রত্না ঘোষাল
উত্তম কুমার কিন্তু, একদিনেই 'মহানায়ক' হয়ে ওঠেননি। কেরিয়ারের শুরুতে বহু ছবি সাফল্যের মুখ দেখেনি। সেগুলোর নাম আমার আজ সেভাবে মনে নেই, তবে এটা ঠিক দাদার অনেক ছবি 'ফ্লপ' হয়েছিল। যখন একের পর এক ছবি ফ্লপ হচ্ছিল তখন নিজেকে আরও পরিণত করার চেষ্টা করলেন। সেই সিনেমাগুলো বহুবার দেখে বোঝার চেষ্টা করতেন কোন জায়গাগুলো ঠিক করা প্রয়োজন। নিজেকে ঠিক কী ভাবে তৈরি করতে হবে।
কথা বলা-তাকানো-হাঁটাচলার স্টাইলগুলো বদলে নিজেকে যে তৈরি করার প্রচেষ্টা সেটা নিজের তাগিদেই করেছিলেন। আমাকে আমার মতো করে তৈরি হতে হবে, আমার কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, সংলাপটা কী ভাবে বললে ভাল লাগবে সেটা নিয়ে প্রচণ্ড ভাবনাচিন্তা করতেন। একজন শিল্পী কী ভাবে নিজের ভুলত্রুটি শুধরে নিজেকে তৈরি করতে পারেন তার উজ্জ্বল নিদর্শন মহানায়ক উত্তম কুমার।
আরও পড়ুন শুধু 'মহানায়ক'-ই নন দুর্দান্ত টেনিস খেলোয়ারও, উত্তমকুমারের মৃত্যুদিনে জেনে নিন অজানা গল্প
উত্তম কুমার যখন উত্তম কুমার হননি, অরুণ চট্টোপাধ্যায় হিসেবেই পরিচিত ছিলেন সেখান থেকে উত্তম কুমার হয়ে উঠার জার্নিটা ছিল অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। একজন শিল্পীর ওঁর থেকে শেখা উচিত নিজেকে তৈরি করতে গেলে কী ভাবে খাটতে হয়। এক একটি চরিত্রের হাঁটার স্টাইল এক এক রকমের হয়, সেটা আলাদাভাবে প্র্যাকটিস করতেন। সংলাপ বলার সঙ্গে গলার মডিউলেশনের যে পরিবর্তন করতে হয় সেই বিষয়টা রপ্ত করেছিলেন। এভাবে অনেক পথ পেরিয়ে উত্তম কুমার হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক। আর সেই যে উত্তম কুমার হয়েছেন ঈশ্বরের আশীর্বাদে আজ তিনি একজন মহাপুরুষে পরিণত হয়েছেন।
আরও পড়ুন সিনেমার পার্ট টু হয় কিন্তু উত্তম কুমারের হয় না: সুজন নীল মুখোপাধ্যায়
উত্তম কুমারের মৃত্যুর ৪৫ বছর পরও কেউ তাঁকে ভোলেনি আর কোনওদিন ভুলবেও না। আজকের দিনে উত্তম স্মরণে শহরজুড়ে সাত থেকে আটটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনও শিল্পীর জন্য এমনটা হয়নি। কিন্তু, উত্তম কুমারের জন্য হয়। সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান ছাড়াও শিল্পী সংসদ যেটা দাদা নিজের হাতে তৈরি করে গিয়েছেন সেখানে তো অনুষ্ঠান হচ্ছেই। আমরা যতদিন বাঁচব, শিল্পী সংসদ যতদিন থাকবে ততদিন এই অনুষ্ঠান হবে। একজন মহাগুরু ছাড়া এই আয়োজন অসম্ভব।
আরও পড়ুন রোম্যান্সের রাজপুত্র! উত্তম অভিনীত স্বর্ণযুগের সেরা ৫ প্রেমের ছবি
মৌচাকের সেটে একটা মজার ঘটনা বলি। একদিন ফ্লোরে বসে আছি। দাদার অ্যাসিস্টেন্ট এসে চার-পাঁচটা ওষুধ আর জল দিয়ে গেলেন। উনি একে একে সবকটি ওষুধ খেয়ে খেলেন। আমি সেটা দেখার পর বলেছিলাম, দাদা আপনি একসঙ্গে এতগুলো ওষুধ খেয়ে ফেললেন। আমার কথা শুনে দাদা হেসে বললেন, তুমি এখন অনেক ছোট। আমার মতো বয়স হলে বুঝবে কেন খেতে হয়। এখন আমি নিজে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাত-আটটা ওষুধ খাই। তাই ওই কথাটা মাঝেমধ্যে যখন মনে পড়ে একাই হাসি। আর ভাবি সত্যিই দাদা ঠিক কথাই বলেছিলেন।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন