HIV Future Crisis: বিশ্বজুড়ে এইডস প্রতিরোধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এক ভয়াবহ সংকট ঘনিয়ে এসেছে। UNAIDS-এর সাম্প্রতিক '২০২৫ গ্লোবাল এইডস আপডেট' রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি এইডস প্রতিরোধের অন্যতম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম PEPFAR-এর সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়, তবে ২০২৯ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এইডস-এর কারণে মারা যেতে পারেন। এর সঙ্গে ৬০ লক্ষ নতুন এইচআইভি সংক্রমণের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
এই তহবিল সংকট শুধুমাত্র একটি আর্থিক ইস্যু নয়– এটি একপ্রকার যেন 'টিক টিক টাইম বোমা'। এমনটাই UNAIDS-এর নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়ানাইমা বলেছেন। তাঁর কথায়, 'তহবিল সংকটে সেবা রাতারাতি বন্ধ করতে হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ছাঁটাই হচ্ছেন এবং সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।'
আরও পড়ুন- উপবাস না করেও উপবাসের সুফল পেতে চান? ফলো করুন এই ডায়েট
ভারতের এইচআইভি মানচিত্র: উদ্বেগের চিত্র
ভারতে বর্তমানে প্রায় ২৫.৬ লক্ষ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত, এবং ২০২৪ সালেই নতুন করে ৬৪,০০০ সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে। একই বছরে ৩২,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এইডস-সম্পর্কিত কারণে। যদিও ২০০০ সালের তুলনায় সংক্রমণের হার (০.৫৫%) ২০২৩ সালে কমে এসেছে ০.২০ শতাংশে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন– এটা স্রেফ 'ছাইয়ের মধ্যে থাকা আগুন। যখন তখন বাড়তে পারে।'
আরও পড়ুন- মশার কামড়ে চরম সমস্যায়? কলার খোসাতেই পান আরাম, দাবি বিশেষজ্ঞদের
এইচআইভি সংক্রমণ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, যার সঙ্গে বাড়ছে HPV, হেপাটাইটিস বি ও সিফিলিসের মতো যৌনবাহিত রোগও। এইডস সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. আইএস গিলাদা বলেছেন, 'নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং সচেতনতা না বাড়ালে এই গ্রাফ আবার উর্ধ্বমুখী হবে।'
আরও পড়ুন- বার্ধক্যে কি শরীরে প্রদাহ বাড়ে? নতুন গবেষণার পর কী জানালেন বিজ্ঞানীরা?
আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হলে কী ঘটবে?
PEPFAR-এর মত কর্মসূচিগুলি বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে, বিশেষত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে প্রতিরোধ কর্মসূচির ৮০ শতাংশ অর্থ জোগায়। ভারতের মত দেশে এই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে যে শুধু নতুন সংক্রমণ বাড়বে তা নয়, বরং হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং LGBTQ+ কমিউনিটির মানুষজন।
আরও পড়ুন- মুলতানি মাটি কোন ত্বকে কেমনভাবে ব্যবহার করবেন? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জানালেন সঠিক কায়দা
আশার আলো: প্রযুক্তি ও চিকিৎসার অগ্রগতি
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন এমন অনেক দীর্ঘমেয়াদী ইনজেকশনযোগ্য প্রিপ (PrEP) এসেছে যেগুলি প্রায় ১০০% কার্যকর। যেমন লেনাকাপাভির। কিন্তু সমস্যা হল– এই ওষুধগুলির অ্যাক্সেস ও খরচ এখনও বড় বাধা। সস্তায় এবং সহজে এই ওষুধ পৌঁছে না দিলে এটি শুধুমাত্র উন্নত দেশের নাগরিকদের জন্যই সীমিত থাকবে।
ভারতে সম্ভাব্য পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত?
১) সরকারি বাজেটে এইডস প্রতিরোধের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো। ২) স্কুল ও কলেজে সচেতনতা কর্মসূচি। ৩) সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্রি স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা। ৪) অন্তর্ভুক্তিমূলক আইন, যাতে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী সমাজের একাংশের চোখে অপরাধীর মত বাঁচতে বাধ্য না হয়।
এইডস এখন আর কেবল কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাব ও সচেতনতার ঘাটতি একইসঙ্গে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এখনই যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ২০২৯-এর চিত্র আরও অন্ধকারময় হয়ে উঠবে।