সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী সোমবার। এই অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করানো মোদী সরকারের অন্যতম আগ্রাধিকার। তবে বিলের বিরোধীতায় সরব হবে বিরোধীপক্ষ। যা ঘিরে সংসদ উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ২০১৬ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল আগেই লোকসভায় পাস হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যভায় পেশের আগেই মেয়াদ ফুরিয়ে যায় ষষ্ঠদশ লোকসভার। ফলে, নিয়ম অনুসারে ওই বিল ফের সংসদে পেশ করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
Advertisment
এই বিলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের কথা বলা হয়েছে, যে সংশোধনীর ফলে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং শিখ ধর্মাবলম্বীরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। এই তিন দেশ থেকে আসা ৬টি অ-মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই বিলে। এর আগে ভারতে ১৪ বছর বসবাস করলে নাগরিকত্ব দাবি করা যেত। সে নিয়ম সম্প্রতি বদলে ১১ বছরের বসবাসের কথা বলা হয়েছে। এই বিলে উল্লিখিত গোষ্ঠীভুক্তদের জন্য ভারতে বসবাসের সময়সীমা কমিয়ে ছ’বছর করার কথা বলা হয়েছে।
উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের মধ্যে এই বিল লাগু হলে ব্যাপক পরিমাণ বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের ভারতে ঠাঁই পেয়ে যাওয়ার বিষয় নিয়ে গভীর উদ্বেগের সূচনা হয়। তাদের আতঙ্কের পিছনে রয়েছে জনতাত্ত্বিক বদলের আশঙ্কা, রয়েছে জীবনধারণের সুযোগ হারানোর শঙ্কা, এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ক্ষয়ের ভয়। এই বিলের বিরুদ্ধে এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রায় সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতই বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই লোকসভায় এই বিল পেশ করা হয়। ৭ অগাস্টে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে যায় এই বিল। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি যৌথ সংসদীয় কমিটি এই বিল সম্পর্কে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। ছ'সদস্যের কমিটির সদস্যদের মধ্যে ভিন্ন মতামত উঠে আসে। তবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সেই রিপোর্ট তৈরি হয়। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় বিল পাসও হয়ে যায়।
আসাম অ্যাকর্ড অনুযায়ী, সে রাজ্যে এনআরসি লাগু হয়ে গিয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে দেশজুড়ে এনআরসি লাগু করতে চায় মোদী সরকার। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাস করাতে মরিয়া কেন্দ্র। এই বিলের বিরোধীতায় সরব বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, এর ফলে জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও এই বিলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিশানা করেছে মোদী সরকার বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, "মমতাজি (বন্দ্যোপাধ্যায়) বলছেন, এনআরসি হলে লক্ষ লক্ষ হিন্দু শরণার্থীকে বাংলা ছেড়ে যেতে হবে। এর চেয়ে বড় কোনও মিথ্যা হয় না।" বিজেপি সভাপতির সংযোজন, "সব শরণার্থীকে আশ্বস্ত করে জানাচ্ছি, যাঁরা এ দেশে চলে এসেছেন, তাঁদের কাউকে ভারত ছাড়তে বাধ্য করা হবে না।" এনআরসি নিয়ে তৃণমূল যা বলছে, তা 'সম্পূর্ণ মিথ্যা' বলে অমিত শাহ এদিন দাবি করেন। তাঁর কথায়, "এই মিথ্যাটা ছড়ানো হচ্ছে বাংলার মানুষকে উস্কে দেওয়ার জন্য।"
আসামে এনআরসিতে বহু হিন্দুর নাম বাদ গিয়েছে। ক্ষুব্ধ আসামের বিজেপি নেতৃত্ব। গেরুয়া শিবিরের ভোট ব্যাঙ্কে এর ফলে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই প্রতিবেশী বাংলা নিয়ে সতর্ক পদ্ম শিবির। এনআরসির কট্টর বিরোধী তৃণমূল নেত্রী-কে নিশানা করে সব শরণার্থীকে আশ্বস্ত করার কথা তুলে ধরেন অমিত শাহ।
বিজেপির নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশের তাড়াহু়ড়ো নিয়ে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, "বিলের ভিত্তি সম্প্রদায়িক ভাগাভাগি। মানুষের মৌলিক অধিকার এতে খর্ব হবে।" তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় ও ডেরেক ও'ব্রায়েনের কথায়, "আসামে এই এনআরসি লাগু হওয়ায় জাতিগত বৈষম্য নজরে এসেছে। তাই আসনের সংখ্য়াগরিষ্ঠতার জেরে এই বিল পাস করানো উচিত হবে না।"