New Update
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/03/ustad-allah-rakha-pt-ravi-shankar-and-ali-akbar-on-concert-for-bangladesh-2025-08-03-15-29-02.jpg)
কারা সেই তিনজন?
"কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" কেবল একটি সংগীতানুষ্ঠান নয়- এটি ছিল প্রতিবাদের এক অলিখিত সুর, সহানুভূতির এক ধ্বনি। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের মঞ্চে একত্রিত হয়েছিলেন এক ঝাঁক কিংবদন্তি।
কারা সেই তিনজন?
এটি এমন এক মুহূর্ত, যা বাস্তব মনে হওয়া কঠিন, স্বপ্নের চেয়েও অবিশ্বাস্য। ১৯৭১ সালে, যখন একটি জাতি সবকিছুর জন্য লড়াই করছিল, বাংলাদেশ সর্বত্র তখন মুক্তিযুদ্ধ, আন্দোলনে ব্যস্ত বাঙালি। তখন বিশ্বজুড়ে মানুষের মনোযোগ ছিল সহিংসতা, দুর্ভিক্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে। ঠিক সেই সময়, এক দল সংগীতশিল্পী সিদ্ধান্ত নিলেন- একটি কনসার্ট করবেন, যা ইতিহাস বদলে দেবে।
"কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" কেবল একটি সংগীতানুষ্ঠান নয়- এটি ছিল প্রতিবাদের এক অলিখিত সুর, সহানুভূতির এক ধ্বনি। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের মঞ্চে একত্রিত হয়েছিলেন এক ঝাঁক কিংবদন্তি। জর্জ হ্যারিসন, রিঙ্গো স্টার, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল এবং ভারতের রবিশঙ্কর চৌধুরী- পণ্ডিত রবিশঙ্কর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তবলার কিংবদন্তি ওস্তাদ আল্লারাখা ও সরোদশিল্পী আলী আকবর খান।
Sabyasachi Chakraborty: সহঅভিনেত্রীদের সঙ্গে প্রেম হয়নি? শশুরমশাইকে প্…
রবিশঙ্করের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জনতা গর্জে উঠেছিল সেদিন। অথচ কনসার্টের শুরুতে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শুনে শ্রোতারা যেন থমকে গিয়েছিলেন, তাঁরা অভ্যস্ত ছিলেন না এমন গানে। কিন্তু রবিশঙ্করের সম্মান ও খ্যাতি এমন ছিল যে তাঁর নামেই পুরো গার্ডেন জেগে উঠেছিল। ঠিক সেদিন, নিউইয়র্ক শহরের ব্যস্ত ও বেপরোয়া জনতাকে এক গুরু শিখিয়েছিলেন- ধ্রুপদী সংগীত শোনার আদব-কায়দা কী হওয়া উচিত। এমনকি ৭০-এর দশকের ধোঁয়ায় ভরা আমেরিকাতেও তিনি শ্রোতাদের অনুরোধ করেছিলেন ধূমপান না করার।
Kartik Aaryan: কার্তিক আরিয়ানকে FWICE-র কড়া নির্দেশ, পাকিস্তানি সংস্থা…
এরপর শুরু হয় সেই সম্মোহনী মুহূর্ত। শঙ্কর, আল্লারাখা ও আকবর খান একটি তিন তাল পরিবেশন করলেন, যার সঙ্গদে ছিল বাংলাদেশের লোকসংগীতের একটি অংশ। ১৬ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড- কোনও বিরতি নেই, কোনও ফোনের আলো নেই, কোনও ডিসট্রাকশন নেই। ছিল শুধু নিঃশব্দ শ্রবণ, সম্মান আর সঙ্গীতের প্রতি আত্মসমর্পণ। আজও যখন সেই রেকর্ডিং কানে আসে বা ফুটেজ দেখেন, তখন কিন্তু, ব্যাকস্টেজে অপেক্ষা করছেন ডিলান, ক্ল্যাপটন, হ্যারিসন। শান্তি আর উন্মাদনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন মানুষ—যারা সেই দেশের না, সেই ভাষার না, সেই সংস্কৃতির না- তবু তারা এমন এক মঞ্চ কাঁপিয়ে তুললেন, যা মূলত তাঁদের জন্য তৈরি করা হয়নি। কিন্তু তবুও, তাদের সুর বিশ্বকে স্তব্ধ করেছিল।
এরপর শুরু হয় মূল কনসার্ট। জর্জ হ্যারিসন তাঁর ‘My Sweet Lord’, ‘Awaiting on You All’, ‘While My Guitar Gently Weeps’–এর মতো হিট গান পরিবেশন করেন। রিঙ্গো স্টার এবং অন্যরাও তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। মঞ্চে উঠেই হ্যারিসন বলেন, “সবাই খুব অল্প সময়ের নোটিশে এখানে এসেছেন। অনেকেই নিজেদের গিগ বাতিল করেছেন। আমরা কেউই এর জন্য কোনও টাকা পাচ্ছি না।” এক কথায়, এটি ছিল ভালোবাসা ও মানবতার এক নিঃশর্ত প্রকাশ।
Actor Death News: দীর্ঘদিনের লড়াই শেষ, না ফেরার দেশে ভারতীয় সিনেমার…
সবশেষে আসেন বব ডিলান—একজন কিংবদন্তি, যিনি সে রাতে মঞ্চে এসে ‘A Hard Rain’s A-Gonna Fall’, ‘Blowin’ in the Wind’, ‘Mr. Tambourine Man’-এর মতো গান পরিবেশন করেন, যেন তিনি সেই জনতার হয়ে যুদ্ধরত মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন। "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" ছিল এক ব্যতিক্রমী মুহূর্ত, যেখানে সংগীত হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ভাষা, সহানুভূতির হাত, আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অসামান্য উদাহরণ। এটি শুধু একটি সংগীতানুষ্ঠান ছিল না, বরং একটি কালজয়ী বার্তা রেখেছিল, যে সুরের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব।