Birbhum’s Ancient Goddess: চিনপাই গ্রামের বড়মা সিদ্ধেশ্বরী, যাঁর দর্শনে পূর্ণ হয় ভক্তের মনস্কামনা!

Birbhum’s Ancient Goddess: বীরভূম জেলার চিনপাই গ্রামের শতাব্দীপ্রাচীন দেবী বড়মা সিদ্ধেশ্বরী। স্থানীয়দের কাছে তিনি শুধু দেবী নন, পরিবারের মা। জানুন এই মন্দিরের অলৌকিক মাহাত্ম্যের কাহিনি।

Birbhum’s Ancient Goddess: বীরভূম জেলার চিনপাই গ্রামের শতাব্দীপ্রাচীন দেবী বড়মা সিদ্ধেশ্বরী। স্থানীয়দের কাছে তিনি শুধু দেবী নন, পরিবারের মা। জানুন এই মন্দিরের অলৌকিক মাহাত্ম্যের কাহিনি।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Maa Kali: মা কালী।

Maa Kali: মা কালী।

Birbhum Kali: বীরভূম জেলা শুধু রবীন্দ্রনাথ, কীর্তনিয়া আর শাক্তপীঠের জন্যই বিখ্যাত নয় — এখানে গ্রামবাংলার প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে ভক্তির গল্প, লোকবিশ্বাস আর আধ্যাত্মিক রহস্য। ঠিক তেমনই এক অসাধারণ স্থান হল সদাইপুর থানার অন্তর্গত চিনপাই গ্রাম, যেখানে আজও পূজিত হন দুই দেবী — বড়মা ও ছোটমা সিদ্ধেশ্বরী।

Advertisment

বড়মা ও ছোটমা— দুই বোন দেবীর কাহিনি

গ্রামের মানুষ যাঁকে ‘বড়মা’ বলে ডাকেন, তিনি আসলে মা সিদ্ধেশ্বরী। তাঁর সাথেই পূজিত হন ছোটো মা সিদ্ধেশ্বরী, যাঁকে গ্রামের লোকেরা বড়মার বোন বলে মনে করেন। এই দুই দেবীর পূজা চলে একই আচার ও ভক্তির আবহে।

আরও পড়ুন- না জিতে মাঠ ছাড়েন না, 'হার' শব্দটি নেই এই ৫ রাশির অভিধানে!

বিশ্বাস করা হয়, বহু শতাব্দী আগে — হয়তো সিপাহি বিদ্রোহের সময় অথবা তারও আগে — এক উত্তর ভারতের সাধু এই জঙ্গলে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মা সিদ্ধেশ্বরীর একনিষ্ঠ ভক্ত। সেই সাধুই নাকি জঙ্গলের মধ্যে দেবীর প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে গ্রামের আচার্য পরিবার সেই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করে। সময়ের সঙ্গে মিত্র, মুখোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, চক্রবর্তী পরিবারও এই পুজোয় যুক্ত হন।

Advertisment

আরও পড়ুন- আর কিছু লাগবে না, ঘরে বানানো এই জিনিসেই চুলের সব সমস্যার সমাধান একনিমেষে!

এক সময় এই পুজো শুধুমাত্র পারিবারিক ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে চিনপাই গ্রামের সর্বজনীন উৎসব। দুর্গাপুজোর পর ত্রয়োদশীর দিন থেকে প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয়, আর দীপান্বিতা অমাবস্যায় হয় মূল পুজো। চার দিন ধরে চলে এই মহোৎসব — গ্রামজুড়ে মেলা, ভোগ, পাঁঠা বলি, সংগীত ও আলোয় ভরে ওঠে চিনপাই। গ্রামের নবারুণ সংঘ এখন পুজোর প্রধান আয়োজক।

আরও পড়ুন- সকাল না রাত, কখন ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে আপনাকে লাগবে বিউটি কুইনের মত?

মায়ের এই পুজোর সবচেয়ে অনন্য দিক হলো 'রুটির ভোগ'। ভাইফোঁটার দিন সকালে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির নারী প্রথমে ভাইফোঁটার থালা সাজিয়ে মাকে নিবেদন করেন। সেদিন সন্ধ্যায় মাকে দেওয়া হয় আগুনে সেঁকা রুটির ভোগ — কারণ বিশ্বাস, মাকে প্রথম যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই সাধু ছিলেন অবাঙালি, এবং তিনিই প্রথম রুটির ভোগ দিতেন। সেই প্রথা আজও বজায় রয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। 

আরও পড়ুন- এগুলোই হল পৃথিবীর ৭টি সবচেয়ে সুন্দর মরুভূমি, দেখা যায় রূপকথার দৃশ্য!

চিনপাই গ্রামে বড়মা সিদ্ধেশ্বরী শুধু দেবী নন — তিনি পরিবারের সদস্যের মতো। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, মাকে মন থেকে ডাকলে মা খালি হাতে ফেরান না। গ্রামে প্রচলিত আছে এক গল্প — এক দরিদ্র ব্যক্তির সন্তান একদিন মারাত্মক অসুস্থ হয়। মা স্বপ্নে এসে বলেন, তাঁর নিরঞ্জনের পুকুরে একটি সোনার টিপ পড়ে আছে; সেটি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে। ওই ব্যক্তি মায়ের নির্দেশ মেনে পুকুরে গিয়ে সত্যিই টিপটি পান এবং তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। এমন অলৌকিক ঘটনা আরও ঘটেছে। যা আজও এই বিগ্রহের প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভক্তির শিকড়কে আরও গভীরে বেঁধে রেখেছে।

পুজোর শেষ রাতে দুই মা—বড়মা ও ছোটমা—ডোলায় চড়ে পুরো গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন। ভক্তরা হাতে তেল, সিঁদুর নিয়ে মাকে বরণ করেন। তারপর গ্রামের প্রান্তে পুকুরে হয় নিরঞ্জন। হাজার হাজার মানুষ সে দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন। প্রায় ৫০,০০০ ভক্তের সমাগমে চিনপাই গ্রাম একদিনের জন্য পরিণত হয় ভক্তিময় তীর্থস্থানে।

সিউড়ি থেকে দুবরাজপুরগামী বাসে উঠলে নামতে হবে চিনপাই কালীতলা স্টপেজে, যা মন্দিরের নামেই পরিচিত।
রেলপথে এলে সাঁইথিয়া–অন্ডাল শাখার ট্রেনে সরাসরি নামতে পারেন চিনপাই স্টেশনে, সেখান থেকে টোটো বা ভ্যান ধরে মন্দির পৌঁছে যাবেন কয়েক মিনিটেই। 

Kali Birbhum