Koushik Ganguly, 7 No Sanatan Sanyal, Zee5: যাঁরা ওয়েবে থ্রিলার দেখতে পছন্দ করেন, প্রথমেই তাঁদের বলা যাক, '৭ নম্বর সনাতন সান্যাল' একটি সিরিয়াল কিলিংয়ের গল্প। বাংলায় ভাল মানের থ্রিলারের সংখ্যা হাতে গোনা। '৭ নম্বর সনাতন সান্যাল' একটি ভাল থ্রিলার কিন্তু '৭ নম্বর সনাতন সান্যাল' শুধুই সিরিয়াল কিলিংয়ের গল্প নয়।
চার্লি চ্যাপলিন-এর 'দ্য কিড' সিনেমার স্বপ্নদৃশ্যটি দিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। স্বর্গের বাগান। ঈর্ষা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে কিছু নেই। কেউ সেখানে হেরে যায় না, বাদ পড়ে না। প্রেম সেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। প্রিয় নারী বা পুরুষের দখল নিতে চায় না কেউ, বরং ভাগ করে নেয়।
আরও পড়ুন: ‘হেডকোয়াটার্স লালবাজার’-এ কাহিনিই এবার ওয়েব সিরিজে
আদিম সাম্যবাদ খুব সহজ সমীকরণ! সেইখান থেকে সরতে সরতে, ধনতান্ত্রিক বিবর্তনের বৃত্তাকার দুষ্টচক্রে সেই সমীকরণই পরিণত হয় 'আমি' ও আমার বৃত্তে। '৭ নম্বর সনাতন সান্যাল' সেই বৃত্তকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। এই বৃত্তে আটকা পড়ে সনাতন সান্যাল (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) এবং আরও একজন সনাতন সান্যাল।
এই দুই সনাতনের গল্পে এসে মিশে যায় আরও পাঁচজন সনাতন সান্যাল। দুটি মানুষ সমনামী কিন্তু তাঁরা সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। অর্থাৎ নাম এখানে আসলে কোনও কিছুকেই সংজ্ঞায়িত করে না। তারা যদি সমনামী না হতো, তবেও জীবন তাদের মাঠে নামাত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই, কোনও না কোনও ভাবে।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে ফিরছেন গাইতোন্ডে
তাও নামই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ যা মানুষ অর্জন করে না, বহন করে শুধু। আর পুঁজিবাদী সভ্যতা শেখায়, নাম-এর অনুষঙ্গেই বাকি সবকিছু আসে। '৭ নম্বর সনাতন সান্যাল'-এ যে সাতজন সনাতন সান্যালের দেখা মেলে তাদের কারও নাম যদি সনাতন সান্যাল না হতো, তাহলেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বী!
পুঁজিবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বহু সিনেমায় নানাভাবে এসেছে। চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু সেই বহুআলোচিত বিষয়কেই পরিবেশন করেছেন স্বতন্ত্র একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সিরিয়াল কিলার থ্রিলারের আড়ালে আসলে এ গল্প কম্পিটিশন ও এলিমিনিশেনের-- প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার একটি চিরন্তন ক্রিয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতির গল্প।
আরও পড়ুন: মধুমিতা, রণজয়, সোহিনী আসছেন নতুন থ্রিলার সিরিজে, চলছে শুটিং
সংবেদনশীল ও সৎ দর্শক নিজেকে খুঁজে পাবেনই পাবেন। '৭ নম্বর সনাতন সান্যাল' একটা আয়না যা দর্শককে দেখায় তাঁরা কতটা অসহায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বহমানতার কাছে। এই অসহায়তা থেকেই জন্ম নেয় টিকে থাকার তাগিদ। প্রান্তিকতাই হয়ে ওঠে শক্তির উৎস।
ফিল্মি ফ্যামিলি প্রোডাকশনস এবং এসকে মুভিজ প্রযোজিত এই ছবি বিষাদময় হওয়া সত্ত্বেও ভারি নান্দনিক। রামানন্দ সরকারের চিত্রগ্রহণ ও অমিত রায়ের সম্পাদনার কথা বলতেই হয় এই প্রসঙ্গে। একই সঙ্গে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছবির শিল্প নির্দেশনা। ডলি-র চরিত্রে শাঁওলী চট্টোপাধ্যায় যতটা সাবলীল, ততটাই মর্মস্পর্শী কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়।
এক ঘণ্টার এই ছবিটি দেখে ফেলা যায় অবকাশে, জিফাইভ অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন করে।