বুধবার 'নির্ভয়া' গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পবন গুপ্তার জন্য উকিল নিযুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দিল্লির এক আদালত। আদালতের বক্তব্য, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামীরও তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। পবন গুপ্তা (২৫) ছাড়া বাকি তিনজন আসামী হলো মুকেশ কুমার সিং (৩২), বিনয় কুমার শর্মা (২৬) এবং অক্ষয় সিং (৩১)।
পবন গুপ্তা আদালতকে জানায়, তার পূর্বতন উকিলকে সরিয়ে দিয়েছে সে, এবং নতুন উকিল বহাল করতে কিছুটা সময় লাগবে। অতিরিক্ত দায়রা বিচারপতি ধর্মেন্দ্র রাণা এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ পবনের বাবাকে তাদের তালিকাভুক্ত উকিলদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আইনগতভাবে কোনও আসামীর সর্বশেষ প্রতিকারের উপায় হলো 'কিউরেটিভ পিটিশন', যা এখনও জমা করে নি পবন। এছাড়াও দয়া প্রার্থনা করে আবেদন জানাতে পারে সে।
আরও পড়ুন: নির্ভয়া মামলা: তিহার কর্তৃপক্ষের নতুন পরোয়ানা জারির আর্জি খারিজ
মঙ্গলবার দিল্লি সরকার এবং নির্ভয়ার বাবা-মায়ের তরফে আদালতে এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত চার আসামীর জন্য নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানানো হয়। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেয় দায়রা আদালতে নতুন করে ওই চার আসামীর ফাঁসির তারিখের আবেদন জানানোর।
গোড়ায় দিল্লির তিহার জেলে ওই চারজনের ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি, যা ১৭ জানুয়ারি জারি হওয়া আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি করা হয়। কিন্তু ৩১ জানুয়ারি ফের একটি নির্দেশ জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফাঁসি পিছিয়ে দেয় দায়রা আদালত।
তিহার জেল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার একটি 'স্ট্যাটাস রিপোর্ট' জমা দিয়ে জানান, চারজন আসামীর একজনও কোনও আইনি বিকল্প বেছে নেয় নি, যদিও দিল্লি হাইকোর্ট তাদের সাতদিন সময় দেয় এই প্রক্রিয়ার জন্য। গত ৭ ফেব্রুয়ারি চারজনের জন্য নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানান দিল্লি সরকার এবং তিহার জেল কর্তৃপক্ষ, যা খারিজ করে দেয় দায়রা আদালত।
আরও পড়ুন: নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারির আর্জি নির্ভয়ার বাবা-মা’র
কারণ হিসেবে আদালত বলে, ৫ ফেব্রুয়ারি জারি হওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, চার আসামীর হাতে এক সপ্তাহ সময় রয়েছে আইনি বিকল্প খোঁজার। সেসময় দায়রা বিচারপতি বলেন, "আইন যেখানে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার দিচ্ছে, সেখানে তাদের হত্যা করা অপরাধ এবং পাপ। আমি দোষীদের কৌঁসুলির সঙ্গে সহমত যে স্রেফ জল্পনা বা ধারণার বশে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা যায় না। এই আবেদনের কোনও সারবত্তা নেই। এটি খারিজ করা হলো। যথাসময়ে যথাযোগ্য আবেদন জমা করতে পারে সরকার।"
এর আগে মৃত্যু পরোয়ানার জন্য আবেদনে বিলম্ব, এবং আসামীদের তরফে মামলা "বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া", উভয়ের ক্ষেত্রেই অসন্তোষ প্রকাশ করে দিল্লি হাইকোর্ট। তার নির্দেশে উচ্চ আদালত জানায়, "সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্তৃপক্ষ নিদ্রিত ছিলেন", এবং মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন করার জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন ২০১৯-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত, "কেন সেটা তাঁরাই ভালো জানেন"।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর দুবছর পর দায়রা আদালতকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: মুম্বই হামলার মূলচক্রী হাফিজ সইদের ১১ বছরের জেল
সারা দুনিয়া যাঁকে 'নির্ভয়া' নামে চেনে, ২৩ বছর বয়সী সেই তরুণীকে ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ দিল্লিতে একটি চলন্ত বাসে নির্মমভাবে গণধর্ষণ এবং শারীরিক অত্যাচার করা হয়। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে হেরে যান 'নির্ভয়া'।
এই মামলায় অভিযুক্ত হয় মোট ছ'জন, যাদের মধ্যে ছিল একজন নাবালক। বিশেষ 'ফাস্ট ট্র্যাক' আদালতে পাঁচ প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয় ২০১৩ সালের মার্চ মাসে। এর কিছুদিনের মধ্যেই প্রধান অভিযুক্ত রাম সিংকে তিহার জেলে তার কুঠুরিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, বলা হয় আত্মহত্যা করেছে সে।নাবালক অভিযুক্ত, যাকে ওই ছ'জনের মধ্যে সবচেয়ে নির্মম বলে বর্ণনা করা হয়েছিল, একটি সংশোধনাগারে কাটায় পরবর্তী তিন বছর। ২০১৫ সালে যখন সে ছাড়া পায়, তার বয়স ২০, এবং জানা যায় যে তার প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে।
মুকেশ, বিনয়, অক্ষয়, এবং পবনকে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যুদণ্ড দেয় ওই বিশেষ আদালত।