের আয়ে দুরস্ত আয়ে, মনে হলো এবার রাম-রহিম পাশাপাশি থাকবেন, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারত?"
"যেদিন এই ছবির প্রপোজালটা পাই, তখন আমি হাসপাতালে। নাতি জন্ম নিল সেদিন। তারপরে ওঁকে (গৌতম হালদার) ডাকলাম ফার্ম হাউজে, গরু ছাগলের মাঝেই চিত্রনাট্যটা শুনলাম (হাসি)। তারপর মনে হলো, এই ছবিটা তো করতে হবে। আর কী অদ্ভুত সময়ে রায়দান হলো। আমাদের ছবিটা এত প্রাসঙ্গিক।ভারতের যে কোনও জায়গায় ছবিটা দেখানো উচিত," বললেন রাখী।
আরও পড়ুন: জল্পনার অবসান! চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির প্রসেনজিৎ
কিন্তু এতদিন পর কলকাতাকে মনে পড়ল? কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব আপনাকে এতদিন পরে পেল? অভিনেত্রীর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ, খুব যত্ন করে ডেকেছিলেন। ওঁর মনে ছিল আমি কলকাতার মেয়ে। তবে আমি কিন্তু কলকাতায় প্রায়ই আসি। কখন আসি, কখন যাই, কোথায় বেড়াই, কেউ জানতে পারে না। সবটাই নিঃশব্দে (হাসি)। প্রত্যেকটা রাস্তা আমার চেনা। রাধুবাবুর দোকান, টালিগঞ্জের একটা বাজারে বড় বড় কই মাছ পাওয়া যায়, চপের দোকান, সব জানি। চাইনিজ খেতে হলে তো ট্যাংরা। আগে কলকাতায় ন্যান কিং-নামে একটা জনপ্রিয় চাইনিজ দোকান ছিল।"
অযোধ্যা রায় নিয়ে কী বললেন রাখি গুলজার? #KIFF2019 #rakheegulzar pic.twitter.com/Pm0F8Vycld
— IE Bangla (@ieBangla) November 10, 2019
"প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেল কলকাতা ছেড়ে গিয়েছি, তাই মানুষ চট করে চিনতে পারে না। তাতে সুবিধেই হয়েছে। এর আগে যে ছবিটা করেছিলাম, সেটা ঋতুপর্ণ ঘোষের। ভেবেছিলাম আর ছবি করব না। জীবজন্তু, গাছপালা, স্বাধীনতা, দেশ ঘুরে বেড়ানো, এগুলো নিজের জন্য রেখেছি। তার মাঝে ইনি (পরিচালকের দিকে তাকিয়ে) টপকে পড়লেন," আবারও হাসতে হাসতে বললেন রাখী।
আরও পড়ুন: কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালের মেজাজ আর কোথাও নেই: তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়
রান্না করতে এখনও ভালবাসেন। মশলার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাঁর সারাক্ষণই চলে। "তবে সব বাঙালি রান্না, তার চেয়ে উঁচু ধাপে উঠতে পারি নি। আরে রান্নাও তো সায়েন্স", বলে চলেন অভিনেত্রী। ছোটবেলা থেকে গাছে ওঠা, চূর্ণী নদীতে সাঁতার কাটা, এসব প্রিয় ছিল তাঁর, ফলে ফার্ম হাউজে দিব্যি রয়েছেন রাখী। শেষ বাংলা ছবি টিভিতে দেখেছেন 'ভূতের ভবিষ্যত'। তপন সিনহা'র ছবির বড় ভক্ত রাখি, দেখা পরিচালকের সমস্ত ছবি। এখন অবশ্য অবসর জীবন কাটাচ্ছেন নিজের ইচ্ছেতে।
আরও পড়ুন: চলচ্চিত্র উৎসবেই ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’-র টিকিট বিক্রি করছেন প্রদীপ্ত
বৈজ্ঞানিক হতে চেয়েছিলেন, হয়ে গেলেন অভিনেত্রী। তবে পেশার সঙ্গে কোনও বেইমানি করেন নি, প্রত্যেকের কাছ থেকে শিখেছেন। এখন রিটায়ার্ড জীবনই উপভোগ্য তাঁর কাছে। কন্যা মেঘনা গুলজারের পরিচালনায় কাজ করবেন? রাখীর উত্তর, "কারও গলার ফাঁস হব কেন বলুন তো! আমার উপযুক্ত কোনও চরিত্র হলে মেয়ে যদি বলে তখন দেখব। আর সেটা আমি করতে চাই কিনা, চিত্রনাট্য, চরিত্রটার গুরুত্ব, সবটা দেখব, তবে তো।"
রাখী মনে করেন, কোনও কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে তার সমালোচনা না করে সেখান থেকে সরে আসা উচিত। "বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব না, তাই সরে গিয়েছি," বললেন 'করণ অর্জুন'-এর 'মা', সঙ্গে ছবির মান নির্ধারনের ক্ষেত্রে মনে করিয়ে গেলেন, "দর্শককে তৈরি করতে হয়না। তাঁরা সবকিছু বুঝতে পারেন। দর্শক বোকা নন।"
আরও পড়ুন: ধ্রুব-র পরিচালনায় নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকায় দেব
জীবনের এই প্রান্তে এসে তাঁর আক্ষেপ করার কিছু নেই, তাই তো অকপটে বলতে পারেন, "যেটা হয় নি সেটা হয় নি। তাতে আমার কোনও রিগ্রেট নেই।" এই অফুরান জীবনীশক্তিই তো আগামীর পাথেয়।