Boyra Kali Temple: উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম জাগ্রত কালীমন্দির, বয়রায় আজও বাজে মায়ের নুপুরের ধ্বনি

Boyra Kali Temple: উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে শতাব্দীপ্রাচীন বয়রা কালীমন্দির আজও জাগ্রত। দীপাবলির রাতে লক্ষ ভক্তের সমাগম, শোনা যায় মায়ের নূপুরের আওয়াজ।

Boyra Kali Temple: উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে শতাব্দীপ্রাচীন বয়রা কালীমন্দির আজও জাগ্রত। দীপাবলির রাতে লক্ষ ভক্তের সমাগম, শোনা যায় মায়ের নূপুরের আওয়াজ।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Boyra Kali Temple: বয়রা কালী মন্দির।

Boyra Kali Temple: বয়রা কালী মন্দির।

Boyra Kali Temple: উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম এবং অন্যতম জাগ্রত পুজো হল বয়রা কালীমাতার পুজো। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ শহরের ঠিক মাঝখানে, বালুরঘাট থেকে রায়গঞ্জগামী রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত এই মন্দির আজও উত্তরবঙ্গের এক প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।

Advertisment

বয়রা কালী

মন্দিরের পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে শ্রীমতী নদী, যার ধারেই রয়েছে শ্মশান। বর্তমানে যদিও শ্রীমতী নদী প্রায় শুকিয়ে গিয়ে তার তলদেশে ধান চাষ হয়, কিন্তু একসময় এই নদী ছিল খরস্রোতা। কথিত আছে, প্রাচীন কালে ডাকাতরা এই নদীপথে নৌকা নিয়ে কালিয়াগঞ্জে এসে ডাকাতি করত, আর সেই ডাকাতরাই বয়রা গাছের নীচে কালীমাতার পুজো দিত। সেই থেকেই নামের উৎপত্তি — বয়রা কালী।

আরও পড়ুন- সেনা পাঠিয়েও ভাঙতে পারেননি ঔরঙ্গজেব, এই মন্দির স্বয়ং বিশ্বকর্মা বানিয়েছেন বলে বিশ্বাস ভক্তদের!

Advertisment

প্রথম দিকে এই পুজো হত কাঁচা ঘরের ছোট্ট মন্দিরে। সময়ের সঙ্গে এলাকার বাসিন্দা ও ভক্তদের দানে আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল ও মনোরম স্থাপত্যের বয়রা কালী মন্দির। ১৯৬২ সালে তৈরি হয় দেবীর বর্তমান মন্দির। দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি সোনার অলংকারে সজ্জিতা এবং প্রতিদিন ভক্তদের পুজো, আরতি আর দর্শনে মুখর থাকে মন্দির প্রাঙ্গণ।

আরও পড়ুন- স্বাদ বদলান! দামে কুলোতে অল্প হলেও একবার খান ইচা মারা, মুখে লেগে থাকবে

মন্দিরের পুরোহিত শ্যামল ভট্টাচার্য্য জানান, দীপাবলির রাতে মায়ের পুজো হয় বিশেষভাবে। পাঁচ রকমের মাছ ও পাঁচ রকমের সবজি দিয়ে মায়ের ভোগ প্রস্তুত হয়। হাজার হাজার ভক্ত সেই রাতে পুজো দিতে আসেন, মায়ের আরাধনায় অংশ নেন এবং ভোগ গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন- একদিন আগেই নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী?

দীপাবলির রাতে বয়রা কালীমন্দিরে থাকে উৎসবের আমেজ। রাতভর চলে কয়েকশো বলি, আর পরদিনও হাজার হাজার মানুষ মায়ের প্রসাদ পেতে ভিড় করেন। এত ভিড় সামলাতে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। বলা হয়, মা বয়রা কালী অত্যন্ত জাগ্রত — যিনি যে কামনা নিয়ে আসেন, মা তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ করেন।

আরও পড়ুন- রাজস্থানের বুন্দি, নীল শহরের সোপানকূপে সময়ের প্রতিধ্বনি পর্যটকদের হাতছানি দেয়

বয়রা কালীকে ঘিরে অসংখ্য জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, কালীপুজোর রাতে মা বয়রা কালী শহর পরিক্রমায় বের হন, এবং মায়ের নূপুরের আওয়াজ কেউ কেউ নিজের কানে শুনেছেন। ইতিহাস বলছে, এই মন্দিরের পাশ দিয়েই ১৯২৮ সালে কালিয়াগঞ্জে রেললাইন তৈরি হয়। সেই রেলপথেই নাকি কালিয়াগঞ্জ হয়ে রায়গঞ্জ গিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিপ্লবীরাও নাকি আশ্রয় নিতেন কালিয়াগঞ্জের মজলিশপুর এলাকায়।

আজও বংশপরম্পরায় পুরোহিত পরিবার মায়ের পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। বয়রা কালীমন্দির কেবল এক ধর্মীয় স্থান নয়, এটি উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। শতাব্দীপ্রাচীন এই মন্দিরে একবার গেলে বোঝা যায়, কেন এখানকার মানুষ মা বয়রা কালীর প্রতি এত বিশ্বাস ও ভক্তি পোষণ করেন। প্রতিদিনই ভোর থেকে শুরু হয় পুজো, আর সন্ধ্যায় মন্দির প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে প্রদীপের আলো, ঘণ্টাধ্বনি, ও ভক্তদের প্রার্থনায়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মানত করতে, মায়ের আশীর্বাদ পেতে, আর ফিরে যান শান্তি এবং তৃপ্তি নিয়ে।

Kali Temple