রূপাঞ্জনা মিত্র
মদ্যপ গাড়িচালকের সঙ্গী যাঁরা ছিলেন, তাঁরা পার্টি করুক বা যাই করুক, একজন অসহায় মানুষ মারা গিয়েছেন এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। যা ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলো থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি সেদিন কী কী ঘটেছিল। যে মেয়েটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তিনি কিন্তু, চালকের আসনে ছিলেন না। যদি মহিলা চালকও থাকতেন তাহলেও একই কথা বলতাম, 'ড্রিঙ্ক অ্যান্ড ড্রাইভ' আইন বিরুদ্ধ। সেখানে কে কী ভাবে বসেছিলেন সেটা তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে না। প্রত্যেকেই প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন। ওই মেয়েটিকে যখন টেনে ছিঁচড়ে বের করে আনা হচ্ছিল তখন বোঝাই যাচ্ছিল স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আর একজন অভিনেত্রী যিনি গাড়ির ভিতর ছিলেন তিনি ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। তাঁকে কর্ডন করে সেখান থেকে বের করে আনা হয়েছে। আর যিনি জনরোষের কবলে পড়েছেন তাঁর কিন্তু, পরিচিতি (ফেস ভ্যালু) নেই। আর সেই জন্যই নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ওইরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন।
একজন মানুষের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ চুলের মুঠি ধরেও মেয়েটিকে মেরেছে। যখন ওখানে একটা ক্রাইম সিন তৈরি হয়ে গিয়েছে তখন অনেকেই মোবাইলে সেই মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দি করেছে। যাঁর যেমন মানসিকতা সে সেইভাবেই মেয়েটিকে নজরবন্দি করেছেন। আর সেই ফুটেজগুলো থেকেই বোঝা যাচ্ছে কোথাও একটা তাঁর চেহারাকে ফোকাসে নিয়ে আসা হয়েছে। স্বল্প পোশাক পরে ছিলেন কিনা সেটা তো মুখ্য বিষয় নয়। যে অবস্থায় তাঁকে পাওয়া গিয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে একটা গ্রুপ ফটো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে কিন্তু, তাঁর চেহারার এই অবস্থা ছিল না। হুঁশ ছিল না বলেই তো পরে আলুথালু অবস্থায় তাঁকে পাওয়া গিয়েছে। যদি জ্ঞান থাকত তাহলে হয়তো মদ্যপ গাড়িচালকের সঙ্গে আসতেনই না।
ওঁদের দোষ তো আছেই, উলটো দিকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় যাঁকে রীতিমতো মারধর করা হল সেটাও তো অন্যায় (জনরোষের ক্রাইম)। এই বিষয়টাকে তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। টলিগঞ্জে একটি ঘটনা ঘটেছে আর তালতলা থেকে এসে কেউ মারধর করবে সেটা তো হতে পারে না। আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো। আরেকটা যে মেয়ে গাড়িতে ছিল সে শুধু পরিচিত মুখ বলে জনরোষ থেকে রেহাই পেয়ে গেল আর যে মেয়েটি নিজেকে বাঁচাতে পারল না, তাঁর ভারি চেহারা-আলুথালু পোশাকের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল। আমরা সলমন খানের এইরকম একটা ঘটনার কথা পড়েছি। এতবছর পরও কিন্তু, ওই ঘটনাটা নিয়ে চর্চা হয়। সোনিকা চৌহানের ঘটনায় বিক্রমের উপর দিয়েও অনেক ঝড় ঝাপটা গিয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি আইন নিশ্চয়ই দেবে।
আরও পড়ুন: 'লোক বুঝে নিয়ম পালটালে হবে না, চ্যাংড়ামো হচ্ছে'? ঠাকুরপুকুর গাড়ি দুর্ঘটনায় সোচ্ছ্বার স্বস্তিকা
গাড়িতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই দোষী আর সবচেয়ে বেশি দায় যাঁর উপর বর্তায় তিনি ওই মদ্যপ গাড়িচালক। রবিবারের সকালে এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির একজনের জন্যই আজ এইরকম একটা ঘটনা ঘটল। এই সময়টা আমাদের জন্য কালো অধ্যায়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তো রোজই কোনও না কোনও ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু, এটা অত্যন্ত নক্কারজনক একটি ঘটনা। আমরা তাঁদের চিনি। যাঁরা আগের দিন ফ্লোরে শট দিল তাঁদের নিয়ে পরদিন এমন কাণ্ড। যে মানুষটা চলে গেল, তাঁর বাড়ির সদস্যদের দায় কে নেবে? এটা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলো করা উচিত। যাঁরা ঘটনার সময় ছিলেন প্রত্যেককে জেরা করা উচিত। সেই সময় তাঁদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল সেটা জানাও জরুরি। একটা দুর্ঘটনা কিন্তু, হঠাৎ করে ঘটে যেতে পারে না। আগের মুহূর্তে কী হয়েছিল সেটা জানা ভীষণ জরুরি।
আরও পড়ুন: 'ওই ঘটনার পর আমার...', ঠাকুরপুকুর গাড়ি দুর্ঘটনার জেরে এ কী হাল অভিনেত্রী ঋ-র!
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন