/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/20/naihati-barama-2025-10-20-11-43-14.jpg)
Boro Ma Kali Puja 2025: কীভাবে শুরু হল নৈহাটির বড়মার পুজো?
Boro Ma Kali Puja 2025: কথায় বলে, ঈশ্বর না টানলে ভক্তরা তাঁর কাছে পৌঁছতে পারেন না। সেই কথাটিই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে নৈহাটিতে বড় মা কালীর (Boro Ma Kali Puja) পুজোর সময়। দীপাবলির পুণ্য লগ্নে নৈহাটির বড়মার দর্শনের জন্য লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটে। কেউ আসেন দূরের জেলা থেকে, কেউ আসেন কোলে সন্তান নিয়ে, আবার কেউ আসেন মানত পূরণ করতে। স্টেশন চত্বর থেকেই ভেসে আসে, 'জয় বড়মার জয়' ধ্বনি।
শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস
এই পুজোর ইতিহাস প্রায় এক শতাব্দী পুরনো। জনশ্রুতি, বহু বছর আগে ভবেশ চক্রবর্তী নামে এক বৈষ্ণব নবদ্বীপে রাসযাত্রায় গিয়ে রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ফিরে এসে ২১ ফুট উঁচু মাতৃপ্রতিমা নির্মাণ করে তিনি কালীপুজো শুরু করেন। সেই থেকেই নৈহাটিতে শুরু হয় এই অনন্য কালীপুজোর যাত্রা। প্রথমদিকে পুজোর নাম ছিল, 'ভবেশ কালী'। তবে দেবীর বিশাল আকৃতি দেখে মানুষ তাঁকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন, 'বড়মা'। আজ এই পুজো ১০৩ বছরে পা দিয়েছে— যা শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, নৈহাটির গর্ব এবং ঐতিহ্যও।
আরও পড়ুন- শুধু নিষিদ্ধ বাজিই নয়, গ্রিন ক্র্যাকারেও ছড়ায় ভয়ংকর দূষণ, চমকে দেবে সত্যিটা!
প্রতিষ্ঠাতা ভবেশ চক্রবর্তী ছিলেন বৈষ্ণব। গলায় কণ্ঠী পরতেন তিনি। তাই বড়মার পুজো হয় বৈষ্ণব মতে, এখানে পশুবলির কোনও প্রথা নেই। দক্ষিণাকালীরূপে দেবী পূজিতা হন। তবে বলিহীন এই কালীপুজো ভক্তির গভীরতায় অন্য মাত্রা পেয়েছে। পুরোনো নিয়ম মেনে এখনও চক্রবর্তী বাড়ি থেকেই পুজোর ভোগ পাঠানো হয়। এই পুজোর বিশেষ দিক হল — এখানে কখনও চাঁদা তোলা হয় না। ভক্তরাই স্বেচ্ছায় দান করেন বড়মাকে। বর্তমানে মায়ের গয়নার মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০০ ভরি সোনা এবং ২০০ কেজি রুপো। দেবীর মুকুট, চাঁদমালা, ত্রিনয়ন, জিহ্বা, ভুরু ও নাকের অলঙ্কার সবই সোনার তৈরি। টিকলি থেকে গলায় মালা— সবই ভক্তদের মানত পূরণের নিদর্শন।
আরও পড়ুন- বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কাছে শক্তিপীঠ, দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে যান কল্যাণেশ্বরীর আশ্রয়ে
পুজোর দিন প্রায় ২,০০০ কেজি খিচুড়ি ও পোলাও ভোগ রান্না হয়, যা হাজারো ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, বড়মার কাছে মানত রাখলে দেবী তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। কেউ দণ্ডি কেটে পুজো দেন, কেউ দেবীর দর্শন সেরে নীরবে নিজের ইচ্ছা জানান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দর্শনের অপেক্ষার পরও কিন্তু কেউ ক্লান্ত হন না। বড়মার সামনে পৌঁছে তাঁদের মুখে একটাই ধ্বনি বের হয়, 'জয় বড়মার জয়!' আগে শুধুমাত্র কালীপুজোর দিন বড়মার দর্শন সম্ভব ছিল।
আরও পড়ুন- দীপাবলিতে কেন পরে কাজল, শাস্ত্রমতে কী উপকার তাতে?
তবে গত দু'বছর ধরে রাজস্থান থেকে আনা কষ্টিপাথরের নির্মিত মূর্তিতে মন্দিরে প্রতিদিন নিয়মিত পুজো হয়। শনি ও মঙ্গলবারে ভক্তসমাগমে ঋষি অরবিন্দ রোড হয়ে ওঠে এক আধ্যাত্মিক তীর্থক্ষেত্র। ভক্তদের দেওয়া ফল সরকারি হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রমে বিলি করা হয়। রাসপূর্ণিমায় দুঃস্থদের মধ্যে কয়েক হাজার শাড়ি বিতরণ করা হয়। বিবাহযোগ্য মেয়েদের বড়মার বেনারসি দান করা হয়। সম্প্রতি ভক্তদের দানে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও চালু হয়েছে।
আরও পড়ুন- পুজোয় দেবী লক্ষ্মীর মূর্তি রাখুন এই দিকেই, আসবে অগাধ সমৃদ্ধি!
আজকের এই দ্রুত পরিবর্তনের যুগেও নৈহাটির বড়মা কালীপুজো প্রমাণ করে— ঐতিহ্য কখনও ম্লান হয় না। এখানে বলিদান নেই। জাঁকজমকের প্রতিযোগিতা নেই। আছে কেবল অন্তরের ভক্তি, মানবতার বার্তা, এবং দেবীর প্রতি চিরন্তন ভালোবাসা।